1947 সালে স্বাধীন হয়েছে ভারত ৷ 1950 সালে ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় সাধারণতন্ত্র ৷ চালু হয় সংবিধান ৷ যা দেশের সকলকে সমান অধিকার দিয়েছে ৷ ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকলকে ভোটাধিকার দিয়েছে ৷ তার পর থেকে নিয়মিত নির্বাচন হয়েছে ৷ ভারত সরকারও মানবাধিকার রক্ষায় সবক্ষেত্রেই বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করেছে ৷ কিন্তু ভারত গরিব দেশ হিসেবেই থেকে গিয়েছে৷ সান্ত্বনা হিসেবে জুটেছে উন্নয়নশীল দেশের তকমা ৷ স্বাধীনতার 76 বছর পরও দেশের মাথাপিছু আয় 2600 মার্কিন ডলার ৷
অন্য অনেক দেশকে প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দারিদ্রতা ও অনাহারের সমস্যার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে ৷ তাছাড়া বৈষম্যের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক ৷ এই অবস্থায় রাষ্ট্রসংঘ সারা বিশ্ব থেকে দারিদ্রতা ও অনাহার দূর করতে পদক্ষেপ করে ৷ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে বেশ কিছু মাপকাঠি তৈরি করা হয় ৷ তার মধ্যে ছিল - ভালো স্বাস্থ্য, পুষ্টি, উচ্চশিক্ষা, স্বচ্ছ জলবায়ু এবং লিঙ্গসাম্য ও মানুষের সম্মান বৃদ্ধি করা ৷
বিশ্বের প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে থাকা দারিদ্রতা ও মানুষকে শোষণ বৈষম্য বাড়িয়ে তুলছে ৷ এই পরিস্থিতিকে শেষ করতেই রাষ্ট্রসংঘ পদক্ষেপ করেছিল ৷ উদ্দেশ্য ছিল, উপরে উল্লেখিত মাপকাঠিগুলি পূরণ করা ৷ তার সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশ-সহ পশ্চিম থেকে পূর্বে বিশ্বের সব দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পানীয় জল ও নিকাশীর ব্যবস্থা করা ৷ এই দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের লক্ষ্য বা সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট (এসডিজি)-এ ভারত কাজ করছে ৷ কিন্তু এখনও প্রথম সারিতে পৌঁছাতে পারেনি ভারত ৷ দুর্নীতি ও রাজনীতি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে দাবি অর্থনীতিবিদদের ৷ ভারতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ক্রমশ খরচবহুল বোঝা দাঁড়াচ্ছে ৷ একই সঙ্গে এর ফলে কোনও হিসেবনিকেশ ছাড়াই শেষ হয়ে যাচ্ছে দেশের সম্পদ ৷
রাষ্ট্রসংঘ সদস্য দেশগুলিকে নিয়ে প্রতিবারই বৈঠক করে শান্তি ও সুবিচারের উপর জোর দেয় ৷ এর ফলেই 2030 এজেন্ডা ফর সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট-এর সূচনা করে রাষ্ট্রসংঘ ৷ 2015 সালের 25-27 সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে হওয়া ইউএন সামিটে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত হয় ৷
এই কাজের জন্য 17টি মাপকাঠি রাখা হয় ৷ সেগুলি হল - 1. দারিদ্রতা দূরীকরণ, 2. অনাহার দূরীকরণ, 3. ভালো স্বাস্থ্য় ও ভালো জীবন, 4. সঠিক গুণমানের শিক্ষা, 5. লিঙ্গসাম্য, 6. পরিষ্কার জল ও নিকাশি ব্যবস্থা, 7. সহজলভ্য ও দূষণহীন বিদ্যুৎ, 8. ঠিকমতো কাজ ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, 9. শিল্প, আবিষ্কার ও পরিকাঠামো, 10. অসাম্য দূর করা, 11. সমাজ ও শহরে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা, 12. ক্রয় ও প্রস্তুতিকরণে দায়িত্ববোধ, 13. জলবায়ু রক্ষায় পদক্ষেপ, 14. জলের নিচে জীবন, 15. ভূমির উপর জীবন, 16. শান্তি স্থাপন ও শক্তিশালী বিচারব্যবস্থা, 17. লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অংশীদারিত্ব ৷
