পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ভাঙবে 1 ফেব্রুয়ারি, নস্টালজিক টালা ব্রিজ তৈরির সাক্ষীরা

By

Published : Jan 28, 2020, 2:29 PM IST

Updated : Jan 29, 2020, 1:44 AM IST

tala bridge

31 জানুয়ারি রাত 12টায় টালা ব্রিজের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হবে । 1 ফেব্রুয়ারি ব্রিজ ভাঙার কাজ শুরু হবে । টালা ব্রিজ তৈরির হওয়ার ইতিহাস নিয়ে নস্টালজিক প্রবীণ টালাবাসীরা ৷

কলকাতা, 28 জানুয়ারি: হেমন্ত সেতু ৷ নামটা কি অচেনা লাগছে? একদমই না, উত্তর কলকাতার ব্যস্ততম ব্রিজ হল "টালা ব্রিজ" ৷ যার পোশাকি নাম হেমন্ত সেতু ৷ BT রোডের সঙ্গে শহরতলির যোগাযোগের এক অন্যতম মাধ্যম ৷ বর্তমানে এই ব্রিজের মেয়াদ কমছে ৷ 2019 সালের দুর্গাপুজোর সময় বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের ৷ নেওয়া হয় বিশেষজ্ঞদের মতামত ৷ তৎপরতার সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় বড় গাড়ির চলাচল ৷ ব্রিজের গুণগতমান কমে আসায় প্রথম থেকেই স্থির হয়েছিল ব্রিজ ভাঙার দিন ৷ 1 ফেব্রুয়ারি ভাঙা হবে ইতিহাস বিজড়িত এই হেমন্ত সেতু ৷ তারই মাঝে স্মৃতিচারণায় টালাবাসীরা ৷ তবে সকলেই একমত, ভালো কাজের জন্য কিছু না কিছু হারাতে হয় ৷ পাশাপাশি তাঁরা প্রবল যানজট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ৷ তবুও তাঁরা প্রস্তুত ৷

টালা ব্রিজের বর্তমান চিত্র ৷ চলছে ছোটো ছোটো গাড়ি ৷ বন্ধ বড় গাড়ি চলাচল ৷


সে এক ইতিহাস । গঙ্গায় ব্যারাকপুরে তখন রমরমিয়ে চলছে পাটশিল্প । শিল্পাঞ্চলের কাঁচামাল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চটজলদি সরবরাহ করতে তৈরি হয় সার্কুলার রেললাইন । এই রেললাইনের জন্য সড়কপথে সেইসময় BT রোড়ের সঙ্গে উত্তর শহরতলির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ৷ এমতাবস্থায় পরিস্থিতি সামলাতে তৈরি হয় ছোটো একখানি ব্রিজ । সেই ব্রিজ যে চলবে না, বুঝতে পারে মহাকরণের কংগ্রেস সরকার । ভবিষ্যতের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নতুন বড় মাপের সেতু তৈরিতে । নামকরণ করা হয় হেমন্ত সেতু ৷ বাংলার রূপকার বিধানচন্দ্র রায় করেছিলেন পরিকল্পনা। তার দূরদর্শিতা বলে দিয়েছিল চওড়া ব্রিজ তৈরি না করা হলে ভবিষ্যতে BT রোডের সঙ্গে APC রোডের যোগাযোগে সমস্যা হবে । যানজট হয়ে উঠবে মূল সমস্যা। সেই সূত্রে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রেল মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয়ে তৈরি হয় নতুন ব্রিজ। কাজ শুরু হয় ছয়ের দশকের শুরুতেই। 1963-1964 সালে শেষ হয় ব্রিজ তৈরির কাজ। দুর্ভাগ্যের বিষয় ব্রিজ দেখে যেতে পারেননি বিধানচন্দ্র রায়। 1962 সালের 1 জুলাই মৃত্যু হয় তাঁর। ব্রিজের উদ্বোধন করেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। ব্রিজটির নামকরণ করা হয় হেমন্ত সেতু ৷ তারপর থেকে প্রায় ছয় দশক ধরে উত্তর কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার মেলবন্ধন করে ব্রিজটি ৷ অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে ব্রিজটির সঙ্গে ৷

কী বললেন টালা ব্রিজ তৈরির সাক্ষীরা ৷ দেখুন ভিডিয়োয়...

