ETV Bharat / health

খিঁচুনি বা মৃগী আক্রান্তের মুখে চামচ নয়, সচেতনতার পথ দেখালেন বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট - Epilepsy Awareness Day

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 26, 2024, 7:45 AM IST

Epilepsy Awareness Day: আশাপাশে অনেক সময় শোনা যায় বা দেখা যায়, অমুক ব্যক্তি মৃগী রোগে আক্রান্ত ৷ তমুকের মাঝেমধ্যেই খিঁচুনি হয় ৷ এমন হলে যেমন মুখের মধ্যে চামচ দেওয়ার মতো ঘটনা দেখা যায় ৷ কিন্তু এই রোগ কী, কেন হয়, আদৌ সারে কি না, সেই নিয়ে সঠিক ধারণা অনেকেরই নেই ৷ এই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করলেন বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট তথা চিকিৎসক অরিন্দম ঘোষ ৷

Epilepsy Fighter
খিঁচুনি বা মৃগী রোগ

হায়দরাবাদ, 26 মার্চ: বাসে-ট্রেনে রাস্তাঘাটে আচমকাই কোনও ব্যক্তিকে দেখলেন খিঁচ (Epileptic fits) ধরে যেতে ৷ অনেকে আবার একে মৃগী রোগও বলেন ৷ অনেকক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সেই ব্যক্তিকে কেউ জুতো শোকান আবার কেউ চামড়া শোকান ৷ আদৌ কী সেটা বিজ্ঞানসম্মত? আসলে মৃগী রোগ কী, কেন হয়, কাদের হয় ? এই নিয়ে সঠিক কোনও ধারণা অনেকেরই নেই ৷ ফলে দরকার সচেতনতা বাড়ানো ৷ ক্যালেন্ডারের পাতায় 26 মার্চ, পার্পল ডে অফ এপিলেপসি পালন করা হয় ৷ এই দিনে বিশেষ এই রোগ নিয়ে সচেতনতার বার্তা দিলেন নিউরোলজিস্ট তথা চিকিৎসক অরিন্দম ঘোষ ৷

প্রথমেই জানা যাক মৃগী রোগ নিয়ে সমাজে কী গুজব বা সাধারণ মানুষের মনে কোন ধারণা বদ্ধ হয়ে রয়েছে -

নিউরোলজিস্ট অরিন্দম ঘোষ জানান, কোনও ব্যক্তির খিঁচুনি হলে নানা লোকে নানা কথা বলেন ৷ অনেক সময় ভুল গুজবও রটে যায় ৷ যেমন-

1.সেই ব্যক্তির উপর কোনও অতৃপ্ত আত্মা ভর করেছে বা কোনও সুপারন্যাচরাল পাওয়ারের জন্য এমন হচ্ছে ৷

2. এটা এক ধরনের সংক্রমণ, যা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যেতে পারে ৷

3. মৃগী রোগ জন্মগত ৷ এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্তানও জন্ম থেকে মৃগী রোগে ভুগতে পারে ৷

4. মৃগী রোগ বা এপিলেপসি কখনও সারে না ৷

5. কোনও ব্যক্তির খিঁচুনি হলে, রোগীর দাঁতের ফাঁকে কোনও বস্তু রাখা উচিত, এই ধরনের নানা ভুল ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা যায় ৷

Epilepsy Fighter
মৃগী আক্রান্তের মুখে চামচ নয়

প্রঃ স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে এই মৃগী রোগ বা এপিলেপসি কী ?

উঃ এপিলেপসি মস্তিষ্কের একধরনের সমস্যা ৷ যাকে সহজ ভাষায় খিঁচুনিও বলা যায় ৷ বারবার খিঁচ ধরাকেই মৃগী রোগ বা এপিলেপসি বলা হয় ৷ এই রোগ সাধারণ ৷ এপিলেপসি ফাউন্ডেশন অনুযায়ী 26 জনের মধ্যে 1 জন এই রোগে আক্রান্ত ৷

প্রঃ কারা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন?

উঃ যে কোনও বয়সের যে কোন ব্যক্তি এই রোগের শিকার হতে পারেন ৷ এর মধ্যে যাঁদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাঁরা হলেন

1. কিশোর-কিশোরী ও বৃদ্ধ ব্যক্তি

2. যাঁদের পরিবারে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা হয়েছে

3. যদি কেউ মাথায় আঘাত পেয়ে থাকেন

4. যাঁদের স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে

5. যাঁদের মস্তিষ্কে কোনও রকম সংক্রমণ ধরা পড়েছে

6. যাঁদের সঠিক সময়ে মস্তিষ্ক বা ব্রেন সঠিকভাবে বিকশিত হয়নি

আসলে মৃগী রোগ বা খিঁচুনি রোগকে পরিবারগত হতে হবে এমন কোনও বিষয় নেই ৷ শতাংশের হিসাবে বললে 30 থেকে 40 শতাংশ ব্যক্তির এপিলেপসি হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস থাকতে পারে ৷

প্রঃ এই রোগ কখন হতে পারে ? একবার কেউ আক্রান্ত হলে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেন কী?

