ETV Bharat / state

'লালদুর্গে' এখন ঘাসফুলের দাপট, ভোটের আগে কেমন আছে কেশপুর ? - Lok Sabha Election 2024

Lok Sabha Election 2024: পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম হেভিওয়েট কেন্দ্র ঘাটালের অন্তর্গত কেশপুর বিধানসভা ৷ বাম জমানায় ঘর পুড়িয়ে দেওয়া, খুনের মতো খবরে বারবার উঠে এসেছে এই এলাকা ৷ একটি ভোটের পর আরেকটি ভোট আসে ৷ রাজনৈতিক রঙ বদায় ৷ কিন্তু মানুষের জীবন? কী বলছে রাজনৈতিক নেতা থেকে সাধারণ মানুষ ? খোঁজ নিল ইটিভি ভারত ৷

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 22, 2024, 10:42 AM IST

keshpur
এক সময়ের বাম দুর্গ কেশপুর
কী বলছে এক সময়ের বাম দুর্গ কেশপুর ?

কেশপুর, 22 এপ্রিল: আক্ষরিক অর্থেই এক সময় 'লালদুর্গ' ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর বিধানসভা ৷ মাত্র 13 বছর আগেও এখানে কাস্তে-হাতুড়ির দাপটে মানুষ ভীত-স্বন্ত্রস্ত হয়ে থাকত ৷ কিন্তু বাম জমানাতেই তৃণমূলের উত্থান দেখেছে এই কেন্দ্র ৷ দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুরের কেশপুর ৷

তবে রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়ায় 2016 সালে এখানে বাম শাসনের অবসান ঘটে ৷ বিধানসভা নির্বাচনে দু'বারের সিপিএম বিধায়ক তথা প্রার্থী রামেশ্বর দোলুইকে পরাজিত করে ঘাসফুল ফোটান তৃণমূলের শিউলি সাহা ৷ 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল প্রার্থী শিউলি সাহাই জয়ী হন ৷ কেশপুর থাকে তৃণমূলেরই দখলে ৷ তবে বাম আমলে তৃণমূলের মতোই বিজেপি নিজের জায়গা করে নিয়েছে লাল দুর্গে ৷ একুশের ভোটে সিপিএম প্রার্থীকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন বিজেপির প্রীতিশ রঞ্জন কৌর ৷ তাঁর ভোটের হার ছিল 42 শতাংশ ৷ আর মাত্র 13 হাজার 670টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন রামেশ্বর দোলুই ৷ জোড়াফুল-পদ্মফুলের দাপটে এখানে লাল রং এখন ফিকে ৷

ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই কেশপুরে পতাকা বদলেছে ৷ তবে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জীবনে কি শান্তি ফিরেছে ? নাকি কেশপুর আছে কেশপুরেই ? আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে কী বলছে কেশপুর, খবর নিল ইটিভি ভারত ৷

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত কেশপুর কেন্দ্রটি তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ৷ 2011 সালের শেষ জনগণনা অনুযায়ী এখানে 28.01 শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ৷ স্বভাবতই এই 13 বছরে তা আরও বেড়েছে ৷ 2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য বলছে, এখানে সংখ্যালঘু ভোটার 27 শতাংশ ৷ তবে সংখ্যালঘু-সহ তফশিলি জাতি ভোটার 35 শতাংশ ৷ তাই এই কেন্দ্রের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু ও তফশিলি জাতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ৷

ভোট এলেই বাম জমানার কেশপুরের কথা মনে পড়ে ৷ সে সময় কেশপুরকে 'সিপিএমের শেষপুর' বলা হত ৷ এলাকাবাসীর ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা ছিল না বলে আজও অভিযোগ করে বিরোধী তৃণমূল ৷ আজ বামেদের হঠিয়ে তৃণমূল তো বটেই, রামেরাও জায়গা করে নিয়েছে ৷ 2016 ও 2021 সালের বিধানসভা ভোট, 2019 সালের লোকসভা ভোট হয়েছে ৷ গত বছর মিটেছে পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ তবে গ্রামের ভোটেও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে এখানে ৷ যদিও শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে বলেই দাবি করেছে শাসকদল ৷ 2014, 2019 পরপর দু'দুটি লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন অভিনেতা দেব ৷ এর আগে 2019 সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে ঘিরে দিনভর সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছিল, যা আজও অনেকেই ভোলেননি ৷

2011 সালের পর সিপিএমের জামশেদ আলি ভবন কিংবা আনন্দপুরের পার্টি অফিস দীর্ঘসময় বন্ধ অবস্থায় ছিল ৷ 2016 সালের পর পরে সেগুলি খুলেছে ৷ তবে এখানে গণতন্ত্র নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সিপিআই জেলা সম্পাদক অশোক সেন ৷ তিনি বলেন, "মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এখনও সেভাবে নেই এই কেশপুরে ৷ তৃণমূলের মতে উন্নতি হলেও, বাস্তবে তার অভাব রয়েছে ৷ তার প্রধান কারণ সব রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম করার পরিবেশ নেই ৷" তিনি আরও বলেন, "পঞ্চায়েত ভোটে তো গণতান্ত্রিকভাবে হয়নি ৷" অশোক সেন বরং কেশপুরে লোকসভা নির্বাচনকে নির্বাচম কমিশনের পরীক্ষা বলে উল্লেখ করেন ৷ তিনি বলেন, "লোকসভা নির্বাচনে কমিশনের পরীক্ষা হবে ৷ কেশপুরের মানুষ সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ভোট দিতে পারবে কি পারবে না ৷"

এবার ঘাটাল লোকসভায় ফের প্রার্থী দু'বারের সাংসদ তৃণমূলের দেব ৷ আর তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হিরণ চট্টোপাধ্যায় ৷ কেশপুরের মানুষ কী বলছে ? স্থানীয় স্বদেশ রায় কেশপুরকে সন্দেশখালির সঙ্গে তুলনা করে বললেন, "দ্বিতীয় সন্দেশখালি বললেই চলে ৷ শুধু এখানে রাতে পিঠে করতে ডাকেনি, এই যা ৷ উন্নয়ন সেভাবে হয়নি ৷ শুধু ওই মুখেই বলছে ৷" আরেক এলাকাবাসী লক্ষ্মণ পাল তো সরাসরি শাসকদলের বিরুদ্ধে মারধর, মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন ৷ তিনি বলেন, "সিপিএমের আমলে যেমন ছিল যে, মানুষের কথা বলার কোনও উপায় নেই ৷ এখনও তেমনই রয়েছে৷ কথা বললে মারধর করবে ৷ তৃণমূলের লোক ঘরে গিয়ে মারধর করবে ৷ পুলিশের নির্যাতন রয়েছে ৷ মহিলাদের উপর অত্যাচার করা হয় ৷"

এই সন্ত্রাস নিয়ে বিজেপি প্রার্থী হিরণ বলেন, "2014 সালে কীভাবে ভোট লুট হয়েছিল, তা আপনারা দেখেছেন ৷ তৃণমূলের সাংসদ কীভাবে জিতেছিলেন এখানে ৷ 2019 সালে তো ভোট করতেই দেননি ৷ একতরফা ভোট হয়েছিল ৷ আমাদের যাঁরা ভোট দিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে ঘরে আটকে রেখে দিয়েছিল ৷ আপনারা টিভিতে দেখেছেন, কীভাবে ভারতী ঘোষের উপর আক্রমণ হয়েছে ৷ আমরা চাই, 2024 সালে যেন পুলিশ ন্যায্যভাবে ভোট করায় ৷" বিজেপি ঘাটাল সাংগঠনিক সভাপতি তন্ময় দাসের অভিযোগ, কোনও পরিবর্তন হয়নি ৷ যে সন্ত্রাস সিপিএম চালাত, তার দশ গুণ চালাচ্ছে তৃণমূল ৷

