মালদা, 11 মে : কোরোনা আতঙ্কের জেরে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের বিবাদে উত্তেজনা ছড়াল হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় ৷ গতকাল রাতে একটি বাড়িও ভাঙচুর করা হয় বলে জানা গেছে ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতেই পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স এলাকায় টহলদারি চালায় ৷ পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও এখনও এলাকা থমথমে ৷ আলোচনার মাধ্যমে তাদের নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর 1-এর BDO ও স্থানীয় থানার IC ৷ তবে এনিয়ে প্রশাসনের কেউই সংবাদমাধ্যমে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি ৷ চুপ রয়েছেন গ্রামবাসীরাও ৷
ঘটনার সূত্রপাত গতকাল রাতে ৷ পুলিশ ও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত পরশু হরিশ্চন্দ্রপুর 1 ব্লকের মানকিবাড়ি গ্রামে প্রথম কোরোনা পজ়িটিভের সন্ধান পাওয়া যায় ৷ গতকাল আরও দু’জনের লালারসে কোরোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায় ৷ স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়ায় গোটা এলাকায় ৷ এলাকার একাধিক মানুষ নিজেদের গ্রাম ঘেরাবন্দি শুরু করে ৷ একইভাবে ঘেরাবন্দি করা হয় মানকিবাড়ির পাশের গ্রাম চণ্ডীপুরও ৷ মানকিবাড়ি থেকে ওই গ্রামে যাতে কেউ আসতে না পারে তার জন্য নজরদারি শুরু করে গ্রামবাসীরা ৷ কিন্তু তার মধ্যেও মানকিবাড়ির কিছু মানুষ বিশেষ প্রয়োজনে চণ্ডীপুরে যেতে বাধ্য হয় ৷ রাতে চণ্ডীপুর গ্রামের সীমানায় থাকা একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিল কয়েকজন ৷ সেখানে দুই গ্রামেরই মানুষ ছিল ৷ ওই আড্ডায় চণ্ডীপুরের বাসিন্দা এক গ্রাম্য চিকিৎসক কোনও খারাপ মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ৷ তাঁর মন্তব্যে খারাপ লাগে মানকিবাড়ির বাসিন্দাদের ৷ তারা গ্রামে ফিরে সব কথা খুলে বলে ৷ এরপরেই গভীর রাতে মানকিবাড়ির বাসিন্দারা ওই চিকিৎসকের বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ ৷
এনিয়ে দুই গ্রামবাসীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থানে ছুটে যায় ৷ পরে চাঁচল ও মালদা থেকেও পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স পৌঁছোয় সেখানে ৷ রাতভর পুলিশ এলাকায় টহল দেয় ৷ পুলিশের উপস্থিতিতে কোনও ঝামেলা সেখানে হয়নি ৷ তবে এখনও পর্যন্ত এলাকা রয়েছে থমথমে ৷ এরই মধ্যে আজ রাজ্যপাল জগদীর ধনকড়ের একটি টুইট ফের প্রভাব ফেলে ৷ তবে এখনও পর্যন্ত নতুন করে কোনও ঝামেলার খবর নেই ৷ এই ঘটনা নিয়ে এখনও পর্যন্ত পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কোনও কর্তা সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি ৷ তবে আজ সকালে এলাকায় গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে দুই গ্রামের মানুষকেই ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেওয়ার আর্জি জানান হরিশ্চন্দ্রপুর 1-এর BDO অনির্বাণ বসু ও থানার IC সঞ্জয়কুমার দাস ৷
ঘটনায় আতঙ্কিত স্বাস্থ্যকর্মীরা ৷ তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, এই মুহূর্তে জেলার কোরোনা গ্রাউন্ড হরিশ্চন্দ্রপুর 1 ব্লক ৷ এখন ওই এলাকায় তাঁদের প্রায় প্রতিদিনই যেতে হচ্ছে ৷ ঘরে ফিরে আসা পরিযায়ীদের সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি প্রয়োজনে তাদের লালারসও সংগ্রহ করতে হবে তাঁদের ৷ এমনিতেই স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে এই মুহূর্তে গ্রামাঞ্চলে একটা ভয় যেন কাজ করছে ৷ তার মধ্যে যদি এসব অশান্তি মাথাচাড়া দেয়, তবে ওই এলাকায় গিয়ে কাজ করা তাঁদের পক্ষে সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে ৷ কোরোনা যুদ্ধে তাঁরাও গ্রামবাসীদের কাছে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন ৷
