ETV Bharat / state

NHRC Report : রাজ্যের হিসেবের গরমিল তুলে ধরে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবীর

author img

By

Published : Aug 3, 2021, 11:24 AM IST

ভোট-পরবর্তী হিংসাত্মক ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দল রাজ্যে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে ৷ গতকাল ভার্চুয়াল শুনানিতে প্রশ্ন-প্রতিপ্রশ্ন ওঠে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে ৷ সেখানে বারে বারে রাজ্যের হিসেব আর মানবাধিকার কমিশনের হিসেবে অমিল দেখিয়ে নিরপেক্ষ সংস্থা বা সিবিআই তদন্তের পক্ষে সওয়াল করেন মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী ৷

কলকাতা হাইকোর্ট
কলকাতা হাইকোর্ট

কলকাতা, 3 অগস্ট : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ এতে তাঁর সম্মানহানি হয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ করলেন তাঁর আইনজীবী পার্থ ভৌমিক ৷ অন্যদিকে মানবাধিকার কমিশনের হয়ে আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি (Mahesh Jethmalani) অভিযোগ করেন রাজ্য ধর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করলেও মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে তার প্রমাণ রয়েছে ৷ গতকাল রাজ্যের হিংসাত্মক ঘটনার তদন্তে আসা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দলের (National Human Rights Commission, NHRC) রিপোর্ট নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ভার্চুয়াল শুনানি ছিল ৷ এখানে 5 বিচারপতির বেঞ্চে মানবাধিকার কমিশন ও মামলাকারীর আইনজীবী এই রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্তভার কোনও নিরপেক্ষ সংস্থা বা সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান আদালতে ৷

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আইনজীবীর বক্তব্য

জ্যোতিপ্রিয়র আইনজীবী পার্থ ভৌমিক 5 বিচারপতির বেঞ্চে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) বিশেষ দলের প্রতিনিধিরা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে কোনও কথা না বলেই তাঁকে কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসেবে দাগিয়েছে ৷ তাতে তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয়র সম্মানহানি হয়েছে বলে আদালতে সওয়াল করেন তাঁর আইনজীবী ।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফে আইনজীবীর বক্তব্য

বর্ষীয়ান আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি (Mahesh Jethmalani) জানান, পুলিশের হিসেবে খুন বা খুনের চেষ্টা হয়েছে 29 টি, কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট বলছে খুন হয়েছে 52 টি । রাজ্যের হিসেবে মহিলাদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে 12 টি । রাজ্য বলছে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি ৷ আর এনএইচআরসি-র (NHRC) হিসেবে সংখ্যা প্রায় 79টি ৷ এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাও রয়েছে এবং বহু ক্ষেত্রে এফআইআর (FIR) নেওয়া হয়নি ।

পুলিশের অভিযোগ না-নেওয়া প্রসঙ্গে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় (Justice Indra Prasanna Mukhopadhyay)

যদি থানা অভিযোগ না নেয়, তাহলে অভিযোগকারী এসপি-র (SP) কাছে যেতে পারেন । এসপিও যদি সাহায্য না করেন, তাহলে নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন, জানান বিচারপতি । প্রত্যেক রাজ্যে অপরাধ সংগঠিত হয় ।

হিংসাত্মক ঘটনার প্রমাণ চাইলেন আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি (Mahesh Jethmalani)

রাজ্যের দাবি ছিল, 2-5 মের মধ্যে রাজ্যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটলেও তার পর থেকে তা নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে ৷ এর সমর্থনে মানবাধিকার কমিশনের আইনজাবী 2-5 মে পর্যন্ত অভিযোগের সংখ্যা এবং 5 মের পরে অপরাধের পরিসংখ্যান চান রাজ্যের কাছে ৷ তিনি বলেন, "এই পরিসংখ্যান পেলে, আমাদের ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাস চিহ্নিত করতে সুবিধা হবে ।"

পুলিশের সঙ্গে কি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কথা হয়েছিল ?

রাজ্য দাবি করেছে যে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দল পুলিশের সঙ্গে কথা বলেনি ৷ কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের 8 নম্বর পৃষ্ঠায় দেখা যাচ্ছে যে, মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দল পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলেছে । দলের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন অঞ্চলে থানাতেও গিয়েছিলেন । এ প্রসঙ্গে আইনজীবী মহেশের দাবি, "প্রাথমিকভাবে যা তথ্য প্রমাণ রয়েছে, তার ভিত্তিতেই মামলার তদন্তভার নিরপেক্ষ কোনও সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া যায় ।"

মামলাকারী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালের (Priyanka Tibrewal) হয়ে সওয়াল

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পিঙ্কি আনন্দ (Pinky Anand) বলেন, "রাজ্যের দাবি ছিল এখানে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি । কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে যে 11 টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে । তাই এই মামলা অবিলম্বে নিরপেক্ষ কোনও তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া উচিত ।"

বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য

এমন একটি ঘটনা দেখান যেখানে পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছে । কারণ তাহলে সেটা গুরুতর অভিযোগ । পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছিল বলেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই বিশেষ দল গঠন করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট ।

পুলিশ সুপারদের হয়ে কপিল সিবালের (Kapil Sibal) সওয়াল

রাজ্যের পুলিশ সুপারদের হয়ে কপিল সিবাল জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের 1993 সালের আইন অনুযায়ী অভিযোগ নথিবদ্ধ করার কিছু নিয়ম আছে ৷ এক্ষেত্রে সেইসব নিয়ম মেনে চলা হয়নি । আইনের 12 নম্বর ধারায় বলা হয়েছে মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করতে পারে অথবা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী চলতে পারে । অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ফৌজদারি আদালতের সমতুল্য ক্ষমতা কমিশনের রয়েছে । অভিযোগ না নেওয়া হলে কমিশন সেই পুলিশ আধিকারিকদের ডেকে পাঠাতে পারে । রাজ্যের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক অপবাদ দেওয়া যায় না । নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে তা করতে হয় । এক্ষেত্রে তা করা হয়নি । জাতীয় মানবাধিকার কমিশন দ্বারা সংগৃহীত তথ্য প্রমাণ ফৌজদারি আদালতের সামনে তথ্য প্রমাণ হিসেবে পেশ করা যায় না ৷

আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তিকে না ডেকে, জিজ্ঞাসাবাদ না করে তার সম্পর্কে কোনও বিরূপ মন্তব্য করা যায় না ৷ মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে বিজেপির যোগ আছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি ৷ মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দলের অন্যতম প্রতিনিধি আতিফ রশিদের (Atif Rasheed) প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, "আতিফ রশিদ বিজেপির হয়ে ভোটে লড়েছেন । তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল দেখুন ৷ মাননীয় বিচারপতিরা কি এখনও এই রিপোর্টে ভরসা করবেন ? এখনও এই রিপোর্টে ভরসা করলে, সেটা খুব খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে ৷" বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে তিনি জানান, মাননীয় বিচারপতিরা হয়তো ভাবতেও পারেননি যে, এই ধরনের কমিটি বানানো হবে ।

আদালতের পাল্টা প্রশ্ন কপিল সিবালকে

আপনি কি বলতে চান যে, এই কমিটির রিপোর্ট মনগড়া ? রাজ্যের মনোভাব খুব ঢিলেঢালা ছিল, এফআইআর নেওয়া হয়নি ?

কপিল সিবালের যুক্তি

বিজেপি সদস্যদের নিয়োগ করে এনএইচআরসি (NHRC) কখনওই বলতে পারে না যে, মামলার তদন্তভার সিবিআইকে (CBI) দেওয়া হোক ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.