ETV Bharat / state

Asansol Lawyer Murder: আইনজীবীর দেহ পোড়াতে কেনা হয়েছিল 350 টাকার পেট্রল, প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

author img

By

Published : Jun 17, 2023, 9:52 PM IST

Asansol Lawyer Murder ETV BHARAT
Asansol Lawyer Murder

আসানসোলে আইনজীবী খুনে ধৃত শ্বশুর, স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিক ৷ 350 টাকার পেট্রল ঢেলে পোড়ানো হয়েছিল তাঁর দেহ ৷ পুলিশের কাছে স্বীকারক্তি অভিযুক্তদের ৷ উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষ ডিএনএ টেস্ট ও ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে ৷

আইনজীবীর দেহ পোড়াতে কেনা হয়েছিল 350 টাকার পেট্রল

আসানসোল, 17 জুন: আসানসোল কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী ব্রজেশ্বর দাস খুনের ঘটনার তদন্ত প্রায় শেষের পথে ৷ পুলিশ এই ঘটনায় ব্রজেশ্বর দাসের স্ত্রী শম্পা দাস, ব্রজেশ্বরের শ্বশুর তারকনাথ দাস এবং শম্পার প্রেমিক মনোজ যাদবকে গ্রেফতার করেছে ৷ তাঁদেরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে ৷ হাড়হিম করা এই খুনের ঘটনার তদন্তে যত গভীরে পুলিশ গিয়েছে, ততই চমকে গিয়েছেন তদন্তকারীরা ৷ সাধারণ গৃহবধূ ও অবসরপ্রাপ্ত শ্বশুর কীভাবে এই ঘটনা ঘটালেন ? তা ভেবেই তাজ্জব হয়ে যাচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকরা ৷

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারের এসিপি সেন্ট্রাল দেবরাজ দাস জানিয়েছেন, গত 10 জুন আইনজীবী ব্রজেশ্বর দাস নিজের ফ্ল্যাটে ফেরেন ৷ তিনি বাইরে গিয়েছিলেন ৷ সকাল 11টায় ফ্ল্যাটে ফেরার পর আসানসোল কোর্টের একটি পার্টিতে চলে যান ৷ সেখান থেকে ফেরেন বিকেল 4টের সময় ৷ ফ্ল্যাটে ফিরে দেখেন তাঁর ফ্ল্যাটে শ্বশুর এবং শাশুড়ি এসেছেন ৷ কিন্তু, বাড়িতে ফেরার পর স্ত্রী শম্পা দাসের সঙ্গে তাঁর বচসা শুরু হয় ৷ বিকেল পাঁচটা নাগাদ সেই বচসা চরম আকার নেয় ৷ যেখানে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে ৷

ঠিক সেই সময়েই ব্রজেশ্বরের শ্বশুর তারকনাথ দাস তাঁকে চড় মারেন বলে অভিযোগ ৷ সেই চড়ের জেরে অচৈতন্য হয়ে ব্রজেশ্বর মেঝেতে পড়ে যান ৷ এরপর ঘাড়ের কাছে বেশ কয়েকবার লাথি মারেন তারকনাথ ৷ অভিযোগ এর ফলে সেখানেই ব্রজেশ্বরের মৃত্যু হয় ৷ পুলিশ জানিয়েছে, ব্রজেশ্বর মারা গিয়েছেন দেখে শ্বশুর তারকনাথ বাজারে গিয়ে দড়ি কিনে নিয়ে আসেন ৷ দেহটিকে বেঁধে বস্তার মধ্যে ভরে দেন ৷ তারপর একটি ভাড়ার গাড়িতে শম্পা এবং তাঁর বাবা বেরিয়ে পড়েন ৷ তাঁরা কাজোড়ায় তারকনাথের ইসিএল আবাসনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ৷ পথে জামুরিয়া নিঘাতে একটি পেট্রোল পাম্পে 350 টাকার পেট্রল কেনন তাঁরা ৷

আরও পড়ুন: পুকুর-নদী থেকে উদ্ধার আইনজীবীর দেহাবশেষ, অভিযুক্ত শ্বশুরকে নিয়ে খুনের পুনর্নির্মাণ

পুলিশকে জেরায় অভিযুক্তরা জানিয়েছেন, তাঁরা ঠিক করেছিলেন ব্রজেশ্বেরর দেহ পুড়িয়ে ফেলা হবে ৷ কাজোড়ার আজিরবাগানে ইসিএল আবাসনে পৌঁছে ব্রজেশ্বরের দেহ রেখে দেন তারকনাথ দাস এবং শম্পা দাস ৷ রাতে বাবা ও মেয়ে সেখানে খাওয়া-দাওয়া করেন ৷ দেহ আবাসনে রেখে তারকনাথ মেয়ে শম্পাকে পুনরায় আসানসোলে ছাড়তে যান ৷ মেয়েকে আসানসোলে রেখে তিনি একা ফিরে যান কাজোড়ায় ৷ ভোররাতে ইসিএল আবাসনের পিছনে একটি গর্তের মধ্যে ব্রজেশ্বরের দেহের উপর টায়ার রেখে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেন তারকনাথ ৷

পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় দু’ঘণ্টা দেহ পোড়ানোর পর দেহাবশেষ স্থানীয় পুকুরে ও নদীতে ভাসিয়ে দেন তারকনাথ ৷ তিনি দুপুরে আবার আসানসোলে ফিরে আসেন ৷ অন্যদিকে, শম্পা দাস আসানসোল দক্ষিণ থানায় ব্রজেশ্বরের নিখোঁজ হওয়ার একটি অভিযোগ করেন ৷ কিন্তু, ব্রজেশ্বরের ভাইপো ব্রজেশ্বরকে অপহরণ কিংবা খুনের আশঙ্কা করে আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন সেদিন ৷

আরও পড়ুন: নেপথ্যে অন্য সম্পর্ক ? আইনজীবীকে খুনের পর পেট্রল জ্বেলে পোড়াল স্ত্রী ও শ্বশুর

পৃথক এফআইআর হওয়ার পরেই পুলিশের সন্দেহ হয় ৷ তদন্তকারীরা প্রত্যেককে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে ৷ আর তাতেই সকলের বয়ানে অসংগতি ধরা পড়ে ৷ টানা জেরায় ভেঙে পড়েন ব্রজেশ্বরের শ্বশুর তারকনাথ এবং শম্পা দাস ৷ তাঁরা পুরো ঘটনা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলে জানা গিয়েছে ৷ অন্যদিকে, শম্পা দাসের প্রেমিক মনোজ যাদবকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ মৃতদেহ লোপাট করার জন্য মনোজ যাদব নাকি শম্পাকে নানান পরামর্শ দিয়েছিলেন ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে মনোজ যাদব একদা ব্রজেশ্বরের ওকালতির মুহুরী ছিলেন ৷ তখন থেকেই শম্পার সঙ্গে তাঁর আলাপ এবং ঘনিষ্ঠতা ৷ পুলিশ ইতিমধ্যেই তিনজনকে গ্রেফতার করে তদন্ত শেষের পথে নিয়ে গিয়েছে ৷ তদন্তকারী আধিকারিক জানিয়েছেন, দেহের যে সমস্ত হাড়গোড় পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি ডিএনএ টেস্টের জন্য পাঠানো হবে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.