ETV Bharat / state

দিকে দিকে শিক্ষকদের আন্দোলন, মুখ খুললেন শিক্ষামন্ত্রী

author img

By

Published : Feb 4, 2021, 10:12 PM IST

শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে মুখ খুললেন শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে মুখ খুললেন শিক্ষামন্ত্রী

সল্টলেকে বর্তমানে একাধিক শিক্ষক সংগঠনের অবস্থান-বিক্ষোভ চলছে । আজ পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের অবস্থানের 48তম দিন । চলছে সরকারি অনুমোদিত আন-অ্যাডেড মাদ্রাসা শিক্ষকদের অবস্থানও । স্কুল সার্ভিস কমিশনের নবম-দশমের ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থীরাও লাগাতার অবস্থান করছেন । জানুয়ারি মাস জুড়ে প্রায়ই কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রাথমিক শিক্ষক, মিড-ডে মিল কর্মচারী ও চাকরিপ্রার্থীরা ।

কলকাতা, 4 ফেব্রুয়ারি : সামনেই বিধানসভা নির্বাচন । আর তার আগে দাবিদাওয়া আদায়ের আন্দোলনে নেমেছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন । লাগাতার অবস্থান, অনশন, পথে নেমে বিক্ষোভ, মিছিল, অতর্কিতে নবান্ন, বিধানসভা, বিকাশভবন অভিযান সবই হচ্ছে । আজ দুপুরেও শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের বিকাশভবন অভিযানকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয় সল্টলেকে । এবার শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে মুখ খুললেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । কী বললেন তিনি?

সল্টলেকে বর্তমানে একাধিক সংগঠনের অবস্থান-বিক্ষোভ চলছে । আজ পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের অবস্থানের 48 তম দিন । চলছে সরকারি অনুমোদিত আন-অ্যাডেড মাদ্রাসা শিক্ষকদের অবস্থানও । স্কুল সার্ভিস কমিশনের নবম-দশমের ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থীরাও লাগাতার অবস্থান করছেন । জানুয়ারি মাস জুড়ে প্রায়ই কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রাথমিক শিক্ষক, মিড-ডে মিল কর্মচারী ও চাকরিপ্রার্থীরা । 13টি স্তরের শিক্ষক ও প্রশিক্ষক‍রা যৌথভাবে শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের ব্যানারে এসে গত 11 জানুয়ারি নবান্ন অভিযানের চেষ্টা করেন‌ । তারপরে 13 জানুয়ারি পর্যন্ত শহীদ মিনারের ময়দানে অবস্থানও করেন । আবার 27 জানুয়ারি ওই মঞ্চেরই শিক্ষিকারা বিধানসভার নর্থ গেটের উপরে উঠে পড়েন বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে‌ । আজও সল্টলেকে বিকাশভবন অভিযান ঘিরে ঝামেলা হয় । পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় বিক্ষোভকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের । আজকের ঘটনার প্রেক্ষিতেই শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয় সাংবাদিকদের তরফে ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী পার্শ্বশিক্ষকদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, "আমরা সমস্ত বাস্তবতা বিবেচনা করেছি । আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম তখন পার্শ্বশিক্ষকদের ভাতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথা এবং ধাপে ধাপে স্থায়ীকরণের কথা বলেছিলাম । আমরা আজও তাই বলছি । আমরা পার্শ্বশিক্ষকদের নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি । আমরা অর্থ দপ্তর এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি, পার্শ্ব শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যাতে প্রতি বছর ভাতা বাড়ানোটা প্রযোজ্য হয় । সুতরাং, তাঁদের সব দাবি তো ধাপে ধাপে মিটছে । তাঁরা কেন এখানে বসে আছে? রাজনৈতিক কারণে নিশ্চয়ই বসতে পারে ।"

