ETV Bharat / state

Teacher Recruitment Scam: চাকরি কারচুপির তালিকায় তৃণমূল নেত্রীর স্বামীর নাম, শোরগোল মালদায়

author img

By

Published : Jul 29, 2023, 7:28 PM IST

job cancellation list
তৃণমূল নেত্রীর স্বামীর নাম

Commission List: উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল নেত্রীর পর চাকরি কারচুপির তালিকায় এবার মালদায় সদ্য নির্বাচিত শাসকদলের জেলা পরিষদ প্রার্থীর স্বামীর নাম ৷ যদিও এই তালিকা খতিয়ে দেখার পরামর্শ 'ভুয়ো' শিক্ষক শামসুদ্দিন আহমেদের ৷

মালদা, 29 জুলাই: কমিশনের প্রকাশিত চাকরি কারচুপির শিক্ষকের তালিকায় এবার তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থীর স্বামীর নাম ৷ 621 নম্বরে নাম রয়েছে শামসুদ্দিন আহমেদের ৷ যা নিয়ে শোরগোল মালদা জেলাজুড়ে ৷ তবে তালিকায় যে তাঁর নাম রয়েছে মানতে নারাজ এই 'ভুয়ো' শিক্ষক ৷ এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উলটে সংবাদমাধ্যমকেই সেই তালিকা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "কমিশনের প্রকাশিত তালিকাটা ঠিক করে দেখুন ৷ সেটি কীসের তালিকা? আগে সেটা ভালো করে জানুন ৷ তারপরেই এ নিয়ে কিছু বলব ৷"

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন ওএমআর শিটে গোলমাল থাকা 907 জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছে ৷ তাতে নাম রয়েছে সদ্য নির্বাচিত মালদা জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী শামসুদ্দিন আহমেদের ৷ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ বলবৎ রেখে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, 2018 সালে ওএমআর শিটে অনিয়ম থাকা যেসব শিক্ষক-শিক্ষিকাকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ৷

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও নির্দেশ দিয়েছিলেন, শুধু নামের তালিকাই নয় ৷ দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওএমআর শিটও প্রকাশ করতে হবে ৷ তবে সুপ্রিম কোর্ট ওএমআর শিট প্রকাশের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় কমিশন শুধুমাত্র অনিয়মে চাকরি পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নাম এবং রোল নম্বরই প্রকাশ করে ৷ সেই তালিকা সামনে আসতেই দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন জেলায় শাসকদলের ঘনিষ্ঠ লোকজনের নাম সেখানে রয়েছে ৷ নাম রয়েছে কালিয়াচকের সদ্য নির্বাচিত জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যা সারিকা খাতুনের স্বামীরও ৷

আরও পড়ুন: ভুয়ো শিক্ষিকার তালিকায় তৃণমূল নেত্রীর নাম !

গত বুধবার কমিশনের প্রকাশিত তালিকায় প্রথমে ধরা পড়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার বিদায়ী সভাধিপতি কবিতা বর্মনের নাম ৷ তালিকার 300 নম্বরে নাম রয়েছে তাঁর ৷ এ নিয়ে শোরগোল পড়ে ওই জেলায় ৷ যদিও ইটাহার থানার বালিজল হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষিকা কবিতা দাবি করেন, "আমি নিয়ম মেনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছি ৷ ওই দুই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আমাকে কাউন্সেলিংয়ে ডাকা হয়েছিল ৷ আমি কোনও সাদা খাতা জমা দিয়ে আসিনি ৷ কী কারণে আমার নাম ওই তালিকায় এল, আমি জানি না ৷ এটা আদালতের বিষয় ৷ এ নিয়ে আমি কোর্টের দ্বারস্থ হব ৷ আমার নিয়োগে কোনও দুর্নীতি রয়েছে কি না তা আদালতকেই প্রমাণ করতে হবে ৷"

সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই ধরা পড়ে কমিশনের প্রকাশিত তালিকার 621 নম্বরে নাম রয়েছে শামসুদ্দিন আহমেদের ৷ তিনি সদ্য নির্বাচিত তৃণমূলের জেলা পরিষদ প্রার্থী সারিকা খাতুনের স্বামী ৷ বর্তমানে কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের গোলাপগঞ্জ হাইস্কুলে ইংরেজির শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ৷ এ নিয়ে শুক্রবার থেকেই শোরগোল পড়ে জেলায় ৷ তবে গতকাল শামসুদ্দিনকে পাওয়া যায়নি ৷ ফোনও ধরেননি তিনি ৷ আজ ফোন রিসিভ করলে তাঁকে বিষয়টি জানানো হয় ৷ প্রতিক্রিয়া চাইতেই তিনি কার্যত সাংবাদিকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৷ এর মাধ্যমে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন শামসুদ্দিন আহমেদ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷

আরও পড়ুন: ববিতা সরকার মামলায় ওএমআর শিট প্রকাশের নির্দেশ বহাল ডিভিশন বেঞ্চে

উল্লেখ্য, 2016 সালে কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী একাদশ ও দ্বাদশে রাজ্যে 5757 জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হয়েছিল ৷ আদালতের নির্দেশে সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল এই সমস্ত শিক্ষিক-শিক্ষিকার ওএমআর শিট পরীক্ষা করে ৷ তারা 907 জনের ওএমআর শিটে গরমিল খুঁজে পায় ৷ জানা গিয়েছে, এই 907 জনের মধ্যে অনেকে সাদা খাতা জমা দিয়ে এসেছিলেন ৷ বেআইনিভাবে এঁদের 1 থেকে 50 নম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৷

এই 907 জনের ওএমআর শিট এবং মেধা তালিকা প্রকাশের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানান শিলিগুড়ির ববিতা সরকার ৷ তিনিও হাইকোর্টের নির্দেশে প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি পেয়েও তা খুইয়েছেন ৷ কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় আবেদনে সাড়া দিয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই 907 জনের মেধা তালিকা ও ওএমআর শিট প্রকাশের জন্য এসএসসিকে নির্দেশ দেন ৷ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় এসএসসি ৷ সুপ্রিম কোর্ট শুধুমাত্র ওএমআর শিট প্রকাশের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় বলবৎ রাখে ৷ তার ভিত্তিতেই গত বুধবার সেই 907 জনের নাম ও রোল নম্বর প্রকাশ করে কমিশন ৷

আরও পড়ুন: প্রাথমিকে 32 হাজার চাকরি বাতিলে হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ সুপ্রিম কোর্টে

কমিশন প্রকাশিত এই 907 জন শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগে যে কারচুপি রয়েছে তা প্রমাণিত ৷ প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে রাজ্য শিক্ষা দফতর কি আইনি পদক্ষেপ নেবে? যদিও এই প্রশ্নে মুখ খোলেননি শিক্ষা দফতরের কোনও আধিকারিক ৷ এ নিয়ে মালদা জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক সুজিত সামন্তর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি তিনি ৷ অন্যদিকে গোলাপগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁর কিছু জানা নেই ৷ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি ৷ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন তিনি ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.