হায়দরাবাদ: আজকাল গ্রীষ্মের মরশুমে বাড়ি. অফিস, হাসপাতাল বা দোকান- প্রায় ,সর্বত্র সারাদিন এসি চলে । সারাদিন এসির ঠান্ডায় সময় কাটানো বা সারা রাত এসির চিলিয়ে ঘুমালে গরম থেকে আরাম পাওয়া যায়, তবে এতে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে । চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে খুব ঠান্ডা এয়ার কন্ডিশনারের সংস্পর্শে থাকলে শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাই নয়, ত্বক এবং আরও অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে (Spending long hours in air conditioned rooms is leading to respiratory problems) ।
সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: দিল্লির লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক আশরির কোরেশি বলেন, "দিন হোক বা রাত, দীর্ঘক্ষণ এসির তীব্র ঠান্ডায় থাকলে বা ঘুমালে শরীরে নানা ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে । আমরা যখন সারাদিন ঠান্ডা এসি-তে থাকি বা কম এসি-তে ঘুমাই, তখন যাদের হাঁপানি বা অন্যান্য শ্বাসকষ্ট আছে বা যাদের পরিবেশ সংক্রান্ত কোনও ধরনের অ্যালার্জি আছে তাদের সমস্যা আরও বাড়তে পারে । আসলে এসি বাতাসের আর্দ্রতার মাত্রাকে প্রভাবিত করে । এছাড়াও এসি আছে এমন জায়গায় সব জানলা-দরজা বন্ধ থাকে । এমন পরিস্থিতিতে নিয়মিত পরিষ্কারের অভাবে বাতাসে দূষিত পদার্থ, ধুলোবালি এবং অন্যান্য অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান একই জায়গায় জমা থাকে । এই কারণে অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাস এবং পরিবেশে আর্দ্রতার অভাব শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা লেগে বুকে ব্যথা, পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া ও অ্যালার্জির প্রতি সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে ৷ সেই সঙ্গে যারা জয়েন্টের ব্যথায় ভুগছেন, দীর্ঘক্ষণ এসি-তে থাকলে তাদের সমস্যাও বেড়ে যায় ।"
এছাড়া সারাদিন বা রাত এয়ার কন্ডিশনারে সময় কাটালে আরও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার কয়েকটি নিম্নরূপ ।
এসি-তে বেশি সময় কাটালে শরীরের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে যায়, আবার বেশিক্ষণ ঠান্ডা পরিবেশে থাকলে পিপাসাও কমে যায় । এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কম জল পান করে থাকেন । পরিবেশগত কারণে শরীরে উপস্থিত আর্দ্রতা কমে যাওয়া এবং জল কম পান করলে জলশূন্যতা হতে পারে । যখন এটি ঘটে তখন নার্ভাসনেস, হালকা মাথা ঘোরা, কিছু ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, ক্রমাগত মাথাব্যথা, সাইনাস এবং মাইগ্রেনের সমস্যা বৃদ্ধির মতো সমস্যা হতে পারে ।
পরিবেশে আর্দ্রতার অভাব আমাদের ত্বকেও প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে এমন পরিবেশে বসে থাকার কারণে ত্বকের আর্দ্রতা হারাতে শুরু করে যার কারণে ত্বকে চুলকানি, শুষ্কতা, বলিরেখা এবং বার্ধক্যের লক্ষণ দেখা দিতে পারে ।
দীর্ঘক্ষণ এসি-তে বসে কাজ করা এবং মোবাইল ও কম্পিউটারে সময় কাটানোর ফলেও চোখের ওপর প্রভাব পড়তে পারে । এসির কারণে পরিবেশে আর্দ্রতার অভাব চোখের উপরও প্রভাব ফেলে । এই ধরনের পরিস্থিতিতে, কখনও কখনও শুষ্কতা, জ্বালাপোড়া, চুলকানি ও চোখের জলের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
তাপমাত্রায় অত্যধিক শীতলতা ও আর্দ্রতার অভাব কখনও কখনও শরীরের বিপাককে প্রভাবিত করতে পারে । যার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে । এটি সংক্রমণ এবং রোগ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে ৷
সতর্কতা: এছাড়াও বলেন, "দিনের কিছু সময় খোলা পরিবেশে তাজা বাতাসে কাটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যারা সারাদিন এসি-তে কাটান তাদের ঘুমের আগে বা সকালে খোলা পরিবেশে স্বাভাবিক হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা উচিত । এছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে, সেগুলি মাথায় রাখলে অনেক সমস্যা এড়ানো যায় । যার কয়েকটি নিম্নরূপ ।"
নিশ্চিত করুন যে আপনার চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার, ধুলো মুক্ত এবং জীবাণু মুক্ত ৷
যাদের অ্যালার্জি এবং হাঁপানি বা শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে ঠান্ডা পরিবেশ, তাদের দীর্ঘ সময় ধরে এসি-তে বসা বা ঘুমানো এড়িয়ে চলা উচিত ।
যারা যে কোনও কারণে দীর্ঘ সময় এসি-তে কাটান তাদের নিয়মিত বিরতিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল পান করা উচিত । যাতে শরীরে আর্দ্রতা বজায় থাকে ।
এই ধরনের ব্যক্তিরা যদি চোখে চুলকানি বা শুষ্কতার মতো কোনও ধরনের সমস্যা অনুভব করেন তবে তারা চোখের ডাক্তারের পরামর্শে ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন ।
অফিস, হাসপাতাল বা অন্যান্য জায়গায় যেখানে একটানা এসি চলে, সেখানে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে হবে যাতে সেসব জায়গায় পরিবেশে আর্দ্রতা বজায় রাখা যায় ।
সবসময় মাঝারি ঠান্ডায় এসি চালান ৷ বাইরের পরিবেশ খুব গরম হলেও, 22 থেকে 28 এর মধ্যেই এসি চালান । বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় খুব ঠান্ডা এসি চালানো এড়িয়ে চলুন ।
আরও পড়ুন: