ETV Bharat / state

birds rescue : ফের বিপুল সংখ্যক বিরল পাখি উদ্ধার মালদায়

author img

By

Published : Aug 5, 2021, 3:45 PM IST

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ

মালদা থেকে পরপর বিরল প্রজাতির পাখি উদ্ধার হচ্ছে ৷ গত 27 জুলাই, বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে 500-এর বেশি বিপন্ন প্রজাতির টিয়া উদ্ধার হয়েছিল ৷ গত 3 অগস্ট ফের 100-এর বেশি বিরল প্রজাতির পাখি উদ্ধার হয়েছে ৷ জাল নোটের পাশাপাশি মালদা জেলা কী বন্যপ্রাণী পাচারেরও করিডর হয়ে উঠছে ?

মালদা, 5 অগস্ট : জাল নোট পাচারের করিডর হিসাবে অনেকদিন ধরেই কুখ্যাত মালদা। এবার কি এই জেলা বন্যপ্রাণী পাচারেরও করিডর হয়ে উঠছে। মালদা থেকে পরপর বিরল প্রজাতির পাখি উদ্ধার হওয়ায় সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করে যাওয়া মানুষজন। যদিও মালদাকে বন্যপ্রাণী পাচারের করিডর হিসাবে মানতে নারাজ বন দফতর।

গত 27 জুলাই, বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে যোগবানী-কলকাতা এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরা থেকে উদ্ধার হয়েছিল 512টি বিরল প্রজাতির পাখি। তার মধ্যে ছিল আলেকজান্দ্রিয়া প্যারাকিট, সানকোর্স প্যারাকিট, প্লাম হেডেড প্যারাকিট ও হিল ময়না।

গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেই পাখিগুলি উদ্ধার করেছিল আরপিএফ। সেদিন ধরা পড়েছিল শেখ সাহিদ নামে এক পাচারকারী। মুখ ঢেকে পাখিগুলিকে পাচার করা হচ্ছিল। কারণ, মুখ ঢাকা অবস্থায় পাখি কোনও আওয়াজ করে না। শেখ সাহিদকে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারে বন দফতর।

100-এর বেশি বিপন্ন প্রজাতির পাখি উদ্ধার
100-এর বেশি বিপন্ন প্রজাতির পাখি উদ্ধার

আরও পড়ুন : বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে 512টি টিয়া পাখি উদ্ধার

সেই ঘটনার জের কাটতে না কাটতেই এদিন রাতে ফের একই ট্রেনের সংরক্ষিত এস-4 কামরা থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও 124টি বিপন্ন প্যারাকিট। তার মধ্যে রয়েছে একটি আলেকজান্দ্রিয়া, কয়েকটি রেড ব্রেস্টেড আর বেশিরভাগ প্লাম হেডেড। এবার মালদা স্টেশনের জিআরপি পাখিগুলিকে উদ্ধার করেছে। তবে এবার কোনও পাচারকারী ধরা পড়েনি। জিআরপির তরফে পাখিগুলিকে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন প্রবীর কুণ্ডু। একের পর এক এই ধরনের ঘটনায় তিনি কিন্তু সর্ষের মধ্যে ভূত দেখতে পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, "মালদা যে বন্যপ্রাণী পাচারের করিডর হয়ে উঠছে তা কিন্তু বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। বারবার একই জিনিস কীভাবে ঘটছে? প্রশাসন সজাগ থাকলে মনে হয় এমনটা হত না। তাই আমার ধারণা, কোথাও সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে রয়েছে। গত সপ্তাহেই 500-এর বেশি বিপন্ন প্রজাতির টিয়া উদ্ধার হয়েছে। এদিন ফের 100-এর বেশি বিপন্ন প্রজাতির পাখি উদ্ধার হয়েছে।’’

মালদা থেকে পরপর বিপন্ন প্রজাতির পাখি উদ্ধার হচ্ছে
মালদা থেকে পরপর বিপন্ন প্রজাতির পাখি উদ্ধার হচ্ছে

তাঁর কথায়, বারবার একই জায়গা দিয়ে এসব পাচারের চেষ্টা চলছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, কোথাও সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে শুধুমাত্র প্রশাসনের উপর নির্ভর করে থাকলে হবে না। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা যদি প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করি, তবে প্রকৃতিও কিন্তু আমাদের ভারসাম্য নষ্ট করবে। পাখি চাষের জমি থেকে পোকা খেয়ে শষ্য রক্ষা করে, সাপও জমি থেকে ব্যাঙ কিংবা পোকামাকড় খেয়ে শষ্য বাঁচায়। কিন্তু সেসব এভাবে পাচার হয়ে গেলে তার প্রভাব শষ্যক্ষেত্রে নিশ্চতভাবে পড়বে।"

মালদা কি বন্যপ্রাণী পাচারের করিডর হয়ে উঠছে ?

আরও পড়ুন : Malda Youth : পাঁচ বছর পর শিকলমুক্ত সেলিম গেল হাসপাতাল

শুধু পাখি নয়, জেলা বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে এই জেলায় বহুমূল্য স্লো লরিস, গেকো, বিপন্ন প্রজাতির ক্যামেলিয়ন, এমনকি প্রচুর সাপও পাচারের সময় ধরা পড়েছে। একাধিকবার উদ্ধার হয়েছে সাপের বিষ। বেশ কিছু পাচারকারীও ধরা পড়েছে।

এতেই প্রশ্ন উঠেছে, এবার কি জাল নোটের সঙ্গে এই জেলা বন্যপ্রাণী পাচারেরও করিডর হয়ে উঠছে?

যদিও সেকথা মানতে রাজি নন বন দফতরের মালদা রেঞ্জের আধিকারিক সুজিতকুমার চট্টোপাধ্যায়। এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "গতকাল পাচারের সময় মালদা টাউন জিআরপি 124টি প্যারাকিট উদ্ধার করে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। এই পাখিগুলি যোগবানী-কলকাতা এক্সপ্রেসে পাচার করা হচ্ছিল। কিছুদিন আগে এই ট্রেন থেকেই একজন পাচারকারী সহ 512টি পাখি উদ্ধার করেছিল আরপিএফ।

আরও পড়ুন : Malda Medical College : সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের আগে মাদার ও চাইল্ড হাব পরিদর্শনে স্বাস্থ্য ভবনের প্রতিনিধিরা

তবে বন্যপ্রাণী পাচারে মালদা করিডর হয়ে উঠেছে বলে মনে করছি না। কারণ, তাহলে মালদাতেই এসব নামানো হত এবং এখান থেকেই সেসব বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হত। বরং মালদায় বেশি চেকিং হয়।’’

তাঁর দাবি, আরপিএফ, জিআরপির সঙ্গে জেলার প্রতিটি থানা বন্যপ্রাণী পাচার রুখতে সক্রিয়। পাচারকারীরা মূলত বর্ধমান কিংবা কলকাতায় বন্যপ্রাণীগুলি নিয়ে যায়। জানা গিয়েছে, 27 জুলাইয়ের মতো গতকালের উদ্ধার করা পাখিগুলি নেপাল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। যোগবানী হয়ে সেগুলি বর্ধমান নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ২৭ তারিখ পাখি সহ ধৃত ব্যক্তি জেরায় এই তথ্য দিয়েছে। সে বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছে। তবে গতকাল পাখি পাচারে কাউকে ধরা যায়নি।

এর আগে মালদা শহরের মীরচক থেকেও বিপন্ন প্রজাতির কিছু পাখি উদ্ধার করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রেও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছে।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.