তবে কেশপুর নিয়ে উলটো সুর গাইছে শাসকদল তৃণমূল ৷ দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ রফিক বলেন, "কেশপুর সন্ত্রাসহীন হয়েছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গড়ার পর থেকে এখানে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হয় না ৷ ঘর পুড়ছে না, মানুষকে জেলে যেতে হচ্ছে না ৷ বিরোধীরা মিথ্যা কথা বলছে ৷ আজ মানুষ কাজ করছে ৷ স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে চিকিৎসা পাচ্ছে ৷ কাজ পাচ্ছে ৷ হাসপাতাল, রাস্তাঘাট হয়েছে ৷ ব্যাপক উন্নতি হয়েছে কেশপুরের ৷" তৃণমূল নেতার আরও দাবি, "যতই বর্ষা হোক, ঘাটাল পর্যন্ত গাড়ি নির্দ্বিধায় যাচ্ছে ৷ এখন কোনও কষ্ট নেই ৷"

ফের লোকসভা ভোট ৷ দিল্লিতে জনপ্রতিনিধি পাঠাবে কেশপুরের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ ৷ নির্বাচনী প্রচারে পয়লা বৈশাখ কেশপুরে গিয়েছিলেন অভিনেতা-নেতা দেব ৷ সেদিনই আনন্দপুরেও গিয়েছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হিরণ ৷ তবে গত 10 বছরে এলাকাবাসীর খোঁজ নিতে দেব কি পা রেখেছিলেন কেশপুরে ? না, মনে করতে পারছে না এলাকার মানুষ ৷ 25 মে এখানে ভোট হবে ৷ একসময়ের লালদুর্গে এখন চারদিকে শুধুই ঘাসফুল ৷ তবে মাঝেমধ্যে পদ্মফুলও দেখা যাচ্ছে ৷ কেশপুরের মানুষের জীবনে ভালো সময় আসবে ? নাকি অধরাই থাকবে উন্নয়ন ?

আরও পড়ুন:

  1. ঘাটালে ‘হিরোগিরি’ ! আস্তিন গুটিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন বায়োস্কোপের দুই তারকা
  2. রাজনীতির জন্য ধর্মের পরিবর্তন করেন, হিরণের কটাক্ষে দেবের জবাব ‘জয় শ্রীরাম’
  3. শিয়রে ভোট, কথা রাখেননি সাংসদ দেব; ঘাটালে সেতুর স্বপ্ন অধরা গ্রামবাসীদের

কী বলছে এক সময়ের বাম দুর্গ কেশপুর ?

কেশপুর, 22 এপ্রিল: আক্ষরিক অর্থেই এক সময় 'লালদুর্গ' ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর বিধানসভা ৷ মাত্র 13 বছর আগেও এখানে কাস্তে-হাতুড়ির দাপটে মানুষ ভীত-স্বন্ত্রস্ত হয়ে থাকত ৷ কিন্তু বাম জমানাতেই তৃণমূলের উত্থান দেখেছে এই কেন্দ্র ৷ দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুরের কেশপুর ৷

তবে রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়ায় 2016 সালে এখানে বাম শাসনের অবসান ঘটে ৷ বিধানসভা নির্বাচনে দু'বারের সিপিএম বিধায়ক তথা প্রার্থী রামেশ্বর দোলুইকে পরাজিত করে ঘাসফুল ফোটান তৃণমূলের শিউলি সাহা ৷ 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল প্রার্থী শিউলি সাহাই জয়ী হন ৷ কেশপুর থাকে তৃণমূলেরই দখলে ৷ তবে বাম আমলে তৃণমূলের মতোই বিজেপি নিজের জায়গা করে নিয়েছে লাল দুর্গে ৷ একুশের ভোটে সিপিএম প্রার্থীকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন বিজেপির প্রীতিশ রঞ্জন কৌর ৷ তাঁর ভোটের হার ছিল 42 শতাংশ ৷ আর মাত্র 13 হাজার 670টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন রামেশ্বর দোলুই ৷ জোড়াফুল-পদ্মফুলের দাপটে এখানে লাল রং এখন ফিকে ৷

ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই কেশপুরে পতাকা বদলেছে ৷ তবে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জীবনে কি শান্তি ফিরেছে ? নাকি কেশপুর আছে কেশপুরেই ? আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে কী বলছে কেশপুর, খবর নিল ইটিভি ভারত ৷

সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত কেশপুর কেন্দ্রটি তফশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ৷ 2011 সালের শেষ জনগণনা অনুযায়ী এখানে 28.01 শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ৷ স্বভাবতই এই 13 বছরে তা আরও বেড়েছে ৷ 2023 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য বলছে, এখানে সংখ্যালঘু ভোটার 27 শতাংশ ৷ তবে সংখ্যালঘু-সহ তফশিলি জাতি ভোটার 35 শতাংশ ৷ তাই এই কেন্দ্রের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু ও তফশিলি জাতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ৷

ভোট এলেই বাম জমানার কেশপুরের কথা মনে পড়ে ৷ সে সময় কেশপুরকে 'সিপিএমের শেষপুর' বলা হত ৷ এলাকাবাসীর ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা ছিল না বলে আজও অভিযোগ করে বিরোধী তৃণমূল ৷ আজ বামেদের হঠিয়ে তৃণমূল তো বটেই, রামেরাও জায়গা করে নিয়েছে ৷ 2016 ও 2021 সালের বিধানসভা ভোট, 2019 সালের লোকসভা ভোট হয়েছে ৷ গত বছর মিটেছে পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ তবে গ্রামের ভোটেও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে এখানে ৷ যদিও শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে বলেই দাবি করেছে শাসকদল ৷ 2014, 2019 পরপর দু'দুটি লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন অভিনেতা দেব ৷ এর আগে 2019 সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষকে ঘিরে দিনভর সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছিল, যা আজও অনেকেই ভোলেননি ৷

2011 সালের পর সিপিএমের জামশেদ আলি ভবন কিংবা আনন্দপুরের পার্টি অফিস দীর্ঘসময় বন্ধ অবস্থায় ছিল ৷ 2016 সালের পর পরে সেগুলি খুলেছে ৷ তবে এখানে গণতন্ত্র নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সিপিআই জেলা সম্পাদক অশোক সেন ৷ তিনি বলেন, "মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এখনও সেভাবে নেই এই কেশপুরে ৷ তৃণমূলের মতে উন্নতি হলেও, বাস্তবে তার অভাব রয়েছে ৷ তার প্রধান কারণ সব রাজনৈতিক দলের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম করার পরিবেশ নেই ৷" তিনি আরও বলেন, "পঞ্চায়েত ভোটে তো গণতান্ত্রিকভাবে হয়নি ৷" অশোক সেন বরং কেশপুরে লোকসভা নির্বাচনকে নির্বাচম কমিশনের পরীক্ষা বলে উল্লেখ করেন ৷ তিনি বলেন, "লোকসভা নির্বাচনে কমিশনের পরীক্ষা হবে ৷ কেশপুরের মানুষ সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ভোট দিতে পারবে কি পারবে না ৷"

এবার ঘাটাল লোকসভায় ফের প্রার্থী দু'বারের সাংসদ তৃণমূলের দেব ৷ আর তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হিরণ চট্টোপাধ্যায় ৷ কেশপুরের মানুষ কী বলছে ? স্থানীয় স্বদেশ রায় কেশপুরকে সন্দেশখালির সঙ্গে তুলনা করে বললেন, "দ্বিতীয় সন্দেশখালি বললেই চলে ৷ শুধু এখানে রাতে পিঠে করতে ডাকেনি, এই যা ৷ উন্নয়ন সেভাবে হয়নি ৷ শুধু ওই মুখেই বলছে ৷" আরেক এলাকাবাসী লক্ষ্মণ পাল তো সরাসরি শাসকদলের বিরুদ্ধে মারধর, মহিলাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন ৷ তিনি বলেন, "সিপিএমের আমলে যেমন ছিল যে, মানুষের কথা বলার কোনও উপায় নেই ৷ এখনও তেমনই রয়েছে৷ কথা বললে মারধর করবে ৷ তৃণমূলের লোক ঘরে গিয়ে মারধর করবে ৷ পুলিশের নির্যাতন রয়েছে ৷ মহিলাদের উপর অত্যাচার করা হয় ৷"

এই সন্ত্রাস নিয়ে বিজেপি প্রার্থী হিরণ বলেন, "2014 সালে কীভাবে ভোট লুট হয়েছিল, তা আপনারা দেখেছেন ৷ তৃণমূলের সাংসদ কীভাবে জিতেছিলেন এখানে ৷ 2019 সালে তো ভোট করতেই দেননি ৷ একতরফা ভোট হয়েছিল ৷ আমাদের যাঁরা ভোট দিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে ঘরে আটকে রেখে দিয়েছিল ৷ আপনারা টিভিতে দেখেছেন, কীভাবে ভারতী ঘোষের উপর আক্রমণ হয়েছে ৷ আমরা চাই, 2024 সালে যেন পুলিশ ন্যায্যভাবে ভোট করায় ৷" বিজেপি ঘাটাল সাংগঠনিক সভাপতি তন্ময় দাসের অভিযোগ, কোনও পরিবর্তন হয়নি ৷ যে সন্ত্রাস সিপিএম চালাত, তার দশ গুণ চালাচ্ছে তৃণমূল ৷

তবে কেশপুর নিয়ে উলটো সুর গাইছে শাসকদল তৃণমূল ৷ দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ রফিক বলেন, "কেশপুর সন্ত্রাসহীন হয়েছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গড়ার পর থেকে এখানে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম হয় না ৷ ঘর পুড়ছে না, মানুষকে জেলে যেতে হচ্ছে না ৷ বিরোধীরা মিথ্যা কথা বলছে ৷ আজ মানুষ কাজ করছে ৷ স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে চিকিৎসা পাচ্ছে ৷ কাজ পাচ্ছে ৷ হাসপাতাল, রাস্তাঘাট হয়েছে ৷ ব্যাপক উন্নতি হয়েছে কেশপুরের ৷" তৃণমূল নেতার আরও দাবি, "যতই বর্ষা হোক, ঘাটাল পর্যন্ত গাড়ি নির্দ্বিধায় যাচ্ছে ৷ এখন কোনও কষ্ট নেই ৷"

ফের লোকসভা ভোট ৷ দিল্লিতে জনপ্রতিনিধি পাঠাবে কেশপুরের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ ৷ নির্বাচনী প্রচারে পয়লা বৈশাখ কেশপুরে গিয়েছিলেন অভিনেতা-নেতা দেব ৷ সেদিনই আনন্দপুরেও গিয়েছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হিরণ ৷ তবে গত 10 বছরে এলাকাবাসীর খোঁজ নিতে দেব কি পা রেখেছিলেন কেশপুরে ? না, মনে করতে পারছে না এলাকার মানুষ ৷ 25 মে এখানে ভোট হবে ৷ একসময়ের লালদুর্গে এখন চারদিকে শুধুই ঘাসফুল ৷ তবে মাঝেমধ্যে পদ্মফুলও দেখা যাচ্ছে ৷ কেশপুরের মানুষের জীবনে ভালো সময় আসবে ? নাকি অধরাই থাকবে উন্নয়ন ?

আরও পড়ুন:

  1. ঘাটালে ‘হিরোগিরি’ ! আস্তিন গুটিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন বায়োস্কোপের দুই তারকা
  2. রাজনীতির জন্য ধর্মের পরিবর্তন করেন, হিরণের কটাক্ষে দেবের জবাব ‘জয় শ্রীরাম’
  3. শিয়রে ভোট, কথা রাখেননি সাংসদ দেব; ঘাটালে সেতুর স্বপ্ন অধরা গ্রামবাসীদের
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.