75 Years of Independence : জীবনে একবারই গুলি ছুড়েছিলেন ভগৎ সিং

author img

By

Published : Dec 5, 2021, 11:06 AM IST

Updated : Dec 5, 2021, 3:52 PM IST

Bhagat Singh

ভগৎ সিং (Bhagat Singh a revolutionary) এমন এক বিপ্লবী, স্বাধীনতা সংগ্রামী (freedom fighter), যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন ৷ কিউবায় যেমন চে গুয়েভারা (Che Guevara is to Cubans), তেমনি ভারতীয়দের কাছে ভগৎ সিং ৷ ঐতিহাসিক এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের মতে, ভগৎ সিং রক্তপাত এড়িয়ে (non-violence methods), একটা সুন্দর পৃথিবী গড়তে চেয়েছিলেন ৷ একই সঙ্গে তিনি অত্যাচার আর অবিচারের বিরোধিতা করেছেন জীবনভর ৷

চণ্ডীগড়, 5 ডিসেম্বর : অহিংস পথে (non-violence methods) ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াটা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের (Indian Independence Movement) একটি অন্যতম দিক ৷ তেমনই বহু বিপ্লবীর জন্ম দিয়েছে ভারত ৷ তাঁদের মধ্যে একজন ভগৎ সিং (Bhagat Singh a revolutionary) ৷ কিন্তু, জানেন কি, তিনি জীবনে শুধুমাত্র একবার গুলি (Bhagat Singh shot one bullet in his fight) চালিয়েছিলেন ৷

ব্যতিক্রমী এই বিপ্লবী বিশ্বাস করতেন, শরীরকে শেষ করা যায় কিন্তু একটা শক্তিশালী মন, চিন্তা, ভাবনা এগুলো অমর থাকে ৷ আর তিনি এটা তাঁর জীবনে প্রমাণ করে গিয়েছেন ৷ তাঁর জীবন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এমন একটি বার্তা, যা বারে বারে স্মরণ করা উচিত ৷

অবিভক্ত ভারতের (বর্তমানে পাকিস্তানে) লায়ালপুরে (Lyallpur in the undivided India, now in Pakistan) 1907 সালের 28 সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ভগৎ সিং ৷ তাঁর বাবা এবং কাকা আর্য সমাজের হিন্দু সংস্কার আন্দোলন এবং গদর পার্টির (Arya Samaj and Ghadar Party) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৷ ভগৎ সিং ছোটবেলায় তাঁদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন ৷ পাকিস্তানের লাহোরে আজও তাঁর পৈতৃক বাড়িটি 'ভগৎ সিং মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন'-এর (Bhagat Singh Memorial Foundation in Lahore) তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত রয়েছে ৷

জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের (Jalianwallah Bagh massacre) সময় তাঁর বয়স মাত্র 12 বছর ৷ আর ভগৎ সিং নিজে ওই জায়গার মাটি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন ৷

আরও পড়ুন : 75 Years of Independence : হারদায় গান্ধিজির রুপোর ট্রে আজও রয়েছে সৌকল বোনেদের কাছে

1928 সাল পর্যন্ত ভগৎ সিং অন্য সব বিদ্রোহীদের মতোই ভারতের মাটি থেকে ব্রিটিশদের দেশ থেকে তাড়াতে চেয়েছিলেন ৷ গ্রোগ্রাসে বই পড়ে ফেলতে পারতেন তিনি ৷ আর তেমনি ছিল তাঁর লেখার হাত (voracious reader and writer) ৷ ঔপনিবেশিক শক্তির (colonial force) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কলমই ছিল ভগৎ সিংয়ের তরোয়াল (sword in the fight) ৷ তাঁর বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোর বহু আগে থাকতে তাঁর মধ্যে বিপ্লবের বীজ রোপণ করা ছিল, কারণ তিনি একটি রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৷

ভগৎ সিং বিশ্বাস করতেন, শরীরকে শেষ করা যায় কিন্তু একটা শক্তিশালী মন বা চিন্তা-ভাবনা অমর থাকে

জীবন বদলানোর মুহূর্ত

দেশে সাইমন কমিশন (Simon Commission) আসা এবং তারপর লালা লাজপৎ রাইয়ের (Lal Lajpat Rai) মৃত্যু ৷ এই দুটো ঘটনা ভগৎ সিংয়ের জীবনের চূড়ান্ত পরিবর্তন এনেছিল ৷ লালা লাজপৎ রাই মহাত্মা গান্ধির অহিংস আদর্শে অনুপ্রাণিত (Mahatma Gandhi's non-violence movement) একজন নরমপন্থী নেতা ছিলেন ৷

ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারগুলির খতিয়ে দেখার জন্য 7 সদস্যের সাইমন কমিশন (7-member Simon Commission) গঠন করা হয়েছিল ৷ আর সেই কমিটিতে কোনও ভারতীয়কে স্থান দেওয়া হয়নি ৷ সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে সারা দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয় ৷ লাহোরে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লালা লাজপৎ রাই ৷

ভগৎ সিং এবং তাঁর বন্ধুরা লাহোরে লালা লাজপৎ রাইয়ের প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশ নেন ৷ সাইমন কমিশনকে কালো পতাকা দেখান ৷ যদিও, ব্রিটিশ পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট জে এ স্কটের (J A Scot, British Superintendent of Police) অধীনে ব্রিটিশ বাহিনী তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল ৷ পুলিশের লাঠি চার্জে ভগৎ সিংয়ের মাথায় আঘাত লাগে ৷ এই ঘটনা মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল ৷

