হায়দরাবাদ, 30 মার্চ: একটানা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সকলের ৷ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা 40 ডিগ্রি ছুঁতে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস ৷ অত্যধিক গরমের সঙ্গে শরীর নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না। সেই কারণেই একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা এড়িয়ে যাচ্ছেন না চিকিৎসকরা ৷ অসহ্য গরমে শরীর সুস্থ রাখতে কী করা উচিত, পরামর্শ দিলেন কিমস হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট তথা চিকিৎসক প্রবীণ কুমার কুলকার্নি ৷
তিনি জানিয়েছেন এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব ৷ পর্যাপ্ত জল পান করা, শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ এবং যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করলেই গ্রীষ্মকালীন স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি কাটিয়ে ওঠা যায় ৷ বিশেষত এপ্রিল ও মে মাসে এবং জুনের প্রথমার্ধে গরমের তীব্রতা বেশি হয় ৷ যে কারণে প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী ৷
সাধারণ শারীরিক সমস্যা
চিকিৎসক জানিয়েছেন, মূলত, এই সময় কমন বেশ কিছু সমস্যা দেখা যায় ৷ তিনি বলেন, "রোদের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে শরীরের তাপমাত্রাও বাড়ে ৷ হতে পারে ডিহাইড্রেশন ৷ এছাড়াও হিট ক্র্যাম্প, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ, ডায়ারিয়া, হার্টের সমস্যা, ব্লাড প্রেসারের ওঠানামা (বিপি), কিডনিতে পাথর, মূত্রনালীর সমস্যা এবং হিট ব়্যাশ হতে পারে ৷"
কিডনিতে পাথরের সমস্যা
তিনি আরও বলেন, "গরমের সময়ে কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যা বেশি দেখা যায় ৷ তার কারণ অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করা ৷ অন্যদিকে আরও একটা বড় কারণ আদ্রর্তা কম থাকার কারণে শরীরে জলের পরিমাণ কমে যায় ৷ অন্যদিকে আমাদের মাসলের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ দরকার ৷ ডিহাইড্রেশনের কারণে মাসল ক্র্যাম্পস বেশি হয় ৷ অন্যদিকে, মাসলে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন না পৌঁছয় তাহলে শরীরে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় যা কিডনির উপর প্রভাব ফেলে ৷ এই সমস্যা আরও গুরুতর হতে পারে যাঁদের ইতিমধ্যেই কিডনির সমস্যা রয়েছে ৷ কিছু ক্ষেত্রে, ব়্যাবডোমায়োলাইসিস ঘটতে পারে এবং কিডনি ফেল হতে পারে ৷ এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে জলের কারণে ডায়রিয়া হলেও কিডনি ফেল হতে পারে ৷"
মাথা ব্যথা...মানসিক উদ্বেগ বৃদ্ধি
চিকিৎসক প্রবীণ কুমার কুলকার্নি জানান, যাঁরা প্রেসারের ওষুধ খান নিয়মিত, তাঁদের এই সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত ৷ এই সময়ে মাথার যন্ত্রণা আগাম শরীর অসুস্থ হওয়ার সংকেত দিতে পারে ৷ যদি মাথা যন্ত্রণা বা মাথা ব্যথার সমস্যা দ্রুত না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ৷ এই সময়ে নানারকম মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে ৷ খিটখিটে মেজাজ, অলসতা, নিদ্রাহীন রাত, উদ্যমতার অভাব দেখা দিতে পারে ৷
ঠাণ্ডা পানীয় এড়িয়ে চলুন ৷ অতিরিক্ত শারীরিক কসরত একদম নয়
সাধারণত, গরমের সময়ে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানীয় বা অন্যান্য ঠাণ্ডা খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় ৷ আবার রোদ থেকে এসেই ঠাণ্ডা জল খাওয়া, মাথায়-পায়ে ঠাণ্ডা জল দেওয়া বা স্নান করার প্রবণতা কম-বেশি অনেকের মধ্যেই দেখা যায় ৷ কিন্তু এর ফলে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে ৷ যদি প্রখর রোদ থেকে এসেই ঠাণ্ডা জল ব্যবহার করেন, তাহলে রক্তনালী বা ব্লাড ভেসেল সংকুচিত হয়ে যায় ৷ যে কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক ৷ তাই বাইরে থেকে এলে সাধারণ তাপমাত্রায় থাকা জল পান করা উচিত ৷ পাশাপাশি, ঠাণ্ডা জলেও স্নান করা উচিত নয় ৷ শারীরিক কসরত করলে অবশ্যই জল পর্যাপ্ত পরিমাণ পান করা উচিত ৷ এই সময়ে হালকা এক্সাসাইজ করাই ভালো ৷
কোন কোন সাবধানতা অবশ্যই মেনে চলা উচিত
- যথেষ্ট পরিমাণে জল পান করা উচিত
- অতিরিক্ত রোদে বেশি না বেড়ানো কিংবা ঠাণ্ডা জায়গায় থাকা উচিত
- তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত
- ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রাখুন ডায়েটে
- বাটার মিল্ক বা ওআরএস সঙ্গে রাখুন
- পোশাকে নির্বাচনে পাতলা সুতির কাপড় ব্যবহার করুন
- রোদে ঘোরাঘুরির কাজ করলে মাঝেমধ্যে বিরতি নিন
- খুব ভালো হয় যদি রোদে কম বেরোতে হয়
- প্রবীণ ব্যক্তি বা শিশুদের রোদে বেরোতে দেবেন না
- গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়, তাই বুঝে রান্না করুন
- যতটা সম্ভব তাজা ফল ও খাবার গ্রহণ করুন
আরও পড়ুন
1. শরীরে বাসা বেঁধেছে টাইপ 2 ডায়াবেটিস, অ্যালঝেইমারের আশঙ্কা গবেষকদের
2. খিঁচুনি বা মৃগী আক্রান্তের মুখে চামচ নয়, সচেতনতার পথ দেখালেন বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট
3. অল্প বয়সিদের মধ্যে বাড়ছে নির্দিষ্টি কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি