Kanchan Nagar : কাঞ্চননগরে ছুরি-কাঁচি শিল্পের অস্তিত্ব সঙ্কট, পেশা বদল করছেন শিল্পীরা

author img

By

Published : Sep 18, 2021, 2:21 PM IST

Kanchan Nagar

কোনও যন্ত্র সাহায্য ছাড়াই হাতে তৈরি হত ছুরি, কাঁচি । উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ছাড়িয়ে সেগুলো চলে যেত ইংল্যান্ড, জার্মানিতে । কাঞ্চননগরে ছুরি-কাঁচি ছাড়াও তৈরি হতো তলোয়ার, তালা, কামান প্রভৃতি যুদ্ধের হাতিয়ার ।

বর্ধমান, 16 সেপ্টেম্বর : সেসময় এলাকার আকাশে বাতাসে শুধু সারাদিন কান পাতলেই শোনা যেত হাপর টানার আওয়াজ । ঘরে ঘরে তৈরি হত ছুরি, কাঁচি । শিল্পীদের নাওয়া খাওয়ার সময় ছিল না । সেই ছুরি, কাঁচি শুধু ভিনরাজ্যে নয়, সুনাম কুড়িয়েছিল ইংল্যান্ড, জার্মানিতেও । তখন কাঞ্চননগরের বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে ছিল অন্য উন্মাদনা ৷ ঘরে ঘরে হত পুজো ৷ বহুদিন ধরে সেই ছবিটা উধাও । বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়ে এই কাজ থেকে হাতগুটিয়ে নিচ্ছেন শিল্পীরা ৷ মেশিনে মরচে ধরছে । পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে ৷

ইতিহাস বলছে, কাঞ্চননগরের জনৈক প্রেমচাঁদ মিস্ত্রি ইউরোপে নির্মাতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুরি-কাঁচি তৈরি করতেন । শুধু তাই নয়, কোনও যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই হাতেই তৈরি হত ছুরি, কাঁচি । উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ছাড়িয়ে সেগুলো চলে যেত ইংল্যান্ড, জার্মানিতে । 1954 সালে গড়ে ওঠে কাঞ্চননগর কাটলারি কো- অপারেটিভ সোসাইটি । কাঞ্চননগরে ছুরি-কাঁচি ছাড়াও তৈরি হতো তলোয়ার, তালা, কামান প্রভৃতি যুদ্ধের হাতিয়ার ।

কাঞ্চননগরের বিশ্বকর্মা পুজোয় সেই আগের জৌলুস নেই
কাঞ্চননগরের বিশ্বকর্মা পুজোয় সেই আগের জৌলুস নেই

এরপর কাঁচামাল, কারিগরের অভাবে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসে এই শিল্প । কয়লার সঙ্গে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারের সঙ্গে পেরে ওঠেনি হাতের তৈরি এই শিল্প । এছাড়া শিল্পীদের পরবর্তী প্রজন্ম এই ব্যবসাতে আগ্রহ হারাতে শুরু করে । এর পিছনে সরকারের উদাসীনতাকেও দায়ী করেছেন শিল্পীরা ৷ তাঁদের দাবি, কাঞ্চননগরের ছুরি-কাঁচির মূল বৈশিষ্ট্য হল দীর্ঘদিন ধরে এতে কোনওভাবেই মরচে ধরত না । পরবর্তীকালে কাঁচামালের অভাবে এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসে ।

আরও পড়ুন : Asansol Special Story : তৃতীয় ঢেউয়ের আগে বৃদ্ধাশ্রমের নিঃসঙ্গ আবাসিকদের পাশে ইসিএলের চিকিৎসকরা

এই বিষয়ে কাঞ্চননগরের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, "আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে ছুরি-কাঁচি তৈরি করেছেন । সেই জিনিস কলকাতার বাজারে বিক্রি হত । দিনে দিনে কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকে । সেই কারণে ছুরি-কাঁচি তৈরি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে । সরকারও কোনওদিন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি । তাই কাঞ্চননগরের কাটলারি শিল্প শেষ হয়ে গিয়েছে । এই পেশায় থেকে সংসার চালানো যাবে না, তাই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছি ।"

ছুরি-কাঁচি তৈরি করেই দিন গুজরান হত শিল্পী দিলীপকুমার মণ্ডলের ৷ অতীতের সুখস্মৃতি স্মরণ করে তিনি বললেন, "তখন আমরা সারা বছর ধরে কাজ করতাম ৷ তাই বিশ্বকর্মা পুজোর সময় একটা বাড়তি উম্মাদনা ছিল । দিনকয়েক আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত বিশ্বকর্মা পুজোর প্রস্তুতি । আগের দিন ঘরদুয়ার পরিষ্কার করতে বেশি সময় চলে যেত । এখন কোনওরকমে পুজো করতে হয় । কারণ এখন তো আর ছুরি, কাঁচি তৈরি হয় না । কেউ কাস্তে, বঁটি নিয়ে আসে সেগুলো ধার দেওয়া, কাটারি বাঁট লাগানো এরকম টুকটাক কিছু কাজকর্ম করা হয় । নতুন জিনিস সেভাবে তৈরি হয় না । কাঁচামাল, কয়লার অভাবে সমস্যা বাড়তে শুরু করে । এমন পরিস্থিতি হল যে, নিজেদের মজুরির খরচ সারাদিনে উঠত না । সেই কারণেই কাজ বন্ধ হয়ে গেল । আমরা পেরে উঠলাম না । আমি এখন টোটো চালাই। টুকটাক অন্যান্য কাজকর্ম করি । আর সরকারের কাছে আশাও করি না । কারণ সরকার ইচ্ছে করেই অনেক আগেই এটা বাঁচাতে পারত ।’’

আরও পড়ুন : Ujjwala Yojana Special : মিলছে না উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস, জ্বালানির অভাবে হাঁড়ি বন্ধ আদিবাসী পরিবারের

বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, "ছুরি-কাঁচি শিল্প এখানে অনেকদিন আগে ছিল । এখন আর পুরানো দিনের শিল্পীরা নেই । আর বর্তমান বাজারে তাঁরা প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবেও না । সরকারের তরফে একটা জায়গা নেওয়া আছে । সেই জায়গাও ফাঁকা পড়ে আছে । অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু কিছু করা যায়নি ।"

আরও পড়ুন : canning : মানসিক ভারসাম্যহীন দুই সন্তান, কিডনি বিকল গৃহকর্তার ; সরকারি সাহায্যের আর্জি গৃহকত্রীর

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.