ETV Bharat / state

Malda School: স্কুলবাড়ি নেই, আট বছর ধরে চাষির বাড়িতেই শিক্ষার আলো পাচ্ছে গ্রামের বাচ্চারা

author img

By

Published : Jul 12, 2022, 10:07 PM IST

Malda School
শিক্ষার আলো পাচ্ছে গ্রামের বাচ্চারা

গ্রামে স্কুলঘর নেই, তাই নিজের বাড়িটাই ছেড়ে দিয়েছেন ৷ শুধু এই ভেবে যে গ্রামের বাচ্চাগুলোর কী হবে! বাবা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছিলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। বাবার সেই কথাই অক্ষরে-অক্ষরে পালন করে চলেছেন তিনি। তাঁর জন্যই শিক্ষার আলো পাচ্ছে গ্রামের 62টি ছেলেমেয়ে (School Problem in Malda)। তাঁর এই অবদানকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন এলাকার সবাই।

মালদা, 12 জুলাই: গ্রামের একটি বাচ্চাও যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না থাকে, তার জন্য নিজের বাড়িটাই ছেড়ে দিয়েছেন এক চাষি। এক বা দু'দিন নয়, দীর্ঘ আট বছর ধরে তাঁর বাড়িতে চলছে প্রাথমিক স্কুল। তাতে রয়েছে তিনজন শিক্ষক-শিক্ষিকা ৷ কিন্তু স্কুলের যে ঘর সেটাই তো নেই (School Problem in Malda) ৷

যিনি এমন কাজ করে চলেছেন তাঁর নাম কার্তিক মণ্ডল। বাড়ি গাজোল ব্লকের পাণ্ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শুকানদিঘি সংলগ্ন আমতলা গ্রামে। আমতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঠিকানা তাঁর বাড়িই। 2012 সালে অনুমোদন পাওয়া এই স্কুলে পঠন-পাঠন শুরু হয় 2014 সাল থেকে। কিন্তু স্কুলঘর না থাকায় নিজের দুটি ঘর, রান্নাঘর, এমনকী শৌচালয়ও পড়ুয়া আর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য ছেড়ে দেন কার্তিকবাবু।

প্রথমে গাছতলায় ক্লাস চলত। ঝড়বৃষ্টি হলে বাচ্চাদের ঘরে ঢুকিয়ে নিজেরা বারান্দা কিংবা আমগাছের নীচে আশ্রয় নিতেন। তাঁর নিজের দুই ছেলেমেয়েও এই অবস্থাতেই পড়াশোনা করে যাচ্ছে। গ্রামের বাচ্চাদের কথা ভেবে ধারদেনা করে মাস তিনেক আগে একটি পাকা বাড়ি বানিয়েছেন। এখন সেই বাড়িতেই চলছে স্কুল। পুরনো দু'টি ঘর তাতে এখন মিড-ডে মিল-সহ স্কুলের যাবতীয় জিনিসপত্র ভর্তি করে রাখা ৷

আরও পড়ুন : মিড-ডে মিলের রাঁধুনি যখন অঙ্ক শিক্ষিকা, ভিডিয়ো ভাইরাল

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় পাল বলেন, "স্কুলবাড়ির জন্য সরকারের তরফে 30 শতক খাস জমি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই জমি একজন দখল করে রয়েছেন। তিনি জায়গা ছাড়ছেন না। ফলে স্কুলবাড়ি নির্মাণের টাকা এসেও ফেরত চলে গিয়েছে। এ নিয়ে আমি প্রশাসনের সমস্ত মহলে জানিয়েছি। গত বুধবার ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং এসআইএফ স্কুল এখানে এসে সব দেখে গিয়েছেন। তাঁরা দ্রুত স্কুলের ভবন নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এই স্কুল যে এখনও চলছে, তার সব অবদান কার্তিকবাবুর। তিনি না থাকলে গ্রামের বাচ্চারা শিক্ষার জগৎ থেকে অনেক পিছিয়ে থাকত। তাঁর এই অবদান ভোলার নয়।"

স্কুলের দুই পড়ুয়া সুপ্রিয়া আর সূর্য জানায়, কার্তিক জেঠু যতদিন আছেন, ততদিন তাদের পড়াশোনা ঠিক রয়েছে। তারা আরও জানায়, আগে তারা জেঠুর বাড়িতে আমগাছের নীচে বসে পড়াশোনা করত। ঝড় কিংবা বৃষ্টি হলে জেঠুর ঘরেই ঢুকে পড়ত। এখনও তারা কার্তিক জেঠুর পাকা বাড়িতে পড়াশোনা করে। পাকা স্কুলঘর তৈরি হলে তাদের খুব সুবিধে হবে বলে জানিয়েছে ওরা। সঙ্গে সুবিধা হবে তাদের কার্তিক জেঠুরও।

কার্তিকবাবু কী বলছেন? তাঁর বক্তব্য, "গ্রামের বাচ্চাগুলোর শিক্ষার জন্য এটা তো আমাকে করতেই হত। বাচ্চারা বড় হয়ে চাকরি পেলে গ্রামেরই তো সুনাম হবে। আমার দুই ছেলেমেয়েও কখনও ঘর, কখনও গাছতলায় পড়াশোনা করছে। তাদের অসুবিধে হলেও আমার কিছু করার নেই। তবে সবার সঙ্গে আমারও দাবি, স্কুলের জন্য বাড়ি চাই। স্কুলের জন্য চিহ্নিত খাস জমি একজন দখল করে রেখেছেন। তবে ক'দিন আগে প্রশাসনের লোকজন এখানে এসেছিলেন। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন, খুব দ্রুত স্কুলের বাড়ি হবে।"

আট বছর ধরে চাষির বাড়িতেই শিক্ষার আলো পাচ্ছে গ্রামের বাচ্চারা

আরও পড়ুন : এক ঝাঁক খুদেদের নিয়ে নতুন ছোট ছবির গল্প বুনলেন ইন্দিরা

একই দাবি এক অভিভাবক অশোক মণ্ডলেরও। তিনিও জানাচ্ছেন, কার্তিকবাবু না থাকলে গ্রামের বাচ্চারা মূর্খ হয়ে থাকত। তবে এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। আমরা দ্রুত স্কুলের নিজস্ব ভবন চাই। গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী রেজিনা পারভিন জানিয়েছেন, আমরা ওই স্কুলটি পরিদর্শন করেছি। যে ব্যক্তি স্কুলের জমি দখল করে রেখেছেন, তিনি নানা কাগজপত্র দেখাচ্ছেন। কিন্তু সেই নথি পরীক্ষা করে ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক জানিয়ে দিয়েছেন, সেসব ভুয়ো। সভানেত্রী সঙ্গে আরও জানিয়েছেন, খুব দ্রুত স্কুল ভবনের জন্য ওই জমি আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে ৷ জমি পেলেই ভবন নির্মাণের কাজও শুরু হবে। তবে গ্রামের বাচ্চাদের শিক্ষার জন্য কার্তিক মণ্ডল যে ত্যাগ করেছেন, তাঁকে সেলাম জানাই। তাঁর মতো মানুষ আছে বলেই পৃথিবীটা এখনও বাসযোগ্য হয়ে রয়েছে।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.