মালদা, 31 অক্টোবর : মালদা শহরের এক নার্সিংহোমে শিশুমৃত্যুকে ঘিরে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠল ৷ মৃত শিশুর উত্তেজিত আত্মীয়রা নার্সিংহোমে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি এক নার্সকে নিগ্রহ করে বলে অভিযোগ ৷ খবর পেয়ে নার্সিংহোমে পৌঁছায় ইংরেজবাজার থানার পুলিশ ৷ এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের না হলেও সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷ তবে ঘটনার প্রেক্ষিতে এখনও পর্যন্ত নার্সিংহোমের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি ৷
মৃত শিশুর নাম মায়েহিদা রহমান ৷ বয়স মাত্র 34 দিন ৷ তার আব্বা, মাহেরা রহমান পেশায় ব্যবসায়ী ৷ আম্মা, শবনম খাতুন গৃহবধূ ৷ তাঁদের বাড়ি ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কমলাবাড়ি গ্রামে৷ মায়েহিদাই তাঁদের প্রথম সন্তান ছিল বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে ৷ জন্মের পর তাকে নিয়ম মেনে টিকা দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু টিকার জায়গাটি সংক্রমিত হয়ে যায় ৷ সেখানে পুঁজ জমে গিয়েছিল ৷ গতরাতে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ৷ রাতেই তাকে মালদার ওই নার্সিংহোমে ভরতি করা হয় ৷ কিন্তু রাতে মৃত্যু হয় মায়েহিদার ৷
ঘটনাপ্রসঙ্গে মৃত শিশুর এক আত্মীয় মহম্মদ সেনাউল হক বলেন, “গতরাতে বাচ্চাটির হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ৷ রাত 8 টা নাগাদ তাকে নিয়ে আসা হয় এই নার্সিংহোমে ৷ বাচ্চাটির চিকিৎসা শুরু করেন শহরের প্রখ্যাত চিকিৎসক মনোজ ঝা ৷ তিনি বাচ্চাটিকে পরীক্ষা করে নার্সিংহোমে ভরতি করে দিতে বলেন ৷ তিনি জানান, হয়তো সকালেই বাচ্চাকে নার্সিংহোম থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে ৷ মনোজবাবু জানান, বাচ্চার সঙ্গে মায়ের থাকার কোনও প্রয়োজন নেই ৷ তাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে ৷ রাত 10টা নাগাদ মা বাচ্চাকে দুধ খাইয়ে চলে গেলেই হবে ৷ চিকিৎসকের কথামতো আমরা বাচ্চাকে নার্সিংহোমে ভরতি করে বাড়ি চলে যাই ৷ ভোর 3টে নাগাদ নার্সিংহোম থেকে খবর দেওয়া হয়, বাচ্চা মারা গেছে ৷ আমরা নিশ্চিত, গাফিলতির জন্যই বাচ্চাটির মৃত্যু হয়েছে ৷ এখন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ সবাইকে ভুল পথে চালিত করতে চাইছে ৷ যাই হোক, পুলিশ নার্সিংহোমে এসেছে ৷ এনিয়ে আমরা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি ৷” এদিকে মাহেরা সাহেব বলেন, “সামান্য একটি ফোঁড়াতে যে মেয়ে মারা যাবে বুঝতেই পারিনি ৷ গতকাল মনোজ ঝা আমাকে বলেন, কয়েক মিনিটের ব্যাপার ৷ অস্ত্রোপচার করে দিলে 10-15 দিনের মধ্যে মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে ৷ সেই মতো আমি মেয়েকে নার্সিংহোমে ভরতি করি ৷ কিন্তু অতটুকু মেয়ের সঙ্গেও মা’কে থাকতে দেওয়া হয়নি ৷ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই আমার মেয়ে মারা গেছে ৷ আমি নিশ্চয়ই এনিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানাব ৷”
এই ঘটনা নিয়ে এখনও পর্যন্ত নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷ ইংরেজবাজার থানার পুলিশ জানিয়েছে, এনিয়ে মৃত শিশুর পরিবার কিংবা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি ৷ অভিযোগ দায়ের হলে আইননানুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে ৷ তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এদিন সকালে নার্সিংহোমে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয় ৷ মায়েহিদার মৃতদেহ নিয়ে একসময় নার্সিংহোমের সামনে রাস্তায় বসে পড়ে তার আত্মীয়স্বজনরা ৷ তাদের দাবি, গত রাতের CCTV-র সম্পূর্ণ ফুটেজ তাদের দেখাতে হবে ৷ যদিও পুলিশের হস্তক্ষেপে কিছুক্ষণের মধ্যেই অবরোধ উঠে যায় ৷