ETV Bharat / state

SP Backs Kaliaganj Cops: পুলিশের কার্তুজের খোল উদ্ধার, কালিয়াগঞ্জে যুবকের মৃত্যুতে গুলি চালানোর অভিযোগ এখনই মানতে নারাজ এসপি

author img

By

Published : Apr 27, 2023, 2:15 PM IST

Updated : Apr 27, 2023, 5:11 PM IST

কালিয়াগঞ্জে পুলিশের গুলিতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগের মধ্যেই পুলিশের কার্তুজের খোল উদ্ধার করেছেন গ্রামবাসীরা ৷ যদিও এই অভিযোগ এখনই মানতে নারাজ পুলিশ সুপার ৷

bullet recovered
কালিয়াগঞ্জে গুলি চালানোর অভিযোগ মানতে নারাজ এসপি

কালিয়াগঞ্জে যুবকের মৃত্যুতে গুলি চালানোর অভিযোগ এখনই মানতে নারাজ এসপি

কালিয়াগঞ্জ, 27 এপ্রিল: কালিয়াগঞ্জে যুবকের মৃত্যুতে পুলিশের গুলি চালানোর অভিযোগ এখনই মানতে নারাজ রায়গঞ্জের পুলিশ জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতার ৷ মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পরেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে জানান তিনি ৷ এ দিকে, এরই মধ্যে পুলিশের কার্তুজের খোল উদ্ধার করেছেন গ্রামবাসীরা ৷

আনন্দের রেশ মুহূর্তে বদলে গিয়েছে বিষাদে ৷ গত পরশু গ্রামে বিয়ে ছিল ৷ সেই আনন্দেই মাতোয়ারা ছিল গোটা গ্রাম ৷ এর মধ্যেই কালিয়াগঞ্জ থানায় আগুন জ্বলে ৷ আক্রান্ত হয় পুলিশ ৷ জানা যাচ্ছে, সে দিন পুলিশের একটি টিয়ার গ্যাস গান খোয়া যায় ৷ সেই গান উদ্ধারেই বুধবার মাঝরাতে কালিয়াগঞ্জের রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদগাঁও গ্রামে হানা দেয় পুলিশ ৷ ধরপাকড় শুরু হয় ৷ অভিযোগ, গ্রামবাসীদের পুলিশ বেধড়ক মারধরও করে ৷ একাধিক গ্রামবাসীকে গাড়িতে তোলা হয় ৷ তাতে বাধা দিতে গেলে মৃত্যুঞ্জয় বর্মন নামে 33 বছরের এক যুবককে পুলিশ খুব কাছ থেকে গুলি করে বলে অভিযোগ ৷ পুলিশের কার্তুজের খোল ইতিমধ্যে উদ্ধার করেছেন গ্রামবাসীরা ৷ যদিও রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার অভিযোগ স্বীকার করতে নারাজ ৷

জনৈক গ্রামবাসী মহেন্দ্র বর্মন জানিয়েছেন, গতকাল গভীর রাতে পুলিশ তাঁদের এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিষ্ণু বর্মনকে ধরতে আসে ৷ সেই সময় বিষ্ণু বাড়িতে ছিল না ৷ পুলিশ বিষ্ণুর বৃদ্ধ বাবা আর জামাইকে মারতে মারতে গাড়িতে তোলে ৷ ওদের বাড়ির মহিলাদের চিৎকারে গ্রামের সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন ৷ সবাই ঘর থেকে বেরিয়েই দেখেন গ্রামে প্রচুর পুলিশ ৷ কী হয়েছে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ সবাইকে মারধর করে বলে অভিযোগ ৷ আরও অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত বাড়ির গেটের সামনে পুলিশ মৃত্যুঞ্জয়কে লক্ষ্য করে দুটো গুলি ছোড়ে ৷

মৃত্যুঞ্জয় শিলিগুড়ির নির্মাণ সংস্থার ম্যানেজার ৷ ভাইপোর বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি ৷ তিনি নাকি শুধু পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, কী কারণে তারা বিষ্ণুকে খুঁজছে ৷ গুলি করার পরই পুলিশ গ্রাম থেকে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওই গ্রামবাসীর ৷ স্থানীয়রাই মৃত্যুঞ্জয়কে কালিয়াগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ তবে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ৷