এর লক্ষ্য স্বচ্ছ ও সবুজ পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে একটা আদর্শ সমাজ তৈরি করা ৷ যেখানে প্রতিটি মানুষের অবদান থাকবে ৷ আর প্রত্যেকেই অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবেন ৷ যেখানে কোনও বৈষম্য থাকবে না, পরিবেশরক্ষাও হবে ৷ তাছাড়া রাষ্ট্রসংঘ দারিদ্রতা দূরীকরণে বদ্ধপরিকর ৷ মানবাধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘোষণাপত্রেও সেই বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে ৷ পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, যুবসমাজ, বিশেষভাবে সক্ষম, বয়স্ক, শরণার্থী, পরিযায়ী-সহ সকলের দিকেই নজর দেওয়ার বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে ৷
এর সঙ্গে আরও 169টি লক্ষ্য যুক্ত করা হয়েছিল ৷ যা দেখিয়েছে কোন পথে সমাধান হবে ৷ যেমন, এসডিজি-র 16 নম্বর পয়েন্টে থাকা শান্তি স্থাপন ও শক্তিশালী বিচারব্যবস্থায় খামতি প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে ৷ এই সমস্যার দূরীকরণে 10টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৷ সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - হিংসা কমানো ৷ শিশুদের হেনস্তা, শোষণ, পাচার ও হিংসা থেকে রক্ষা করা ৷ আইনের শাসন প্রচার এবং ন্যায়বিচারের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা ৷ সংগঠিত অপরাধ এবং অবৈধ আর্থিক ও অস্ত্র পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা ৷ দুর্নীতি ও ঘুষের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম করা ৷ সকলস্তরে কার্যকর, দায়বদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ।
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে ৷ কিন্তু তা প্রয়োগ করতে গিয়ে তাদের সমস্যার সম্মুখীনও হতে হচ্ছে ৷ এই নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট হয় যে এসডিজি-তে কোন দেশের কী অবস্থা ৷ এটা আগের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের মতো নয় ৷ এখনে উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে শিল্পসমৃদ্ধ দেশগুলিকেও যুক্ত করা হয়েছে ৷ 2030 সালের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছানোর বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে ৷ সমস্ত সদস্য় দেশও এতে সহমত হয়েছে ৷ তার পর প্রায় 60 শতাংশ সময় কেটে গিয়েছে ৷ কিন্তু পরিবর্তন সেভাবে হয়নি ৷ এসডিজি ইনডেক্সের শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানি, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, ফ্রান্স, স্লোভেনিয়া ও এস্তোনিয়া ৷ ভারতের স্থান 120তম স্থানে ৷ সাফল্যের হার 60.07 শতাংশ ৷ নীতি আয়োগের মতো পরিকল্পনাকারী সংস্থা থাকা সত্ত্বেও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারত সাফল্যে পেতে সমস্যার মধ্যে পড়েছে ৷
নীতি আয়োগ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি প্রতিযোগিতামূলক অথচ সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গে এসডিজি ইনডেক্সের মডেলগুলি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য তত্ত্বাবধান করে কাজ করে । সম্প্রতি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই লক্ষ্যে কাজের অগ্রগতি দেখা গিয়েছে ৷ ভারতে এসডিজি ইনডেক্স অনুযায়ী পরপর তিনবারের জন্য এগিয়ে রয়েছে কেরালা ৷ তাদের সংগ্রহে রয়েছে 75 পয়েন্ট ৷ তার পরই রয়েছে হিমাচল প্রদেশ ও তামিলনাড়ু ৷ তাদের সংগৃহীত পয়েন্ট 72 ।
এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘের দেওয়া মাপকাঠি অনুযায়ী কাজ করে ভারতের এসডিজি ইনডেক্স ৷ রাষ্ট্রসংঘের বেঁধে দেওয়া 17টি মাপকাঠির নিরিখেই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে নম্বর দেওয়া হয় ৷ এই কারণে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে মোট চারটি গ্রুপ করা হয়েছে ৷ সেগুলি হল - অ্যাসপিরেন্ট (0-49), পারফর্মার (50-64), ফ্রন্ট রানার (65-99), এবং অ্যাচিভার (100) । এই ইনডেক্স অনুযায়ী, কেরালা, তামিলনাড়ু ও হিমাচল প্রদেশ শীর্ষস্থানে রয়েছে ৷ আবার অসম, ঝাড়খণ্ড ও বিহারের পারফরম্যান্স সবচেয়ে খারাপ ৷
আরও পড়ুন: