পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

স্বরাজের স্বপ্ন : বাল গঙ্গাধর তিলকের প্রয়াণ-শতবর্ষ

By

Published : Aug 1, 2020, 10:48 AM IST

Updated : Aug 1, 2020, 1:40 PM IST

বাল গঙ্গাধর তিলকের আজ প্রয়াণ দিবস । এই বছর 100তম বর্ষ । ভারতীয় রাজনীতিতে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । 1920 সালে 1 অগাস্ট বাল গঙ্গাধর তিলকের মৃত্যু হয় ।

bal gangadhar
bal gangadhar

বাল গঙ্গাধর তিলকের প্রয়াণের শতবর্ষ । ভারতীয় রাজনীতিতে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে । মহারাষ্ট্রের রত্নাগিরিতে 1856 সালের 23 জুলাই জন্ম হয়েছিল তাঁর । বাল গঙ্গাধর তিলকের বাবা গঙ্গাধর তিলক, মা পার্বতী দেবী । মুম্বইয়ের সরকারি আইন কলেজ থেকে আইনের ডিগ্রি পান তিনি । ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, ইন্ডিয়ান হোম রুল লিগ, ডেকান এডুকেশনাল সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন তিলক । 'দা আর্কটিক হোম ইন দা বেদাস' এবং 'শ্রীমদ ভগবত গীতা রহস্য' বই লেখেন । 1920 সালে 1 অগাস্ট বাল গঙ্গাধর তিলকের মৃত্যু হয় । আজ তাঁর মৃত্যু শতবর্ষে শ্রদ্ধার্ঘ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । টুইটারে একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে মোদি লেখেন, মৃত্যু শতবর্ষে বাল গঙ্গাধর তিলককে শ্রদ্ধা জনায় ভারত ।

জীবনের প্রথম পর্যায় -

  • মধ্যবিত্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হয়েছিল বাল গঙ্গাধর তিলকের । 1876 সালে তিনি ডেকান কলেজ থেকে অঙ্ক এবং সংস্কৃততে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন । 1879 সালে মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন । এরপর তিনি একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন । সেখান থেকেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উথ্থান ।
  • 1884 সালে ডেকান এডুকেশন সোসাইটি গঠন করেন তিনি । ইংরেজিতে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি এই সোসাইটি গঠন করেন । তিনি বিশ্বাস করতেন, উদারনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক ভাবনার জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রয়োজন ।
  • মারাঠি ভাষায় 'কেশরী' এবং ইংরেজিতে 'দা মারহাট্টা'-র মতো সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠাতা তিনি । ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা করার জন্য এবং চেতনা গঠনের জন্য খুব দ্রুতই বিখ্যাত হয়ে ওঠেন তিলক ।
  • 1916 সালে বাল গঙ্গাধর তিলক ইন্ডিয়ান হোম রুল লিগ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি । স্লোগান তোলেন, "স্বরাজ্য আমার অধিকার । আমি তা অর্জন করবই । "

