ETV Bharat / bharat

75 years of Independence : ভারতকে জানতে হলে ঘুরতে হবে চাঁদনি চকের অলিগলি

author img

By

Published : Dec 18, 2021, 1:49 PM IST

দিল্লির চাঁদনি চকে সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ৷ ভারতের ব্যস্ততম বাজার, দিল্লির ইতিহাসে এর গুরুত্ব ৷ সব মিলিয়ে ঐতিহ্য সমৃদ্ধ দেশের জানলা বলা যায় একে (75 years of Independence, Chandni Chowk: A gateway to old-world charm) ৷

Chandni Chowk
চাঁদনি চক

নয়াদিল্লি, 18 ডিসেম্বর : দেশ স্বাধীন হয়েছে 1947 সালে ৷ তারপর থেকে ভারত বহু পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে ৷ শুধু বদলায়নি দেশের ঐতিহ্যবাহী মনুমেন্ট, ভবন, আর স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে জড়িত অঞ্চলগুলি ৷ যা সাধারণ মানুষকে, বিশেষত পর্যটকদের ভারতের পুরনো সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে ৷

এইসব মনুমেন্ট আর জায়গাগুলো মুঘল যুগে তৈরি, কিছু ব্রিটিশ শাসনকালে ৷ 1857-র বিদ্রোহ (1857 revolution) থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের (freedom struggle) সময় তো বটেই, আজও প্রত্যেক দিনের জীবনে এই মনুমেন্ট আর জায়গাগুলোর একটা সম্পর্ক রয়েছে ৷ সেরকমই একটা জায়গা দিল্লির সদা গুঞ্জনরত চাঁদনি চক ৷ দেশের রাজধানীর ইতিহাসে চাঁদনি চকের একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে ৷ এই জায়গা বহু শাসককে তখতে বসতে দেখেছে, যেতে দেখেছে ৷ কিন্তু কখনও নিজের ঔজ্জ্বল্য হারায়নি (Chandni Chowk: A gateway to old-world charm) ৷

ইতিহাসবিদ স্বপ্না লিডলের মতে, তখন মুঘল সাম্রাজ্যের সময়কাল ৷ সতেরো শতকে পুরোনো দিল্লিতে শাহজাহানের মেয়ে জাহানারা (Mughal Emperor Shah Jahan's daughter Jahanara) চাঁদনি চক বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ তখন এর নাম ছিল শাহজাহানাবাদ ৷ পরে পুরো এলাকাই বাজারের নামে চাঁদনি চক হয়ে যায় ৷ শুধুমাত্র বাজারই নয়, জাহানারা হাম্মাম, সরাই সমেত বহু বাড়িঘর এবং ছোটো ছোটো বাজারও তৈরি করেছিলেন ৷

আরও পড়ুন : 75 Years of Independence : জীবনে একবারই গুলি ছুড়েছিলেন ভগৎ সিং

1857-র পরে, ব্রিটিশ সরকার বেশ কিছু বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে এবং তার জায়গায় 'টাউন হল' (Town Hall) এবং 'ঘণ্টাঘর' (Ghantaghar) বানিয়েছে ৷

ইতিহাসবিদ বলেন, "চাঁদনি চকে জাহানারা বেগম নিজে দোকানঘর এবং একটা বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা সরাই নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন ৷" 1649 সালে শাহজাহানের মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী পরিবর্তনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল ৷ এরপরই চাঁদনিচক প্রতিষ্ঠা হয় ৷

লাল কেল্লা থেকে ফতেহপুর মসজিদ (Red Fort to Fatehpuri Masjid) পর্যন্ত রাস্তাকে আজ মানুষ চাঁদনি চক বলে জানে ৷ একসময় যমুনা নদী থেকে একটা খাল এখান দিয়ে বয়ে যেত ৷

1911 সালে যখন ব্রিটিশ সরকার দিল্লিকে তাদের রাজধানীতে পরিণত করল, তখন সেই জায়গাটা দিয়ে ট্রাম চলতে শুরু করল ৷ দেশভাগের পর দিল্লিতে আসা উদ্বাস্তুরা এই জায়গায় তাদের দোকান তৈরি করে ৷ যার জন্য চাঁদনি চক একটি বসবাসের এলাকার বদলে ব্যবসার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিতি পেল ৷

স্বপ্না বলেন, "পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুরা এমন একটা জায়গা চেয়েছিল, যেখানে তারা ব্যবসার বন্দোবস্ত করে নতুন করে বাঁচাটা শুরু করতে পারে ৷ বাজারে থাকা হাভেলিগুলো থেকে খুব তাড়াতাড়ি তারা দোকান চালাতে আরম্ভ করে দিল ৷"

আরও পড়ুন : 75 Years of Independence : হারদায় গান্ধিজির রুপোর ট্রে আজও রয়েছে সৌকল বোনেদের কাছে

চাঁদনি চক লাল কেল্লা থেকে শুরু হয়েছে আর তারপর ফতেহপুর মসজিদ হয়ে জৈন মন্দির, গৌরী শঙ্কর মন্দির এবং গুরুদ্বারা শিসগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত ৷

ব্যবসা-বাণিজ্যে হওয়া ছাড়াও, চাঁদনি চকে বিভিন্ন ধরনের খাবার, শিল্প আর সাহিত্যের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ৷ বাল্লিমারান গলি, খারি বাওলি, কিনারি বাজার, মোতি বাজার বা পারানথে ওয়ালি গলি, এইসব মিলিয়ে চাঁদনি চকের বিশেষত্ব আলাদা ৷

ভারতকে জানতে হলে ঘুরতে হবে চাঁদনি চকের অলিগলি

এই অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের দোকানই চাঁদনি চকের বৈশিষ্ট্য ৷ নানা রকমের সাংস্কৃতিক পরম্পরা একে একটা অন্য পরিচিতি দিয়েছে ৷ বিখ্যাত উর্দু কবি মির্জা গালিব চাঁদনি চক সংলগ্ন বাল্লিমারান এলাকায় বাস করতেন ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : কে কেলাপ্পানদের নেতৃত্বে কেরালায় ছড়িয়ে পড়েছিল লবণ সত্যাগ্রহ

1857 সালের পর বদলাতে থাকা দেশের সাক্ষী দিল্লির চাঁদনি চক ৷ দাসত্ব থেকে শুরু করে স্বাধীনতার উজ্জ্বল ভোর ৷ একসময়ের একটা সুন্দর পথ, চাঁদনি চক এখন দিল্লির ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ৷ চাঁদনি চকই সত্য ভারত, যেখানে একজন দেশের মূল সংস্কৃতি আর পরম্পরা খুঁজে পাবে ৷ তবে এই জায়গাটা বুঝতে হলে, চাঁদনি চকের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতে হবে একজনকে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.