পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

National Teacher : ছাত্রদের স্বপ্ন বাঁচাতে চান এবছরে রাজ্য থেকে একমাত্র জাতীয় শিক্ষক হরিস্বামী

By

Published : Aug 19, 2021, 10:55 PM IST

Updated : Aug 20, 2021, 9:19 PM IST

শোভানগর হাইস্কুল সেই স্কুল, যেখানে বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল জমা দিলে স্কুল ফি কমিয়ে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। এই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাস।

s
s

মালদা, 19 অগস্ট : আগামী 5 সেপ্টেম্বর সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনে জাতীয় শিক্ষক হিসাবে সম্মানিত হতে চলেছেন মালদার শিক্ষক হরিস্বামী দাস। এবছর পশ্চিমবঙ্গ থেকে একমাত্র তিনিই জাতীয় শিক্ষকের সম্মাননা পেতে চলেছেন। সেদিন তাঁকে সম্মাননা প্রদান করবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলার শিক্ষামহলে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে।

দক্ষিণ দিনাজপুরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা হরিস্বামীবাবুর কর্মজীবন শুরু মালদায়। 2001 সালে শোভানগর হাইস্কুলে জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে তিনি কাজে যোগ দেন। 2010 সালে ওই স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক অবসরগ্রহণ করার পর তাঁকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। 2014 সালে এসএসসি-র মাধ্যমে তিনি পাকাপাকিভাবে সেই স্কুলেই প্রধান শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন। এখনও তিনি সেই স্কুলেই রয়েছেন। তাঁর সময়কালে শোভানগর হাইস্কুল বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছে। 2015 সালে রাজ্য শিক্ষা দফতর ও ইউনিসেফের তরফে এই স্কুলকে ব্লকের সেরা নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার দেওয়া হয়। 2018 সালে স্কুলের মুকুটে শিশু মিত্র পুরস্কারের পালক যুক্ত হয়। 2019 সালে রাজ্যের সেরা দুটি স্কুলের মধ্যে এই স্কুল নির্বাচিত হয়। যামিনী রায় পুরস্কার দেওয়া হয় এই স্কুলকে। হরিস্বামীবাবুর উদ্যোগে প্লাস্টিকের কুফল নিয়ে সচেতনতার বার্তা জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা রাজ্যে। বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল জমা দিলে স্কুল ফি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল পড়ুয়াদের। অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল টিম শোভানগর। সেই টিম এখনও কাজ করে যাচ্ছে। তার সুফলও মিলছে। ডুয়ার্সের 26টি স্কুল হরিস্বামীবাবুর দেখানো পথে প্লাস্টিকমুক্ত ডুয়ার্স তৈরি করার কাজ চালাচ্ছে। করোনাকালে যাতে স্কুলের তিন হাজার পড়ুয়া শিক্ষা থেকে দূরে না সরে যায়, তার জন্য হাইব্রিড লার্নিং পদ্ধতি চালু করার চেষ্টা করছেন তিনি। এই পদ্ধতিতে 50 শতাংশ পড়ুয়া স্কুলে আসতে পারবে, বাকিরা বাড়িতে বলে মোবাইলে ক্লাস করবে। যেহেতু স্কুলের সব পড়ুয়ার কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই, সেকারণেই এই ব্যবস্থা। তাছাড়া তাঁরা সমস্ত পাঠ্য বইয়ের কিউ আর কোড স্কুলের ওয়েবসাইটে দিয়েছেন। যাতে করে বই না কিনেও পড়ুয়ারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। তিনি মনে করেন, স্কুলে পঠনপাঠন চালু হওয়া খুব জরুরি। স্কুলে শিক্ষা গ্রহণের কোনও বিকল্প নেই।

জাতীয় শিক্ষকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার ৷

হরিস্বামীবাবু বলেন, “আমার স্কুলটি গঙ্গা ভাঙন এলাকায়। আগে যে স্কুল গঙ্গা থেকে 10 কিলোমিটার দূরত্বে ছিল, এখন সেই ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছে দেড় কিলোমিটার। আমাদের স্কুলের পড়ুয়াদের 70 শতাংশই গঙ্গা ভাঙনের শিকার। স্কুল তাদের জীবনের আশা-ভরসার জায়গা। এলাকার মেয়েদের সুরক্ষাও বড় বিষয়। তারা স্কুলের তরফে সেই ভরসা পেয়েছে। এবার আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আমাকে পালন করতেই হবে। ভাঙনপ্রবণ এলাকার ছেলেমেয়েরা এখন চাকরির স্বপ্ন দেখে। তাদের সেই স্বপ্ন আরও বাড়িয়ে তুলতে হবে। প্রতিটি ছেলেমেয়ে যাতে কাজের উদ্যোগ নেয়, তার চেষ্টা করতেই হবে।”

আরও পড়ুন: "শিক্ষারত্ন" সম্মান পুরুলিয়ার 5 শিক্ষক ও অধ্যাপককে

গতকাল বিকেলেই হরিস্বামীবাবুকে বিকাশ ভবন থেকে ফোন করে জানানো হয়, এবার তিনি জাতীয় শিক্ষক সম্মাননা পেতে চলেছেন। দেশের 44 জন শিক্ষককে এই সম্মাননা প্রদান করা হবে। রাজ্য থেকে একমাত্র তিনিই এই সম্মান পেতে চলেছেন। কেন্দ্রের তরফেও তাঁকে মেইল করে সেই বার্তা দেওয়া হয়।

Last Updated : Aug 20, 2021, 9:19 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details