রাজনৈতিক জীবন -

  • 1890 সালে কংগ্রেসে যোগ দেন তিলক ।
  • স্বরাজের প্রথম আইনজীবীদের মধ্যে বাল গঙ্গাধর তিলক একজন । তিনি স্লোগান তোলেন, "স্বরাজ আমার অধিকার ।" তাঁর বিশ্বাস ছিল, স্বরাজ ছাড়া অগ্রগতি সম্ভব না ।
  • কংগ্রেসের চরমপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন তিলক । স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন ।
  • কেশরী এবং দা মারহাট্টা সংবাদপত্র প্রকাশ করতেন । সংবাদপত্রে নির্ভীকভাবে ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা করতেন তিনি ।
  • তিনি বলেছিলেন, শোষণকারীদের হত্যাকারী অপরাধী হতে পারে না । এরপরই খুন হয় দু'জন ব্রিটিশ আধিকারিক । 'খুনের প্ররোচনার' অপরাধে 18 মাস কারাদণ্ড হয় তিলকের ।
  • বিপিনচন্দ্র পাল, লালা লাজপত রায় এবং বাল গঙ্গাধর তিলক ছিলেন কংগ্রেসের অন্যতম তিন চরমপন্থী নেতা । একসঙ্গে বলা হত, 'লাল-বাল-পাল' ।
  • ক্ষুদিরাম বোস এবং প্রফুল্ল চাকির পক্ষে লিখেছিলেন তিলক । রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে কারাদণ্ড হয় তাঁর । 1908 সাল থেকে 1914 সাল পর্যন্ত তিনি মাণ্ডালায় সংশোধানাগারে ছিলেন ।
  • 1916 সালে আবার কংগ্রেসে যোগ দেন তিলক । কারণ মতবাদে বিশ্বাস না হওয়ায় কংগ্রেস ছেড়েছিলেন তিনি ।
  • অল ইন্ডিয়া হোম রুল লিগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি ।
  • প্রাচীন হিন্দু স্ক্রিপ্ট থেকে ভাবনা গ্রহণ করে তাঁর রাজনৈতিক মতবাদকে সমৃদ্ধ করেছিলেন ।
  • পশ্চিমী সমাজ ব্যবস্থার তীব্র বিরোধী ছিলেন তিনি ।
  • গণেশ পুজোকে একটি সামাজিক উৎসবে পরিবর্তিত ছিলেন তিনি ।
  • সাধারণ মানুষের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা গড়ে তোলার জন্য গণেশ চতুর্থী এবং শিব জয়ন্তী উৎসব পালন করেছিলেন । 1984 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত গণেশ চতুর্থী মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় উৎসব ।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি :

  • জাতীয়বাদী চরমপন্থী নেতা হওয়ার পরেও বাল গঙ্গাধর তিলকের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি সংরক্ষণমূলক ছিল ।
  • হিন্দু নারীদের আধুনিক শিক্ষাগ্রহণের বিরোধী ছিলেন তিনি ।
  • মেয়েদের বিবাহের বয়স সর্বনিম্ন 10 থেকে 12 করার প্রস্তাবে যে বিল পেশ করা হয়, তাঁর বিরোধিতা করেন তিনি । তাঁর মতে, ভারতীয়দের ধার্মিক এবং সামাজিক জীবনে হস্তক্ষেপ করছিল ব্রিটিশ সরকার ।

লোকমান্য তিলকের বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য -

  • 1893 সালে মুম্বই এবং পুনেতে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষের পর ব্রিটিশ সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন তিনি । ব্রিটিশ সরকার ভারতে বিভাজননীতির দ্বারা শোষণ করছে বলে সমালোচনা করেছিলেন ।
  • বিদেশি দ্রব্য বয়কটের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন লোকমান্য তিলক । জাতীয় শিক্ষা এবং স্ব-সরকারের জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন ।
  • বম্বে হাইকোর্টে তিনবার বিচার হয় বাল গঙ্গাধর তিলকের । মূলত রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এবং তাঁর বক্তৃতার জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয় ।
  • ফার্গুসন কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিলক । সেখানে অঙ্কের অধ্যাপনাও করেছেন ।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা -

  • তিলক মনে করতেন, কোনও ঘটনার সমালোচনার অধিকার রয়েছেন সংবাদপত্রের । সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে । তাঁর সংবাদপত্রগুলিতে ব্রিটিশ সরকারের তীব্র সমালোচনা করতেন তিনি । এইজন্য একাধিকবার তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করে ব্রিটিশ সরকার । কিন্তু থেমে যাননি তিলক । তাঁর সমালোচনা স্থগিত হয়ে যায়নি ।
  • তিলক বলতেন, সরকারকে খুশি করার জন্য আমরা সংবাদপত্র প্রকাশ করি না । সরকারের সমালোচনার অধিকার আমাদের রয়েছে । যদি আমরা সরকারের দোষ মানুষের সামনে তুলে না ধরি তা হলে মানুষ জানবে কী করে ।
  • সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন তিনি ।

তিলকের স্বরাজ ভাবনা - স্থানীয়দের কণ্ঠ

  • স্বরাজ বা স্ব-সরকারের পক্ষপাতী ছিলেন বাল গঙ্গাধর তিলক । তার জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন । স্লোগান তুলেছিলেন, স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার । আমি তা অর্জন করবই ।
  • জাতীয় কংগ্রেসের 1916 সালের লখনউ- অধিবেশনে স্বরাজের বার্তা দিয়েছিলেন তিলক ।
Last Updated :Aug 1, 2020, 1:40 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details