ETV Bharat / state

Kali Puja 2022: 400 বছর ধরে পূজিত হয়ে আসছেন সোনামুখীর হটনগর মা কালী

author img

By

Published : Oct 22, 2022, 10:09 PM IST

হটনগর কালীর (Hotthnagar Kali Puja) নামকরণ নিয়ে এলাকায় দ্বিমত রয়েছে । কেউ কেউ বলেন, হট যোগে কোন এক যোগী এখানেই সিদ্ধিলাভ করেন । তাই এরূপ নামকরণ । আবার কেউ কেউ বলেন, মা কালী হঠাৎ নগরে এসেছিলেন । তাই হটনগর কালী নামকরণ হয়েছে । সে নাম নিয়ে দ্বিমত থাকলেও কালীপুজোর দিন এখানে হাজার হাজার লোকসমাগম ঘটে ৷ দূরদৃরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন খিচুরি ভোগ খেতে ৷

400 year old Hotthnagar Kali Puja in Bankura
400 year old Hotthnagar Kali Puja in Bankura

বাঁকুড়া, 22 অক্টোবর: জেলার 'কালীক্ষেত্র' হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার প্রাচীন পৌর শহর সোনামুখী । এখানে অসংখ্য কালীপুজো অনুষ্ঠিত হয় । তার মধ্যে অন্যতম হটনগর কালী (Hotthnagar Kali Puja) । সারা বছর এখানে নিত্যপুজো হলেও কার্তিকেয় অমাবস্যায় তিথি মেনে বিশেষ বাৎসরিক পুজো হয় ।

সোনামুখীর অন্যান্য প্রাচীন পুজোগুলির মতো হটনগর কালীকে নিয়েও অনেক লোককথা প্রচলিত আছে । সবচেয়ে জনপ্রিয় লোক কথা হল, সাড়ে চারশো বছর আগে সোনামুখী ছিল জঙ্গলাকীর্ণ । আর তাছাড়া সেই সময়কালে বিনিময় প্রথা চালু ছিল ।

সোনামুখীর তারিণী সূত্রধর নামে এক বৃদ্ধা প্রতিদিন জঙ্গল পথ পেরিয়ে পায়ে হেঁটে মাথায় ঝুড়িতে করে বড়জোড়ার নিরশা গ্রামে চিঁড়ে বিক্রি করতে যেতেন । সেই চিঁড়ে বিক্রি করে পাওয়া ধান নিয়ে তিনি আবারো পায়ে হেঁটেই সোনামুখী ফিরে আসতেন । যাওয়া-আসার পথে পড়ত একটি খাল । বৃদ্ধা তারিণী সূত্রধর বাড়ি ফেরার পথে সেই খালের পাশে খানিক বিশ্রাম নিয়ে সঙ্গে থাকা চিঁড়ে মুড়ি খেতেন । সেখানে প্রায় দিনই লাল পাড় শাড়ি পরা একটি ছোট্ট শ্যামাঙ্গী মেয়ে তাঁর সঙ্গে সোনামুখী আসার জন্য বায়না করত ।

বৃদ্ধা প্রতিদিনই কিছু না-কিছু বলে ওই শিশুটিকে নিয়ে আসা তেকে বিরত থাকতেন । শেষে একদিন সে জেদ ধরে বসলো । বৃদ্ধার সঙ্গে সে সোনামুখী যাবেই যাবে । তখন নিরুপায় তারিণী সূত্রধর তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে সম্মত হলেন । কিছু দূর যাওয়ার পর ওই ছোট্ট মেয়েটি বলে আমি আর হাঁটতে পারছি না । আমাকে কোলে নাও । কিন্তু মাথায় আর কোলে ধানের ঝুড়ি আর বস্তা থাকায় বৃদ্ধা তাঁর অসহায়তার কথা বললে, ওই শ্যামাঙ্গী এক রত্তি মেয়ে তাঁর মাথার ঝুড়িতেই চাপার কথা বলে । নিরুপায় তারিণী সূত্রধর তাই করেন। পরে তিনি বাড়ি ফিরে দেখেন ওই মেয়ে তো নেই। তার বদলে রয়েছে দু'টি পাথর ।

ভয় পেয়ে তিনি সেই পাথর দু'টিকে তুলসীতলায় রেখে দেন । সেদিন রাত্রেই বৃদ্ধা তারিণী সূত্রধর স্বপ্নাদেশ পান, সেই শ্যামাঙ্গী ছোট্ট মেয়েটি তাকে বলছে, "আমার পুজোর ব্যবস্থা কর । পাড়ার আঁকড় গাছের নিচে আমাকে রেখে আয় । আমি মা কালী, তোর ভার বইতে যাতে কোন কষ্ট না হয় তাই এই পাথর রূপে এসেছি ।" ভয় পেয়ে পর দিন সকালে ওই বৃদ্ধা এলাকার মানুষকে সব কথা জানান । সেই সময় ছোঁয়া-ছুঁয়ি আর জাতপাতের ঘটনা এতটাই তীব্র ছিল পুরোহিত পুজো করতে অস্বীকার করেন । এরপর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই পুরোহিত । পরে তিনিও স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো করতে রাজি হন ।

সোনামুখীর হটনগর মা কালী

স্বপ্নাদেশ পেয়ে স্থানীয় জমিদার গিন্নী কাদম্বরী দেবী মন্দির নির্মাণের জন্য এক খণ্ড ও পুজো পরিচালনার জন্য কিছু জমি দেন । তখন থেকেই এই পুজো এলাকার মানুষ পরিচালনা করছেন । বর্তমানে সুদৃশ্য মন্দির তৈরি হয়েছে । কিন্তু প্রাচীণ সেই প্রথা মেনে আজও সূত্রধররাই কেবল ঘট আনার অধিকারী । এই ঘট সারা বছর মন্দিরে রেখে পুজো করা হয় । পরে বছর বাৎসরিক পুজোর সময় সেই ঘট বিসর্জন দিয়ে নতুন ঘট আনা হয় ।

হটনগর কালীর নামকরণ নিয়ে এলাকায় দ্বিমত রয়েছে । কেউ কেউ বলেন, হট যোগে কোন এক যোগী এখানেই সিদ্ধিলাভ করেন । তাই এরূপ নামকরণ । আবার কেউ কেউ বলেন, মা কালী হঠাৎ নগরে এসেছিলেন । তাই হটনগর কালী নামকরণ হয়েছে । স্থানীয়রা জানান, মা কালীর নির্দেশে যে আঁকড় গাছের নিচে পাথর দু'টি রাখা হয়েছিল সেই গাছ আজও আছে । আশ্চর্য্যের বিষয় সেই গাছে কোন কাঁটা নেই । এমনকী ওই গাছের আদি মূলের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি । আর পাথর দু'টি আজও সেই আঁকড় গাছের নিচে রেখে পূজার্চনা করা হয় (400 year old Hotthnagar Kali Puja in Bankura) । তবে আশ্চর্য্যের বিষয় ওই পাথর দু'টির ঋতুভেদে রং পরিবর্তিত হয় । এমনটাই দাবি স্থানীয়দের ।

বর্তমানে নতুন সুসজ্জিত মন্দির তৈরি করে পুজো হয় । এই মন্দির নির্মাণেও অভিনবত্ত্ব রয়েছে । মূল মন্দিরের সামনে রাখা রয়েছে, তারিণী সূত্রধরের মাথায় ধানের ঝুড়িতে চেপে মা আসছেন তাঁর মূর্তি । অন্যদিকে সিদ্ধপুরুষ হট যোগীর মূর্তি । সবার উপরে শিব । এছাড়াও মূল মন্দিরের কুড়ি-পঁচিশ ফুট উপরে রয়েছে একটি পদ্মফুল । যা অনেক দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যায় (Kali Puja 2022) ।

আরও পড়ুন: কন্যাহারা পিতার আর্তিতে সাড়া দিয়েছিলেন মা করুণাময়ী !

বর্তমানে প্রাচীন পরম্পরা মেনে সূত্রধর পরিবারের সদস্য বিপত্তারণ সূত্রধরের ছেলে সুকুমার সূত্রধর মূর্তি তৈরি করেন ৷ বিনোদ ভট্টাচার্য্যের উত্তর পুরুষ গণেশ ভট্টাচার্য্য ও গোপাল ভট্টাচার্য্য এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন । পুজো কমিটির সম্পাদক দেবমাল্য হালদার বলেন, "হটনগর কালীপুজো উপলক্ষ্যে এলাকা উৎসবের চেহারা নেয় । হটনগর কালীকে এখানে গ্রাম্যদেবী হিসেবেই পুজো করা হয়ে থাকে । এ বছর সাত লক্ষ টাকার বাজেট রয়েছে । নানান অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রথা মেনে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার আগের দিন এখানে কয়েক হাজার মানুষকে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হয় ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.