বাঁকা, 29 মে : পথ দুর্ঘটনায় রক্তক্ষরণে বাবার মৃত্যু হয়েছিল 18 বছর আগে । বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করল মেয়ে (Chandrakona Blood Donation)। রবিবারের এই শিবিরে রক্ত দিলেন 45 জন রক্তদাতা । পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা 1 নম্বর ব্লকের বাঁকা এলাকার বাসিন্দা বিবেকানন্দ করণ 2005 সালে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান ৷ তখন একমাত্র কন্যার বয়স ছিল মাত্র 3 বছর ৷
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিবেকানন্দবাবু নিজের ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন । তিনি ছিলেন রক্তদান আন্দোলনের একজন কর্মী । বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে তিনি অংশ নিতেন । এলাকার মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াতেন তিনি । গত 2005 সালে পথ দুর্ঘটনায় বিবেকানন্দবাবু মারা যান । রক্তদান আন্দোলনের কর্মী রক্তক্ষরণে মারা যায় । তারপর 2006 সালে এলাকার একটি জনপ্রিয় রক্তদান আন্দোলনের সংগঠন ভাবনায় করণ ভবনে আত্মীয় বন্ধু শুভার্থীদের নিয়ে রক্তদানের শিবির শুরু হয় বিবেকানন্দ করণের বাড়িতে ।
আরও পড়ুন : রক্তদানই নেশা ! নিজেদের জন্মদিনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন দম্পতির
সোমদত্তা 4 বছর বয়স থেকেই বাবার মৃত্যুদিনে রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করে আসছে । বর্তমানের সোমদত্তা কলেজ ছাত্রী ৷ সোমদত্তা 18 এর গণ্ডি পেরিয়ে বাবার রক্তদান শিবিরের দায়িত্ব নিয়েছে ৷ পাশে পেয়েছে কাকু ও মাকে । এই বছর 29 মে অর্থাৎ রবিবার বিবেকানন্দ করণের 18তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল । এদিনের রক্তদান শিবিরে 45 জন স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন । এলাকার বিশিষ্টজনেরা এই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন । উপস্থিত ছিলেন চন্দ্রকোনা 1 নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতি সূর্যকান্ত দোলুই, ক্ষীরপাই আইসি প্রশান্ত কীর্তনীয়া, চন্দ্রকোনা 1 ব্লকের ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী ।
সোমদত্তা বলেন, "বাবার যখন মৃত্যু হয়েছিল তখন আমার বয়স ছিল তিন বছর । তখন সেভাবে আমার বোঝার বয়স হয়নি । কিন্তু প্রতিবছর বাবার মৃত্যুদিনে শিবিরে আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত থেকেছি । দেখতাম অনেকেই বাবাকে নিয়ে প্রশংসা করত । তাই এরকম একটি দুঃখের দিনে বাবা যেহেতু পরোপকারী ছিল আমার পরিবারের পক্ষ থেকে এই শিবির চালিয়ে যাব ।"
ক্ষীরপাই নবারুণে সম্পাদক অনুপ ঘোষ বলেন, "বিবেকানন্দ করণ আমাদের সংগঠনের সভাপতি থাকাকালীন পথ দুর্ঘটনায় মারা যান ৷ আমরা তাই ঠিক করেছিলাম তিনি যেহেতু আমাদের রক্তদান আন্দোলনের কর্মী ছিলেন তাই রক্তদানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানাবো । সেই কারণে 2006 সাল থেকে ওই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে আত্মীয়-বন্ধুদের নিয়ে এই শিবির সংগঠিত হচ্ছে । ধারাবাহিকভাবে এই ধরনের শিবির পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ।"
এই শিবিরের প্রথমদিকে দায়িত্বভার তুলে নিয়েছিলেন বিবেকানন্দবাবুর স্ত্রী চন্দনাদেবী । পরবর্তীকালে তাঁর মেয়ে ও কাকা এই শিবির পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছেন ।