কলকাতা, 2 মে: 'বর্তমান সময়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি হুমকির মুখে। একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে থাকতে হচ্ছে। তাঁদেরই নিরাপত্তা নেই। তাহলে আমার মতো সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা থাকবে কীভাবে !' বৃহস্পতিবার এভাবেই কলকাতায় এসে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করলেন নির্মলা সিতারমণের স্বামী অর্থনীতিবিদ পরাকালা প্রভাকরণ।
এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর স্বামীর লেখা বই 'দ্য ক্রুকড টিম্বার অফ দ্য নিউ ইন্ডিয়া'র আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হয়। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, ওম প্রকাশ মিশ্র, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই একাধিক বিষয়ের অবতারণা করেন এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।
এদিন বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে তিনি জানান, এই বই লিখতে গিয়ে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে ৷ সোশ্যাল মিডিয়ার হুমকি তো আছেই পাশাপাশি মুখোমুখি সাক্ষাতে তাঁকে বলা হয়েছে এই বই না লিখতে। সেখান থেকেই তাঁর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাহলে কি তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন ? এর জবাবে এই প্রসঙ্গই টেনে আনেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।
তিনি এদিন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, "60 বা 70-র দশকে যেভাবে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হত, আজকে তেমনটা করা হয় না। "কয়েকদিন আগেই লোকসভার অধিবেশনে আপনারা দেখেছেন 137 জন সাংসদকে সাসপেন্ড করে দিয়ে বিল পাস করা হয়েছে। এই অবস্থায় রাজ্য সরকারগুলোর কোনও বক্তব্য থাকলে তা তুলে ধরার জায়গা থাকে না।"
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। প্রভাকরণের কথায়, "ভোট চলছে। নির্বাচন কমিশন যা করছে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকছে। কারণ এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগই সন্দেহের মুখে। সুপ্রিম কোর্টকে এই নিয়োগের বাইরে রাখা হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেই সরকার কমিশনার নিয়োগ করতে পারে। প্রত্যেকটা সংস্থাই এই মুহূর্তে সংকটের মুখে।"
এদিন ভোটের ময়দানে ধর্মের ব্যবহার নিয়েও মুখ খুলেছেন পরাকলা প্রভাকরণ। তিনি বলেন, "আমাদের জীবনে অতীতে ধর্ম ছিল না এমন নয়। অতীতেও ধর্ম ছিল। কিন্তু আজকের দিনে পার্থক্য এটাই হয়ে গিয়েছে যে ধর্মকে সামাজিক পরিসরে নিয়ে আসা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এটাকে রাজনীতির অস্ত্রও হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। আজকের দিনে ধর্মকে রাজনৈতিক কষ্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনটা করার পেছনে এই সরকারের ভূমিকা রয়েছে। আর এটা কোনওভাবেই সংবিধান সমর্থন করে না। ভুলে গেলে চলবে না. আমাদের সংবিধান সবসময় বৈচিত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। আমাদের দেশ কোনও একটি ধর্ম কোন বা একটি রাজনৈতিক দল এমনকী কোনও একটি বিশেষ অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বও করে না। আমাদের দেশ আমাদের সংবিধান সকলকে নিয়ে চলার কথা বলে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজকে দেশের নাগরিকত্বও ধর্ম দ্বারা নির্ধারিত করার চেষ্টা হচ্ছে।"
আরও পড়ুন
'পদ নয়, পথে আছি', মমতা-অভিষেকের নাম নিয়ে চোখের জলে বার্তা কুণালের
'আমরাও পারি আপনাদের সব বিধায়ককে বহিষ্কার করতে', মহুরার কেন্দ্র থেকে হুঙ্কার মমতার