কলকাতা, 3 অক্টোবর: শাসকদলের নেতাদের দাদাগিরিতে স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় সহকারী প্রধান শিক্ষককে ৷ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে 15 মাস পরে মিলল নতুন স্কুলের ঠিকানা। দক্ষিণ দিনাজপুরে নাহিট এফপি প্রাথমিক স্কুলে 2017 সালে স্থানীয় তিন তৃণমূল নেতা শিক্ষকের চাকরি পান। তারপর থেকেই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার নট্যকে বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতনের পাশাপশি তাঁর কাজে তাঁরা বাধা দিতে থাকেন বলে অভিযোগ।
2014 সালে নাহিট এফপি প্রাথমিক স্কুলে যোগ দেন দিলীপ কুমার নট্য। একজন সিনিয়র শিক্ষক থেকে টিচার ইনচার্জের দায়িত্ব পান। স্কুলের পঠনপাঠনের মানোন্নয়ন থেকে স্কুলের পরিকাঠামো সবই তাঁরই তত্ত্বাবধানে হয়। 2019 সালে অগস্ট মাসে তাঁর একমাত্র সন্তানের চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন তিনি ৷ সেসময় অবৈধভাবে তাঁকে টিচার ইন চার্জের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি স্কুলে যোগদান করেন। তারপর থেকেই নতুন করে দিলীপবাবুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ।
সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর ডিআই ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে জানানো সত্ত্বেও শেষরক্ষা হয়নি। এমনকী স্কুলের আর্থিক তছরুপ এবং নানাবিধ অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে স্কুলে সে বিষয়ে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরকে জানালেও ওই তিন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটে তার ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে। 2022 সালে জুলাইয়ে এলাকার স্থানীয় তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ওই তিন শিক্ষক সহকারী প্রধান শিক্ষককে স্কুলে ঢুকতে বাধা দেন বলে অভিযোগ।
মামলকারীর পক্ষের আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষককে তাঁর অনুপস্থিতিতে পদ থেকে সরানো যায় না। রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর তাঁর অভিযোগ খতিয়ে না-দেখেই তার বেতন বন্ধ করতে পারে না, এমনটা বেআইনি। দীর্ঘদিন স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়া বেআইনি। শিক্ষা দফতর সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে ওই শিক্ষক যাতে স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় 26 সেপ্টেম্বরের শুনানি শেষে রাজ্যের আইনজীবীর কাছ থেকে এর ব্যাখ্যা চাইলে সদুত্তর দিতে পারেনি রাজ্য। তাই স্কুলের সহশিক্ষক ও দক্ষিণ দিনাজপুর ডিআইকে 5 অক্টোবর সশরীরে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি। বিচারপতির নির্দেশের পরেই তড়িঘড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর প্রাইমারি কাউন্সিল মঙ্গলবার বৈঠক ডেকে অন্য একটি স্কুলে (বেরলি এফপি স্কুল) দিলীপ কুমার নট্যকে যোগ দিতে বলেন। আপাতত আগামী 5 অক্টোবর ডিআই এবং সহকারী শিক্ষক আদালতে হাজির হয়ে কী ব্যাখ্যা দেন তা দেখার ৷
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি নিয়ে আরও তৎপর হোক প্রশাসন, দাবিতে জনস্বার্থ মামলা হাইকোর্টে