ভগৎ সিং এবং তাঁর 'হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক আর্মি' (Hindustan Socialist Republic Army) আর দ্বিতীয় বার ভাবেননি ৷ তাঁরা উঠে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশদের হিংসার বিরোধিতায় দেশকে নতুন করে উদ্বুদ্ধ করলেন ৷ ঔপনিবেশিক পুলিশের হামলার জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : জেনারেল ডায়ারকে নিকেশ করে ব্রিটিশদের ঘুম কেড়েছিলেন উধম সিং

17 ডিসেম্বর, ভগৎ সিং এবং তাঁর কমরেড রাজগুরু, সুখদেব এবং চন্দ্রশেখর আজাদ (Rajguru, Sukhdev and Chandra Shekhar Azad) জে পি স্কটকে হত্যা করতে গিয়ে ভুল করে 21 বছরের জন স্যানডার্সকে (John Saunders) খুন করে বসলেন ৷ গ্রেফতারি এড়াতে মাসখানেক ধরে ভগৎ সিং এবং রাজগুরু (Bhagat Singh and Rajguru) পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ৷ এর মধ্যেই তাঁরা লালা লাজপৎ রাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার কাজকর্ম চালিয়ে যেতে থাকেন ৷

এই সময়, ভগৎ সিং এবং তাঁর 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' স্লোগান (Bhagat Singh and his Inquilab Zindabad slogan) মানুষের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিল ৷ এই স্লোগানটির প্রবক্তা কবি, স্বাধীনতা সংগ্রামী 'অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ'-এর নেতা (All India Muslim League) মৌলানা হাসরত মোহানি (Maulana Hasrat Mohani) ৷ 1921 সালে তিনি এটি লেখেন ৷ আর তা ওই দশকের শেষে ভগৎ সিংয়ের বক্তৃতা, লেখার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পায় সারা ভারতে ৷

ব্রিটিশ সরকারের হাতে গ্রেফতারি

1929 সালের 8 এপ্রিল ৷ ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত (Bhagat Singh and Batukeswar Datta) দিল্লির 'সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি হল'-এ (Central Legislative Assembly Hall in Delhi) বোমা ছোড়েন ৷ তাঁরা ভিড়ে ঠাসা গ্যালারিতে লেজিসলেটারের সিটের ঠিক উপর থেকে বোমাটি ফেলেন ৷ নির্দিষ্ট কাউকে নিশানা করতে নয়, সারা হাউজ়ে ব্রিটিশ শাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এইভাবে বোমা ফেলা হয়েছিল ৷ এর পাশাপাশি চারিদিকে প্যামফ্লেট ছুড়ে (hurled pamphlets) তাঁরা সবাইকে বলেছিলেন, বধির সরকারকে জাগাতেই তাঁদের এমন প্রচেষ্টা ৷ এমনকি ভগৎ সিং এবং বটুকেশ্বর দত্ত অপেক্ষা করেছিলেন কখন পুলিশ এসে তাঁদের গ্রেফতার করবে ৷

আরও পড়ুন : Bhagat Singh : খণ্ডঘোষের পাতাল ঘরে বসেই দিল্লি গণপরিষদে বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনা ভগৎ সিংয়ের

এটা শুধুমাত্র একটা বিস্ফোরণ ছিল, কিন্তু কেউ আহত হননি ৷ তাতেও তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ভগৎ সিংকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিল ৷ আর সে জন্য স্যানডার্স হত্যাকাণ্ডের (Saunders murder) তদন্ত শুরু হল ৷

7 অক্টোবর, 1930 ৷ ভগৎ সিং, সুখদেব এবং রাজগুরুকে স্যানডার্স হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁদের ফাঁসির আদেশ (sentenced them to death) দেওয়া হল ৷ ঐতিহাসিক অমলোক সিংয়ের (historian Amolak Singh) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভগৎ সিংয়ের 'জেল ডায়েরি'তে (jail diary of Bhagat Singh) তিনি নিজে উল্লেখ করেছেন যে, 23 বছরের জীবনে তিনি শুধুমাত্র একটাই গুলি ছু়ড়েছিলেন ৷

এতেও ব্রিটিশ শাসকদের আক্রোশ আর হতাশার শেষ হল না ৷ তারা তিনজন বিপ্লবীকে 1931-এর 23 মার্চ লাহোর জেলে (Lahore Jail) ফাঁসি দেয় ৷ সেদিন এর প্রতিবাদে বহু মানুষ ভিড় জমিয়েছিল লাহোর জেলের বাইরে ৷ তিনজন যুবককে ফাঁসিতে ঝোলানোয় সারা ভারত তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু এতে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেয়নি ব্রিটিশ সরকার ৷ মহাত্মা গান্ধিও ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন, তাতেও কোনও কাজ হয়নি ৷

আজও লাহোরে 'ভগৎ সিং মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন' (Bhagat Singh Memorial Foundation, Lahore) তাঁর পৈতৃক বাড়ি রক্ষা করে যাচ্ছে ৷ তাঁরা ভগৎ সিংকে 'জাতীয় শহিদের মর্যাদা' (National Martyr Status) দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ৷

আর ভারতে এখনও পর্যন্ত, ভগৎ সিংয়ের বীরত্বের কাহিনি প্রত্যেক ভারতীয়ের চোখে জল আনে আবার একই সঙ্গে গর্বিত করে ৷

আরও পড়ুন : খণ্ডঘোষের ঘোষবাড়ির সুড়ঙ্গতে লুকিয়ে ছিলেন ভগৎ সিং

Last Updated :Dec 5, 2021, 3:52 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.