Independence Special : জেনারেল ডায়ারকে নিকেশ করে ব্রিটিশদের ঘুম কেড়েছিলেন উধম সিং

author img

By

Published : Nov 21, 2021, 6:05 AM IST

Independence Special

ব্রিটিশ শাসকের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন উধম সিং ৷ জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা জেনারেল মাইকেল ও’ডায়ারকে তার মাতৃভূমিতেই নিকেশ করেছিলেন উধম সিং ৷ দিনটা ছিল 1940 সালের 13 মার্চ ৷ এরপর ধরা পড়লেও উধম সিং নিজের পরিচয় দেন রাম মহম্মদ সিং আজাদ নামে ৷ যে নাম ছিল ভারতীয় ঐক্যের প্রতীক ৷

হায়দরাবাদ, 21 নভেম্বর : কথায় বলে নামে কী আসে যায় ? প্রশ্ন জাগে, স্বভূমের মানুষদের হত্যালীলার প্রতিশোধ নিতে কোনও একজন কতদূর যেতে পারেন ? এরই উত্তর দিয়েছিলেন ব্রিটিশ ভারতের এক বীর ৷ তাঁর নাম শের সিং ওরফে উধম সিং ৷ জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে সটান লন্ডন পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি ৷ ওই নারকীয় ঘটনার অন্যতম হোতা জেনারেল মাইকেল ও’ডায়ারকে তার মাতৃভূমিতেই নিকেশ করেছিলেন উধম সিং ৷ দিনটা ছিল 1940 সালের 13 মার্চ ৷ এই ঘটনার পর গ্রেফতার হন উধম সিং ৷ রাম মহম্মদ সিং আজাদ নামে নিজের পরিচয় দেন তিনি ৷ এই নাম ছিল ভারতীয় ঐক্যের প্রতীক ৷

Divide and Rule ছিল ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম হাতিয়ার ৷ এইভাবেই তারা তাদের হুকুম জারি রেখেছিল ৷ কিন্তু, উধম সিং ব্রিটিশের সেই কৌশলেই প্রাণঘাতী আঘাত হেনেছিলেন ৷ রাম মহম্মদ সিং আজাদের নামে কাঁপতে শুরু করেছিল ব্রিটিশ শাসক ৷ তাই সেই নামের মালিককে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে তাঁর নামটাই মুছে ফেলতে চেয়েছিল তারা ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : 80 রাজপুত যোদ্ধার ফাঁসি নাড়িয়ে দিয়েছিল কোম্পানি শাসনের ভিত

ব্রিটিশের ঘুম কেড়ে নেওয়া এই বিপ্লবীর জন্ম হয়েছিল 1899 সালের 26 ডিসেম্বর ৷ সংরুর সুনামে ৷ তখন তাঁর নাম ছিল শের সিং ৷ শোনা যায়, উধম সিংয়ের মায়ের মৃত্যুর পরই তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ তাই তাঁর কাকা চঞ্চল সিং বাচ্চাদের অমৃতসরের একটি অনাথ আশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করেন ৷ অমৃতসরের এই অনাথ আশ্রমেই শের সিংয়ের নাম হয় উধম সিং ৷ মাত্র 17 বছর বয়সে ভাই সাধু সিংকে হারান তিনি ৷ জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের সময় উধম সিংয়ের বয়স ছিল মাত্র 19 বছর ৷ ঠিক যে সময় সেখানে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তখন সেখানেই সকলকে জল দিচ্ছিলেন উধম সিং ৷ একটি গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে নিজের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তিনি ৷ চোখের সামনে ঘটতে দেখেছিলেন এক নারকীয় হত্যালীলা ৷ এই ঘটনা তাঁকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল ৷ যেকোনও মূল্যে এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি ৷

অধ্যাপক প্রশান্ত গৌরব এই প্রসঙ্গে জানান, জেনারেল আর ডায়ার আগেই মারা গিয়েছিল ৷ কিন্তু জেনারেল ও’ডায়ার তখনও জীবিত ছিল এবং সে ইংল্যান্ডে থাকত ৷ সেই জালিয়ানওয়ালাবাগের জমায়েতে গুলি চালানোর নির্দেশ জারি করেছিল ৷ উধম সিং সবসময় লন্ডনে পৌঁছনোর চেষ্টা করতেন ৷ প্রথমে তিনি যান দক্ষিণ আফ্রিকা ৷ সেখান থেকে ইংল্যান্ড ৷ তারপর পৌঁছে যান আমেরিকায় ৷ সেখানেই তিনি বোমা বানাতে, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে শেখেন ৷ এবং নিজেকে প্রস্তুত করেন ৷

