পুরুলিয়া, 13 নভেম্বর : পুরুলিয়া জেলার কালীপুজোগুলির মধ্যে পুরুলিয়া শহরের দুলমি-নডিহা এলাকার চিড়াবাড়ি নাক কাটা কালি পুজো অন্যতম । পুরুলিয়া শহরের শেষ প্রান্তে সুনসান এলাকায় বট গাছের নিচে রয়েছে দেবীর খন্ড খণ্ড দেহ । এই কালীমূর্তির নাক কাটা অবস্থায় পুজো হয় । প্রতি বছর মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে এই পুজো । প্রাচীন প্রথা মেনে ছাগল বলিও হয় এই মন্দিরে ।
কথিত আছে, পুরুলিয়া শহরের দুলমি-নডিহা এলাকায় চাষের জমিতে ধান চাষ হত ব্যাপক । সেই সময় এলাকায় ডাকাত দলের উপদ্রবও ছিল । ফসল ফলার সময় রাতের অন্ধকারে ডাকাতরা সেই ফসল চুরি করে নিয়ে যেত । তাই প্রায় দুই শতাধিক বছর আগে ডাকাত দলের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে শুরু হয় কালী পুজো । এরপরই ফসল চুরিতে বিভিন্নভাবে বাধা পেতে থাকে ডাকাতরা । রাগে ক্ষোভে দেবীর সেই মূর্তি ভেঙে দেয় তারা । কেটে দেয় কালীমূর্তিক নাক । তবে তারপর থেকে আর দেখা মেলেনি সেই ডাকাত দলের । ফসল চুরিও বন্ধ হয়ে যায় এলাকায় ।
এলাকার মানুষের বিশ্বাস, মূর্তি ভাঙার অপরাধে সেই ডাকাত দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন দেবী । তারপর থেকেই নাক-কাটা কালী রূপেই দেবী এখানে পূজিত হয়ে আসছেন । আজও মন্দিরের আসে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেবীমূর্তির বিভিন্ন অঙ্গ । পুরুলিয়া শহরের দুলমি-নডিহা এলাকার চিড়াবাড়ি এলাকার নাক-কাটা কালী পুজো হয় মহা ধুমধামে । পুজোর দিনগুলিতে জেলা তো বটেই, বাইরের জেলা থেকেও পুজো দিতে আসেন বহু পুণ্যার্থী ।
এলাকাবাসী গোপাল মাহাত জানান, "প্রায় 200 বছর আগে ফসলকে রক্ষা করতে এই পুজো শুরু হয় । পরে ডাকাতেরা এই মায়ের মূর্তি ভেঙে দেয় । নাক কেটে দেয় । তারপর থেকেই নাক-কাটা কালী হিসাবেই পুজো দেওয়া হয় মায়ের ।"
এলাকাবাসী গোরাচাঁদ গোস্বামী জানান, "প্রতি বছর মহা ধুমধামের সঙ্গে মায়ের পুজো দেওয়া হয় । জেলা ও বটেই ভিন জেলা থেকেও বহু লোকজন আসেন পুজো দিতে । আয়োজিত হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান । কিন্তু এই বছর কোরোনা মহামারীর কারণে সাদামাটা পুজোর আয়োজন করা হয়েছে । বাতিল করা হয়েছে সমস্ত অনুষ্ঠান । বাইরের থেকে পুণ্যার্থীরা যাতে না আসেন তার জন্য প্রচার করা হয়েছে ।"