টালার প্রবীণ নাগরিকরা ব্রিজ নিয়ে নিজেদের নস্টালজিয়া জানালেন ৷ একজন বলেন , টালা ব্রিজের আগেকার ব্রিজটি খানিকটা ঢালু ছিল ৷ চারপাশটা দেবদারু গাছ দিয়ে ঘেরা ছিল ৷ তিনি এবং বন্ধুরা এই গাছের গুঁড়িগুলিকে ঘুড়ির সুতোর মাঞ্জা দেওয়ার কাজে লাগাতেন ৷

ব্রিজ ভাঙার পর যানজটের আশঙ্কা নিয়ে একজন চালাক জানান, ''কিছু করার নেই ৷ ট্রাফিক রুল যা নির্দেশ দেবে তাই মানা হবে ৷''

বলা যেতেই পারে পোস্তা বা মাঝেরহাটের মত দুর্ঘটনা এড়াতে পুরানোকে বিসর্জন দিয়ে নতুনকে আহ্বান করতেই হবে ৷

Intro:special copy
কলকাতা, 28 জানুয়ারি: সে এক ইতিহাস। তখনো উজ্জ্বল গঙ্গাপাড়ের পাটশিল্প। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে শোনা যায় সাইরেনের আওয়াজ। সঙ্গে দুরন্ত গতিতে চলছে উত্তর শহরতলীর নগরায়ন। উপশহর চরিত্রকে উত্তর কলকাতার যোগাযোগের প্রধান অন্তরায় সার্কুলার রেললাইন। তার উপর দিয়ে ছিল ছোট একখানি ব্রিজ। সেই ব্রিজছ যে চলবে না, বুঝতে পারে মহাকরণের কংগ্রেস সরকার। ভবিষ্যতের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নতুন হেমন্ত সেতু তৈরির। সেটা পঞ্চাশের দশকের শেষ সময়।





Body:বাংলার রূপকার বিধানচন্দ্র রায় করেছিলেন পরিকল্পনা। তার দূরদর্শীতা বলে দিয়েছিল চওড়া বড় ব্রিজ তৈরি না করা হলে ভবিষ্যতে বিটি রোডের সঙ্গে এপিসি রোডের যোগাযোগ হয়ে পড়বে দুর্বিষহ। যানজট হয়ে উঠবে মূল সমস্যা। সেই সূত্রে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রেল মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয়ে তৈরি হয় নতুন ব্রিজ। কাজ শুরু হয় ছয়ের দশকের শুরুতেই। 1963-64 সালে শেষ হয় ব্রিজ তৈরির কাজ। দুর্ভাগ্যের বিষয় ব্রিজ দেখে যেতে পারেননি বিধানচন্দ্র রায়। 1962 সালের পয়লা জুলাই মৃত্যু হয় তাঁর। ব্রিজের উদ্বোধন করেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। নামকরণ করা হয় হেমন্ত সেতু।

সেই ব্রিজ তৈরি হতে দেখেছেন অনেকেই। সে কথা মনে করাতেই উত্তর কলকাতার টালা কিংবা পাইকপাড়া এলাকার প্রবীণ সেইসব মানুষ গুলোর চোখ চিকচিকিয়ে ওঠে। যেন ফিরে যান বাল্যকাল কিংবা কৈশোরে। দূর্গা পূজোর আগমনী গানের সঙ্গেই যেমন কচি কাঁচার দল ঠাকুরদালানে রোজ উঁকিঝুঁকি মেরে আসে কতটা প্রতিমা তৈরি হল তা দেখতে, তেমনভাবেই রোজ ব্রিজের কাজ কতটা এইগুলো জরিপ করতেন ওরা। সদ্য তৈরি হওয়া ব্রিজের ওপর চলতো খেলাধুলো। সদ‍্য গোঁফ গজানো যুবকদের আড্ডার ঠেকও বসত। অনেকের কাছে সেই স্মৃতিগুলো রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের মতোই উজ্জ্বল। অনেকের আবার স্মৃতিপটে ধুলো জমেছে। আবছা সূচিতে মনে পড়ে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী কিংবা জওহরলাল নেহেরুর চিতাভষ্ম নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। সেদিন টালা ব্রিজের দু'পাশে কাতারে কাতারে মানুষ। শেষবার মানুষের ঢল নেমেছিল ক্যাপ্টেন কণাদ ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর। কারগিল শহীদ কণাদকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এই ব্রিজের উপর দিয়েই।



Conclusion:প্রবীণরা অবশ্য পুরনো সেই ব্রিজকে ভেঙে ফেলার পক্ষেই মত দিচ্ছেন। তাদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে মাজেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার স্মৃতি। সেই ভয়াল স্মৃতি তাদের পাড়াতেও ফেরত আসুক চান না তারা। আর তাই বলেন, “ পুরনো কে তো ভেঙে ফেলতেই হবে। তবেই তো হবে নতুনের জয়গান। নতুন করে তৈরি হোক টালা ব্রিজ। নতুনকে স্বাগত।"
Last Updated :Jan 29, 2020, 1:44 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details