বিষ্ণু বর্মনের জামাই সুব্রত বর্মন বলেছেন, "রাত দুটো নাগাদ পুলিশ প্রথমে জানালায় টোকা দেয় ৷ প্রথমে আমি জিজ্ঞেস করি, তারা কে ৷ পুলিশ শুনে দরজা খুলতেই প্রশ্ন, বিষ্ণু বর্মন কোথায় ? আমি জানাই, তিনি অন্য একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছেন ৷ পুলিশ আমার কথা বিশ্বাস করেনি ৷ এরপর পুলিশ আমাকে আর আমার শ্বশুরমশাইকে হেঁচড়ে গাড়িতে নিয়ে যেতে শুরু করে ৷ শেষ পর্যন্ত শাশুড়ির বাধায় পুলিশ আমাকে ছেড়ে দেয় ৷ তবে দাদুকে নিয়ে চলে যায় ৷ মৃত্যুঞ্জয় শুধু জিজ্ঞেস করেছিল, দাদুকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷ প্রশ্ন শুনেই পিস্তল তাক করে পুলিশ ৷ ও সরে আসে ৷ এরপরেই পুলিশ হঠাৎ দৌড়োদৌড়ি শুরু করে ৷ হঠাৎ গুলির আওয়াজ পাই ৷ দু'রাউন্ড গুলি চালিয়েছে পুলিশ ৷ সেই গুলিতেই মৃত্যুঞ্জয় মারা গিয়েছে ৷"

কথা বলার মতো অবস্থায় নেই মৃত্যুঞ্জয়ের মা ৷ তিনি শুধু বলেন, গতকাল রাতে তাঁরা আত্মীয়ের বাড়িতেই শুয়ে ছিলেন ৷ পুলিশ তাঁর নতুন নাতজামাই আর ভাসুরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ৷ ছেলে জ্যেঠুকে বাঁচাতে গিয়েছিল ৷ তখনই পুলিশ তাঁকে গুলি করে বলে অভিযোগ তাঁর ৷

মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা রবীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, গতকাল শুধু পুলিশ নয়, বাইরের লোকজনও গ্রামে এসেছিল ৷ প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, বোধহয় বিএসএফ গ্রামে এসেছে ৷ সীমান্তবর্তী গ্রাম হওয়ায় মাঝেমধ্যেই বিএসএফ গ্রামে আসে ৷ খানিক বাদে তিনি শুনতে পান, পুলিশ বিষ্ণুকে ধরতে এসেছে ৷ ওকে না পেয়ে পুলিশ বিষ্ণুর বাবা আর জামাইকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ৷ গ্রামের কেউ জামাইকে নিয়ে যেতে দিতে চাইছিল না ৷ তাঁর ছেলে পুলিশের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিল ৷

মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা আরও বলেন, "আমরা ধারণাই করতে পারিনি, ওকে গুলি করা হবে ৷ আমি হৃদরোগী ৷ প্রথমে আমাকে কেউ কিছু না জানালেও পরে জানতে পারি, আমার ছেলে মারা গিয়েছে ৷ পুলিশ এখন ডাকাতের দলে পরিণত হয়েছে ৷ পশ্চিমবঙ্গের সরকার এখন ডাকাতি করছে ৷"

পুলিশের এই ভূমিকা মেনে নিতে পারছেন না রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য কৃষ্ণা বর্মন ৷ তিনি আবার মৃত্যুঞ্জয়দেরই আত্মীয় ৷ তিনি বলেন, "মৃত্যুঞ্জয় আমার দেওর ৷ গতকাল রাতে পুলিশ গ্রামে আসে ৷ আমরা ঘুম থেকে উঠে দেখি, গ্রামে পুলিশ ৷ পুলিশ পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য বিষ্ণু বর্মনের বাড়িতে ঢোকে ৷ তিনি আমার ভাসুর ৷ তাঁর বাড়ি থেকে নতুন জামাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছিল ৷ আমরা সবাই পুলিশকে জিজ্ঞেস করি, জামাইকে কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ? এরপরেই পুলিশ মৃত্যুঞ্জয়কে গুলি করে ৷"

এই মুহূর্তে গোটা চাঁদগাঁও গ্রাম থমথমে ৷ গ্রামে চরম উত্তেজনা রয়েছে ৷ গতকাল পুলিশের গুলি করা কার্তুজের খোল উদ্ধার করেছেন গ্রামবাসীরা ৷ আজ এখনও পর্যন্ত গ্রামে ঢোকেনি পুলিশ ৷ কোনও রাজনৈতিক দলও এখনও পর্যন্ত গ্রামে যায়নি ৷ এ দিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কালিয়াগঞ্জ বিডিও অফিসের মেইন গেট ৷ বিডিও অফিসে বসে গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন মহকুমাশাসক কিংশুক মাইতি ৷

একাধিকবার ফোন করার পর রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতার জানান, "এই ঘটনার পুলিশি তদন্ত চলছে ৷ শুধু দাবি করলেই হবে না ৷ মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পরেই আসল ঘটনা জানা যাবে বলে জানান তিনি ৷" এটুকু বলেই তিনি ফোন কেটে দেন ৷ অর্থাৎ পুলিশের গুলিতে এই মৃত্যুর ঘটনার যে অভিযোগ তা তিনি এখনই স্বীকার করতে রাজি হননি ৷

আরও পড়ুন: রাজ্যে বিপন্ন অধিবাসী সমাজের পরিস্থিতি জানাতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ 7 বিজেপি বিধায়ক

Last Updated :Apr 27, 2023, 5:11 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.