রাজ্য সরকার শিক্ষকদের জন্য এবং শিক্ষক নিয়োগের জন্য কী কী পদক্ষেপ করেছে তার খতিয়ান তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী । তিনি বলেন, "একদিনের জন্যও কারোর বেতন বন্ধ হয়নি । এসএসকে, এমএসকেদের আমরা শিক্ষা দপ্তরের অধীনে নিয়ে এসেছি । শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল । মহামান্য আদালতের রায়ে তা বিঘ্নিত হচ্ছে । যাঁরা আদালতে যাচ্ছেন তাঁরা বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন । ইতিমধ্যেই নির্বিঘ্নে টেট পরীক্ষা হয়েছে 31 জানুয়ারি । অন্যদিকে, 16 হাজার 500 শিক্ষক নিয়োগের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে ।"

তারপরে পুনরায় পার্শ্বশিক্ষকদের প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "টেটেও পার্শ্বশিক্ষকদের সংরক্ষণ আছে । তাঁদের এক বছরের প্রশিক্ষণ ছিল । আমরা সরকারের অর্থ ব্যয়ে তাঁদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি । আমাদের লক্ষ্য, শূন্যস্থান পূরণের একটা বিশেষ অংশ পার্শ্বশিক্ষকদের মধ্য থেকে নিতে । এখন পার্শ্বশিক্ষকদের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে । প্রায় 30-32 হাজার পার্শ্বশিক্ষক, হয় অন্য কাজে চলে গেছে, না হলে টেটের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে স্থায়ী হয়েছেন ।"

পাশাপাশি, শিক্ষকদের আন্দোলন অরাজনৈতিক কিনা তা নিয়েও কটাক্ষ করেন শিক্ষামন্ত্রী । তিনি বলেন, "আমরা যখন আন্দোলন করেছিলাম তখন আমাদের সামনে কোনও নির্বাচন ছিল না । তাঁরা বলছেন অরাজনৈতিকভাবে আন্দোলন করছেন । দেখছি তো‌ । আমার কাছে চিঠি আসছে‌ । শিক্ষকদের শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে ঢুকে কাজ করাতে হচ্ছে । সেও তো দেখলাম ।" পার্শ্বশিক্ষকরা ভাতা প্রথার অবসান চান । চান বেতন কাঠামো । তা সত্ত্বেও কি ভাতা বৃদ্ধির কোনও চিন্তাভাবনা সরকারের রয়েছে? সাংবাদিকদের তরফে তোলা সেই প্রশ্নের উত্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, " ভাতা বৃদ্ধি করা মানে জিইয়ে রাখা । স্থায়ীকরণকে দূরে সরিয়ে রাখা । আমরা ভাবছি ধাপে ধাপে এদের বেতন কাঠামোতে কি করে নিয়ে আসা যায় ।"

আরও পড়ুন : "ক্লাবকে টাকা দেওয়া বন্ধ করলেই পার্শ্বশিক্ষক সমস্যার সমাধান হবে", নিদান সায়ন্তনের

শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন 48 দিন ধরে সল্টলেকের রাস্তার ফুটপাতে অবস্থানকারী পার্শ্বশিক্ষক-শিক্ষিকারা । প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রথমেই বলে উঠেন, "ঢপের ধাপের শিক্ষামন্ত্রী‌ ।" ভগীরথ ঘোষের বক্তব্য, "ধাপে ধাপে আমাদের বেতন কাঠামো দিচ্ছে না, ধাপে ধাপে আমাদের স্বর্গবাসী করছে । এই ধাপ থাকে উনি যতদিন না বেরিয়ে আসতে পারবেন, সরকারটাকে যেমন ধাপে ধাপে শ্মশানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, তেমনি দলটারও কিন্তু 12টা বাজাচ্ছেন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব দেখতে পাচ্ছেন । ওনার বলাতে কিছু যায় আসে না আমাদের । যা বলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বলবেন । লজ্জা নেই তাই বলছে ধাপে ধাপে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে । সাহস থাকলে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন । 35 হাজার শিক্ষককে উনি চাকরি দিয়েছেন প্রমাণ করতে পারলে আমি চাকরি ছেড়ে দেব । শিক্ষার 12 টা বাজিয়ে দিয়েছেন । শিক্ষক থেকে পড়ুয়া সবাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপর বিরক্ত । আমি চাই না এই সরকারের পতন হোক । কিন্তু, পতন হলে তার এক এবং অদ্বিতীয় কারণ হবে এই পার্থ চট্টোপাধ্যায় । "

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.