Durga Puja : 350 বছর আগে বর্গীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পুজোর শুরু মেদিনীপুরের মল্লিকবাড়িতে

author img

By

Published : Oct 10, 2021, 10:45 PM IST

Durga Puja

অনুমান, সাড়ে তিনশো বছর আগে শুরু হয়েছিল এই পুজো ৷ সেই সময় বর্গী আক্রমণ থেকে বাঁচতে শুরু হওয়া দেবী দুর্গার আরাধনা প্রথা মতে চলে আসছে আজও ৷ মেদিনীপুরের মল্লিকবাড়ির পুজো এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য পুজোগুলির মধ্যে একটি ৷

মেদিনীপুর, 10 অক্টোবর : বর্গীদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে মেদিনীপুরের মল্লিকবাড়িতে শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার আরাধনা ৷ প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে শুরু হয় এই পুজো ৷ প্রাচীন রীতিনীতি ধরে রেখে এখনও মল্লিক বংশের উত্তর পুরুষরা দেবীর আরাধনা করছেন ৷ প্রতিমা তখনও সম্পূর্ণ না হলেও এখানে মহালয়ার পরের দিন থেকেই শুরু হয় পুজো । এই পুজোর বিসর্জনের পর্ব দেখার মতো । বেহারা ও পরিবারের সদস্যদের কাঁধে চেপে মা দুর্গা বিসর্জনে যান কাঁসাই ঘাটে ।

এই মেদিনীপুরে রয়েছে ঐতিহ্যশালী একাধিক দুর্গাপুজো ৷ স্বাধীনতা সংগ্রামী জমিদার এবং বিভিন্ন রাজা-রাজড়াদের পাশাপাশি এখানে বনেদি বাড়ির পুজো হতো জাঁকজমকের সঙ্গে ৷ এই রকমই একটি পুজো হল মেদিনীপুর শহরের নাম মল্লিকবাড়ির পুজো । প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের এই মল্লিক বাড়ির পুজো শুরু হয় মূলত কামান দেগে । পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে সেই মহালয়ার পরের দিন থেকে ৷ প্রাচীন বনেদি বাড়ির পুজো নানা বিশেষত্বের মধ্যে এটি একটি ৷

বংশপরম্পরায় চলে আসা পুজো বর্তমানে সাতপুরুষের হাতে রয়েছে ৷ এই পুজো নিয়ে বিভিন্ন গল্পের প্রচলন রয়েছে । পুজোর সূত্রপাত কীভাবে হয় তা নিয়ে বাড়ির সদস্যদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে ৷ তবে সবাই একটি বিষয়ে এক মত, প্রাচীন পুজোর সঠিক তথ্য কারো কাছেই ঠিকমতো নেই ৷ তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রচলিত গল্পের উপর খানিকটা নির্ভর করতেই হয় ৷

'মল্লিক' পদবী ছিল উপাধি পাওয়া ৷ বর্গী এবং ইংরেজদের আক্রমণ যখন অব্যাহত ছিল, তা থেকে বাঁচার জন্য এই বংশের পূর্বপুরুষরা বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে থাকছিলেন ৷ এরকমই এক পূর্বপুরুষ জন্মেনঞ্জয় মল্লিক অবিভক্ত মেদিনীপুরের এই শহরে বাড়ি তৈরি করে থাকতে শুরু করেন ৷ সেই থেকেই এই শহরে শিকড় প্রসারিত হতে মল্লিক বংশের ৷ গত সাত পুরুষ ধরে এখানে বসবাস তাঁদের ৷

মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে মেদিনীপুরের মল্লিকবাড়ির পুজো

এই পুজো হত একচালার প্রতিমায় ৷ মা দুর্গার ডাকের সাজ ৷ দেবী এখানে মূলত শান্তি রূপে বিরাজমান হতেন ৷ পুজো হতো গোস্বামী মতে । সেই সময় বেনারস থেকে পুরোহিত এনে পুজোর সূচনা হয়েছিল ৷ 9 জন পুরোহিত মিলে পুজো করতেন ৷ সেই রীতি দীর্ঘদিন অনুসৃত হয়েছে । পুজোর সময় প্রতিদিন কুড়ি মণ চালের নৈবেদ্য সাজিয়ে দেওয়া হতো দেবীর সামনে । প্রতিদিন বসত কীর্তন, চণ্ডীপাঠ, কৃষ্ণযাত্রার আসর । অষ্টমীর দিন হতো কুমারী পুজো ৷ সন্ধি পুজোর সময় কামান দাগা হতো ৷ এই শহরের অন্যান্য মণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হতো সেই কামানের শব্দ শোনার পরই ৷

দেবীর বিসর্জনের দৃশ্য ছিল দেখার মতো । দশমীর পুজোর পর কুল দেবতার পুজো শেষ হলে কনকাঞ্জলি দেওয়ার রীতি ছিল ৷ কংসাবতীতে প্রতিমা যেত 32 জন বেহারার কাঁধে চেপে ৷ বাড়ির মহিলারা নিরঞ্জনে যেতেন পালকিতে করে ৷ হাতি-ঘোড়া চড়ে যেতেন পুরুষরা ৷ সঙ্গে থাকত ঢাক-ঢোল, খোল, কাঁসর ৷ এই বিশাল সমারহ দেখতে ভিড় জমাতেন শহরের মানুষ ৷ স্বাধীনতার পরপরই জমিদারির বিলুপ্ত ঘটে ৷ পরিবারের শরিকরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যান ৷ ক্রমশ ম্লান হয় জমিদারবাড়ির জৌলুস ৷ সঙ্গে দুর্গাপুজোর আয়োজনও দিনকেদিন সাদামাঠা হতে থাকে ৷ এখন আর পুজোয় কামান দাগা হয় না ৷ তবে জৌলুস কমলেও এখনও প্রাচীন রীতির অনেক কিছুই বজায় রয়েছে এই মল্লিকবাড়িতে ৷ এই পরিবারেরই নাম অনুসারে এলাকার নাম হয়েছিল মল্লিক চক । এখানে রাসমঞ্চ রয়েছে তাদেরই ৷ এই রাসমঞ্চে এখন বিশেষ দিনে বিশেষ উৎসব-অনুষ্ঠান হয় ৷

বর্তমান সাত পুরুষের সদস্য উদয়ন কর বলেন, "আগে কামান দিয়ে পুজো করা হত ৷ কিন্তু সেই রীতি আজ আর নেই ৷ তবে এখনও পুজো শুরু হয় মহালয়ার পরের দিন থেকে ৷ শরিকরা, যাঁরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়, তাঁরাও এই ক'দিনে জড়ো হন বাড়িতে ৷ পুজোর অনুষ্ঠানে অংশ নেন সকলেই ৷"

আরও পড়ুন : Durga puja 2021 : নগর দর্পণের এক টুকরো ক্যানভাস সল্টলেক এ ই ব্লক পার্ট ওয়ানের পুজোয়

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.