আসিফের জেল হেফাজত, 3 জুলাই আদালতে পেশ

author img

By

Published : Jul 1, 2021, 10:54 PM IST

অভিযুক্ত আসিফ মহম্মদকে জেলা আদালতে পেশ করল পুলিশ

19 জুন থেকেই কার্যত দেশের নজরে চলে আসে মালদার কালিয়াচক থানার পুরোনো 16 মাইল গ্রাম । 22 জুন গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে দেখায় আসিফ । গত ১৮ অক্টোবর নিজেদের বাড়ি লাগোয়া নির্মীয়মান গুদামঘরে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে খুন করার চেষ্টা করে ১৯ বছরের আসিফ ওরফে আন্নান । সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান তার দাদা আরিফ মহম্মদ । ১২ দিনের হেফাজত শেষে আজ কালিয়াচক খুনকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত আসিফ মহম্মদকে জেলা আদালতে পেশ করে পুলিশ । আগামী ৩ জুলাই আসিফকে ফের আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ।

কালিয়াচক, 1 জুলাই : 12 দিনের হেফাজত শেষে আজ কালিয়াচক খুনকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত আসিফ মহম্মদকে জেলা আদালতে পেশ করল পুলিশ । কালিয়াচক থানার পুলিশের তরফে তাকে আর হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়নি । তার জামিনের আবেদন খারিজ করে আগামীকাল পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা আদালতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য দায়রা বিচারক রূপেন্দ্রনাথ বসু । আগামী 3 জুলাই আসিফকে ফের আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ।

দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা শেষে মাস চারেক আগে নিজেদের বাড়ি লাগোয়া নির্মীয়মাণ গুদামঘরে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে খুন করার চেষ্টা করে 19 বছরের আসিফ ওরফে আন্নান । সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান তার দাদা আরিফ মহম্মদ ওরফে রাহুল । তবে প্লাইবোর্ড দিয়ে চৌবাচ্চা আকৃতির প্রকোষ্ঠে জলে ডুবিয়ে আসিফ খুন করে তার বাবা জাওয়াদ আলি, মা ইরা বিবি, একমাত্র বোন আরিফা খাতুন ও ঠাকুমা আলেকজান বেওয়াকে ।

তার আগে সে বাড়ির সবাইকেই কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ মেশানো ঠান্ডা পানীয় খাইয়েছিল । ওষুধের প্রভাবের মধ্যেই শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান চারজন । এই ঘটনার পর বাড়ি ছেড়ে কলকাতা পালিয়ে যান আরিফ । সেখান থেকে তিনি চলে যান ঝাড়খণ্ডে, তাঁর মামার বাড়িতে । ভাইয়ের হুমকিতে ঘটনার কথা কাউকে বলতে পারেননি তিনি । এদিকে মামা আসিফের কাছে আড়াই লাখ টাকা পেতেন । সেই টাকা চাইলে তাঁকেও খুনের হুমকি দেয় আন্নান ।

আরও পড়ুন...2 দিন নিখোঁজ থাকার পর পিসির বাড়ি থেকে উদ্ধার যুবকের ঝুলন্ত দেহ

তখনই মামা শিস মহম্মদ আরিফকে তার বাবা-মায়ের বিষয়ে জেরা করতে শুরু করেন । তখন তাঁকে সব কথা খুলে বলেন আরিফ । মামার পরামর্শে 18 জুন মাঝরাতে তিনি কালিয়াচক থানায় গিয়ে গোটা ঘটনা খুলে বলেন । সেই রাতেই আসিফকে বাড়ি থেকে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় । পরদিন গুদামঘর থেকে উদ্ধার হয় চারটি পচাগলা লাশ ।

এই ঘটনায় 19 জুন থেকে মালদার কালিয়াচক থানার পুরোনো 16 মাইল গ্রামের কথা সবাই জেনে যায় । এই গ্রামেই বাড়ি আসিফদের । 22 জুন গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে দেখায় আসিফ । সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আরিফকেও । দীর্ঘ তদন্তে পুলিশ একটি বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে, এই ঘটনায় আরিফ কিংবা তাদের মামা শিস মহম্মদ জড়িত নন ।

কালিয়াচকে খুনকাণ্ডে ধৃত আসিফকে আদালতে পেশ

সেকথা জানিয়েছিলেন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াও । তবু তদন্তের স্বার্থে আরিফ ও তাঁর মামাকে পুলিশি নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে । এই মামলায় 24 জুন আরিফ ও তাঁর মামা জেলা আদালতের বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন । পুলিশি তদন্তে আসিফ নিয়ে একাধিক তথ্য বেরিয়ে এসেছে ।

আরও পড়ুন...চিনা গুপ্তচর সন্দেহে ধৃত হানকে লখনউ নিয়ে যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ এটিএস

জানা গিয়েছে, ইন্টারনেটে দক্ষ আসিফ দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে জুয়া খেলত । এর জন্যই তার প্রচুর অর্থের প্রয়োজন পড়ত । সেই টাকার জন্য সে বাবাকে চাপ দিত । এর জন্য সে আগেই বাড়িতে নিজের একটা ডন ইমেজ তৈরি করেছিল । সারাক্ষণ নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখা, কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনে মুখ গুঁজে থাকা, কাউকে তার ঘরে ঢুকতে না দেওয়া ইত্যাদি একাধিক কাজকর্ম ছিল তারই অঙ্গ ।

এমনকি সে কৌশলে প্রচার করতে শুরু করেছিল, সে হ্যাকার । যে কারও অ্যাকাউন্ট সহ যাবতীয় তথ্য মুহূর্তে হ্যাক করতে পারে । ছোট ছেলের এসব কাণ্ডকারখানা দেখে তাকে ভয় পেতেন বাড়ির সবাই । তারই সুযোগ নিয়েছিল সে ।

12 দিনের পুলিশি হেফাজতে আসিফের কাছ থেকে কী জানা গিয়েছে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি জেলা পুলিশের কর্তারা । আজ তাকে ফের জেলা আদালতে তোলা হয় ।

কালিয়াচক থানার আইসি মদনমোহন রায় জানান, 'আজ আসিফ মহম্মদকে জেলা আদালতে তোলা হয়েছে । খুনের মামলায় আমরা তাকে আর হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি না ।' এদিকে 18 জুন রাত থেকেই আসিফদের বাড়িতে বসানো হয়েছিল পুলিশ ক্যাম্প । গতকাল থেকে সেই ক্যাম্প তুলে নেওয়া হয়েছে । সিল করে দেওয়া হয়েছে গোটা বাড়ি ।

আরও পড়ুন...24 ঘণ্টার মধ্যে ফের গঙ্গায় ভেসে আসা লাশ উদ্ধার মানিকচকে

সরকারী পক্ষের আইনজীবী দেবজ্যোতি পাল বলেন, "আগামী 3 জুলাই আসিফকে আদালতে পেশ করা হবে । ঘটনাস্থল থেকে খুন করার সমস্ত সরঞ্জাম পাওয়া গেছে । অনেকটা এগিয়েছে তদন্ত ।"

আজ আসিফের আইনজীবী সন্টু মিয়াঁ বলেন, "দাদার অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবারের চারজনকে খুনের অভিযোগে কালিয়াচক থানার পুলিশ আসিফকে গ্রেফতার করে । 12 দিনের পুলিশি হেফাজত শেষে আজ তাঁকে আদালতে পেশ করা হয় । আজ তার জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন মুখ্য দায়রা বিচারক । আগামী 3 জুলাই আমার মক্কেলকে ফের আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.