লন্ডনে পৌঁছনোর পর একের পর এক কাজ করলেও উধম সিং কখনও তাঁর লক্ষ্য থেকে ভ্রষ্ট হননি ৷ সবসময়েই তিনি ডায়ারের খোঁজে থাকতেন ৷ লন্ডনে পৌঁছনোর পর তিনি আত্মগোপন করে থাকতেন ৷ উধম সিং ছুতোরের কাজ, ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রীর কাজ প্রভৃতি জানতেন ৷ কিন্তু তিনি সবসময় ডায়ারকে খুঁজতেন ৷ ডায়ারকে খতম করাই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ৷ এমনকী, সেই সময় গদর পার্টির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন তিনি ৷ ভগত সিংয়ের নির্দেশে 1927 সালে উধম সিং ফের পঞ্জাবে ফিরে আসেন ৷ কিন্তু আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখা ও গদর দি গুঞ্জের পুস্তিকা বিতরণের অভিযোগে মুলতানে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় ৷ এরপর অস্ত্র আইন মাফিক 1931 সাল পর্যন্ত জেলবন্দি থাকেন উধম সিং ৷ বস্তুত, উধম সিংয়ের উপর সর্বক্ষণই নজরদারি চালাত ব্রিটিশ পুলিশ ৷ কিন্তু, পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে একসময় কাশ্মীয় চলে যান তিনি ৷ 1934 সালে কাশ্মীর থেকে যান লন্ডনে ৷

লন্ডনে পৌঁছনোর পর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান উধম সিং ৷ প্রথমে তিনি রাশিয়া যান ৷ সেখান থেকে মিশর, ফ্রান্স, ইথিওপিয়া এবং জার্মানি হয়ে আবারও লন্ডনে ফেরেন ৷ সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়ে নিজের পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করেন উধম সিং ৷ একদিন একটি পোস্টার চোখে পড়ে উধম সিংয়ের ৷ তাতে লেখা ছিল 1940 সালের 13 মার্চ ক্যাক্সটন হলে ইস্ট ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবে মাইকেল ও’ডায়ার ৷ তাঁর লক্ষ্য পূরণ হতে চলেছে, এটা ভেবেই খুশি ছিলেন উধম সিং ৷ নির্দিষ্ট দিনে সময় মতো ক্যাক্সটন হলে পৌঁছে যান তিনি ৷

আরও পড়ুন : Independence Special : বালগঙ্গাধরের কলম ধার বাড়িয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধের

তথ্য বলছে, একটা বইয়ের ভিতরের পাতাগুলি পিস্তলের আকারে কেটে নিয়ে একটি গোপন কুঠুরি তৈরি করেছিলেন উধম সিং ৷ তার ভিতর পিস্তল লুকিয়ে ক্যাক্সটন হলে পৌঁছে যান তিনি ৷ ডায়ারে বক্তব্য শুরুর সময় হলে ক্রমশ মঞ্চের কাছাকাছি যেতে শুরু করেন উধম ৷ একটার পর একটা আসন বদলে পৌঁছে যান দর্শকাসনের একেবারে সামনের সারিতে ৷ ডায়ার মঞ্চে উঠে হাঁটা শুরু করার আগেই উধম সিং সামনের সারিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন ৷ একেবারে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে তিনি ডায়ারকে গুলি করেন ৷ সেখানেই মৃত্যু হয় ওই ইংরেজের ৷ মাইকেল ডায়ারকে নিকেশ করার পর নিজেকে রাম মহম্মদ সিং আজাদ নামে পরিচয় দিয়েছিলেন উধম সিং ৷ তাঁর এই পরিচয় বদলে রীতিমতো নাকানিচোবানি খেতে হয় ব্রিটিশকে ৷

জেনারেল ডায়ারকে নিকেশ করে ব্রিটিশদের ঘুম কেড়েছিলেন উধম সিং

1940 সালের 31 জুলাই দেশের এই মহান সন্তানকে লন্ডনের পেন্টনভিল সংশোধনাগারে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হয় ৷ এবং সেখানেই তাঁর দেহ কবর দেওয়া হয় ৷ পরবর্তীতে পঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী গিয়ানি জাইল সিংয়ের উদ্যোগে 1974 সালের 31 জুলাই উধম সিংয়ের দেহাবশেষ ভারতের হাতে তুলে দেয় ইংল্যান্ড ৷ উধম সিংয়ে নশ্বর দেহের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করেই সুনামে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় ৷ সুনাম কলেজে তাঁর নামে কলসও প্রতিষ্ঠিত করা হয় ৷ পড়ুয়ারা আজও এখানে মাথা নত করেন ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.