উঃ মৃগী রোগ বা খিঁচুনি যে কোনও মুহূর্তে হতে পারে ৷ তার পিছনে কারণও থাকে ৷ আপনাকে হয়তো চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়েছেন, কিন্তু আপনি সেটা খেতে ভুলে গেলেন, অতিরিক্ত চিন্তা, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা, সংক্রমণ, অ্যালকোহল বা ড্রাগের ব্যবহার, বিশেষ কিছু খাবার খাওয়া যার মধ্যে অতিরিক্ত ক্যাফাইন জাতীয় পানীয়ও রয়েছে ৷

মৃগী রোগে কেউ আক্রান্ত হলে, এটা বলা যায় না সম্পূর্ণ সেরে যাবে ৷ তবে অনেক সময় দেখা যায়, অনেক রোগীর ক্ষেত্রে এমন হয়েছে যে দীর্ঘ সময় ধরে প্রপার ট্রিটমেন্টের ফলে বারবার খিঁচুনি আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ বছরের পর বছর চিকিৎসকের নিয়ম সঠিকভাবে মেনে চললে একজন মৃগী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ভালো থাকতে পারেন ৷

প্রঃ ওষুধ ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে মৃগীরোগের চিকিৎসা কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে?

উঃ এপিলেপসির চিকিৎসা বা মৃগী রোগের চিকিৎসা হয়ে থাকে প্রধানত ওষুধের দ্বারা ৷ যার নাম অ্যান্টি-এপিলেপটিক ড্রাগ (anti epileptic drugs) বা এইডি ৷ বিগত 60-70 বছর ধরে অনেক অ্যান্টি-এপিলেপটিক ড্রাগ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসেছে ৷ এদের বিভিন্ন ধরনের মেকানিজম অফ অ্যাকশনের দ্বারা খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে ৷

মূলত, নতুন এই যে ওষুধগুলি এসেছে, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম ৷ আর একটা বিষয় হল 60 থেকে 70 শতাংশ মৃগী রোগীকে একটি ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব ৷ আরও 20 শতাংশর একাধিক ওষুধ দিয়েও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব ৷ 10 শতাংশর অত্যাধুনিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে ৷ যেমন-এপিলেপসি সার্জারি বা কিটোজেনিক ডায়েট-সহ অনান্য চিকিৎসা পদ্ধতি ৷ পাশাপাশি সঠিক রোগ নির্ণয়ের নতুন পদ্ধতিও এই রোগ নিরাময়ে সাহায্য করছে ৷ ওয়েরেবল ফর সিজার মনিটরিং, সিজার ডায়েরি অ্যাপস, অনলাইন পেশেন্ট এডুকেশন প্রোগ্রাম, ইমপ্লান্টযোগ্য চিকিত্সা ডিভাইস-সহ বিভিন্ন প্রযুক্তি মৃগীরোগের কার্যকর চিকিত্সাকে নতুন পথের সন্ধান দেখিয়েছে ৷

প্রঃ একজন মৃগী রোগী বা এপিলেপসিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় ?

উঃ একাধিক বাধার সম্মুখীন হতে হয় ৷ শুধু মাত্র যে ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত তিনিই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন না, তার পরিবারও একই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন ৷ যেমন

  • রোগীর বিষণ্নতা আসতে পারে, উদ্বেগ হতে পারে ৷ আবার অবসেশন বা আক্রমনাত্মক মনোভাবও আসতে পারে ৷ এমনকী, মৃগীরোগের জন্য যে ওষুধ রোগী খাচ্ছেন তার থেকেই হতে পারে ৷
  • হঠাৎ করে খিঁচুনি হওয়ার কারণে এই সব ব্যক্তি আঘাত বেশি পান ৷ যার ফলে হাত-পা ভাঙা, মাথায় আঘাত ইত্যাদি নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় ৷
  • বেশ কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হয় ৷ যেমন- সাঁতার কাটা, সার্ফিং, ড্রাইভিং বা কনট্যাক্ট স্পোর্টস (বক্সিং বা মুষ্টিযুদ্ধ, রেসলিং বা কুস্তি, রাগবি) অর্থাৎ যে খেলাধূলোর ক্ষেত্রে চোট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে ৷
  • এখানেই শেষ নয়, দেশের এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে একজন মৃগী রোগী ও তাঁর পরিবারকে সামাজিক কিছু বাধারও সম্মুখীনও হতে হয় ৷ যার মধ্যে বহিষ্কার বা একঘরে করে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় ৷

প্রঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আচমকা কোনও ব্যক্তির খিঁচুনি হলে কী করণীয় ?

উঃ 1. প্রথমেই যেটা করা উচিত, সেটা প্যানিক না হওয়া ৷ কোনওভাবেই যে ব্যক্তির খিঁচুনি শুরু হয়েছে তা জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা করা উচিত নয় ৷ বরং সেই ব্যক্তিকে ধরে আস্তে করে শুয়ে দেওয়া উচিত ৷

2. মাথার নীচে একটি বালিশ বা কুশন রাখুন ৷ যদি হাতের কাছে বালিশ বা কুশন না থাকে তাহলে নিজের হাতটা রাখুন রোগীর মাথার নীচে ৷ পাশাপাশি রোগীকে একপাশে ফিরিয়ে দিন ৷

3. শরীরে কোনও শক্ত বন্ধনী বা টাইট পোশাক হলে সেটা খুলে ফেলুন ৷ যাতে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কোনও কষ্ট না হয়৷

4. ভুলেও রোগীর মুখে বা দাঁতের ফাঁকে কোনও রকম চামচ বা ব্রাশ রাখবেন না ৷

আরও পড়ুন

1. যদি বন্ধু হও... বয়ঃসন্ধিতে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব নয়, আসুন মনের কাছাকাছি

2. বায়ু দূষণ থেকে ফুসফুস-হার্টকে নিরাপদ রাখতে ডায়েটে রাখুন এই খাবারগুলি

3. খালি পেটে পান করুন তুলসীর জল, উপকারিতা জানলে চমকে যাবেন

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.