ETV Bharat / state

Panchayet Election 2023: পঞ্চায়েত নির্বাচনে দুর্নীতির 'দুসরা'র জবাব কি স্ট্রেট ব্যাটে দিতে পারবে তৃণমূল ?

author img

By

Published : Oct 27, 2022, 8:42 PM IST

Updated : Oct 28, 2022, 8:49 AM IST

Etv Bharat
Etv Bharat

পঞ্চায়েত নির্বাচনের দুর্নীতির প্রশ্নে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে তৃণমূল । আর তাই প্রায় সবদিক থেকেই 2013 এবং 2018 সালের থেকে আলাদা পঞ্চায়েত নির্বাচনের সামনে দাঁড়িয়ে শাসক শিবির । দুর্নীতির অভিযোগের জবাব তৃণমূল কীভাবে দেবে সেটাই এখন দেখার (TMC need to deal with the Allegations of corruption) ।

কলকাতা, 26 অক্টোবর: রাজনৈতিক অথবা প্রশাসনিক দিক থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayet Election) স্বাভাবিকভাবেই লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ। তবে একটি রাজনৈতিক দলের সংগঠন ঠিক কতটা মজবুত তার মাপকাঠি হিসেবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জুড়ি মেলা ভার । পশ্চিমবঙ্গের মতো বড় রাজ্যের ক্ষেত্রে এই স্থানীয় নির্বাচনের প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি আর্থিক তাৎপর্যও আছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতির রাশ নিজেদের হাতে রাখার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েই পঞ্চায়েত নির্বাচনের রণকৌশল তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলি । বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন । তার আগে তৃণমূলের কাছে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ বিরোধীদের তোলা দুর্নীতির অভিযোগের জবাব দেওয়া (TMC need to deal with the Allegations of corruption)।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল সামগ্রিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে । এ রাজ্যের শেষ তিনটি পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালেই বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যায় । 2008, 2013 এবং 2018 সালের পঞ্চায়েত ভোটের তিনটি স্তরেই উত্তরোত্তর ভালো ফল করেছে তৃণমূল । সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের পর 2008 সালে বাংলার দুটি জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে জেলা পরিষদ নিজেদের দখলে এনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দশকের পর দশক ধরে চলে আসা বাম সরকার সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে চলেছে । পাশাপাশি মোটের উপর স্পষ্ট হয়ে যায় বামেদের সংগঠনে ফাটল ধরেছে । পরের বছরের লোকসভা এবং 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের পরাজয় হয়। সাড়ে তিন দশক বাদে রাজনৈতিক পালাবদল দেখেছিল বংলা । তার শুরুটা হয়েছিল পঞ্চায়েতের হাত ধরেই ।

আরও পড়ুন: কংগ্রেস সভাপতি হিসাবে দায়িত্বভার নিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে

2013 সালের পঞ্চায়েত ভোট খুব সহজেই জিতেছিল তৃণমূল । বিরোধী বাম ও কংগ্রেস সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি । আর সেই সময় পর্যন্ত রাজ্য রাজনীতির বিরোধী পরিসরে নিজেদের উপস্থিতি সেভাবে জানান দিতে শুরু করেনি বিজেপি। উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশ্নে শাসক দলের উপর চাপ তৈরি করতে পারেনি বিরোধিরা। বরং নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী আসবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন হিসেবে উঠে এসেছিল । রাজ্য নির্বাচন কমিশমনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল । শেষমেশ শীর্ষ আদালতের নির্দেশে আধা সামরিক জওয়ানদের নিয়ে এসেই পঞ্চায়েত নির্বাচন করান রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তৎকালীন কমিশনার মীরা পাণ্ডে । এতকিছু করেও নির্বাচন যে পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ হয়েছিল তা বলা যাবে না । তবে 2008 সালের মতো ভয়াবহ অবস্থাও দেখা যায়নি । পাশাপাশি এটাও ঠিক তৃণমূলকে কোণঠাসা করার মতো কোনও বড় ইস্যুও খুঁজে পায়নি বিরোধীরা।

শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ নির্বাচন বাংলায় বিরল। মন খারাপ করা বিষয় হলেও এটাই বাস্তব। কংগ্রেস, বাম এবং তৃণমূল-এই তিন আমলেই ভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে । বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের প্রাণ গিয়েছে। আগুনে পুড়েছে সরকারি সম্পত্তি। তবে 2018 সালের পঞ্চায়েত ভোট যে ব্যাপক সন্ত্রাস দেখেছিল তার উদাহরণও খুব বেশি নেই । সেবার 34 শতাংশ আসনে ভোটই হয়নি । মানে প্রায় 2 কোটি ভোটার ভোট দিতে পারেননি। বিরোধীদের অস্তিত্বই কার্যত মুছে দিয়েছিল তৃণমূল । তার মধ্যেও ধীরে ধীরে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয় বিজেপি । বছর খানেক বাদে লোকসভা নির্বাচনে 18 জন সাংসদকে বাংলা থেকে জিতিয়ে নিয়ে যায় বিজেপি। বাংলায় সরকার গড়ার স্বপ্নও দেখতে শুরু করে গেরুয়া শিবির । যদিও 2021 সালের বিধানসভা ভোটে হারতে হয় তাদের । কিন্তু বাংলায় যে বিজেপি সরকার করার মতো জায়গায় চলে যেতে পারে বা প্রধান বিরোধী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে সেটা প্রথম বুঝিয়েছিল 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন। পাশপাশি এতদিন প্রধান বিরোধী হিসেবে থাকা সিপিএম এবং কংগ্রেসের অবস্থান হল যথাক্রমে তিনে এবং চারে।

আরও পড়ুন: ভারতীয় নোটে লক্ষ্মী, গণেশের ছবি ছাপান ! কেন্দ্রকে পরামর্শ কেজরিওয়ালের

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শেষ দুটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেভাবে তৃণমূলকে চাপে ফেলতেই পারেনি বিরোধী দলগুলি । পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতি থেকে শুরু করে সারদা বা নারদ কাণ্ড নিয়ে সরব হলেও তাতে সেভাবে সমস্যায় পড়তে হয়নি মমতার দলকে । শেষ পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস অবশ্যই একটা বড় ইস্যু হয়ে উঠেছিল । পরবর্তী কালে তৃণমূল নেতারাও মেনে নিয়েছেন রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় যেভাবে নির্বাচন হয়েছে তা সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ নয়। শুধু মেনে নেওয়া নয়, দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই প্রকাশ্যে বলেছেন এই ধরনের আচরণ মেনে নেওয়া হবে না । কিন্তু এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। তৃণমূলের আমলে দুর্নীতির একটি নয় একাধিক অভিযোগ নিয়ে সরগরম রাজনীতি। নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের প্রাক্তন হেভিওয়েট প্রাক্তন মন্ত্রীর গ্রেফতারি থেকে শুরু করে তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচত অপির্তা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনা তৃণমূলকে যে প্রবল অস্বস্তিতে ফেলেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই । অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে সরকার এবং দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দূরত্ব তৈরির মরিয়া চেষ্টা অবশ্যই করেছে তৃণমূল । তবে শিক্ষক থেকে শুরু করে অশিক্ষক নিয়োগে হওয়া 'দুর্নীতি'র অভিঘাত এতটাই যে এর থেকে এখনই বেরিয়ে আসা কার্যত অসম্ভব । বিশেষ করে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যার সমাধান না-হওয়া পর্যন্ত।

নিয়োগ ছাড়া গরুপাচার থেকে শুরু করে কয়লাপাচার-সহ আরও কয়েকটি দুর্নীতিও পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে চিন্তার কারণ হয়ে থাকবে । গরুপাচারের ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের আরও এক হেভিওয়েট নেতা অনুব্রত মণ্ডল । দলীয় পদ অনুসারে বীরভূমের জেলা সভাপতি হলেও অনুব্রতর প্রভাব রাজ্যের অন্য প্রান্তেও যথেষ্ট । বিশেষ করে বীরভূম এবং তার আশপাশের জেলায় নির্বাচন করানোর ভার তাঁর উপরই দিয়েছিল দল । এখন তাঁর অভাব নিশ্চয় তৃণমূলকে সমস্যায় ফেলবে বলেই মনে করে রাজনৈতিক মহল।

প্রশ্নপত্র কঠিন হতে পারে ধরে নিয়ে প্রস্তুতিতে ফাঁক রাখতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্বও । ইতিমধ্যেই দলের প্রমিলা বাহিনী ‘চলো গ্রামে যাই’ প্রকল্পের সূচনা করেছে । এই কর্মসূচিতে রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলা হবে । তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনার পাশাপাশি মহিলাদের জন্য রাজ্য সরকার কী কী করেছে তাও তুলে ধরা হবে । রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ এই কর্মসূচির মধ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন । সেবার ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালুর কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা । বিশ্লেষকদের দাবি মহিলাদের মন ছুঁতে পেরেছিল সেই ঘোষণা। আর তাই মহিলা ভোটাররা তৃণমূলের পাশে ছিলেন । পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মহিলা ভোট নিজেদের দিকেই রাখতে চায় তৃণমূল । এছাড়া রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ ইতিমধ্যেই বলেছেন পঞ্চায়েতের জয়ী সদস্যরাই তাঁদের প্রধানকে নির্বাচিত করবেন । কাউকে টাকা দিয়ে প্রশাসনিক পদ পাওয়া যাবে না । রাজনৈতিক মহলের অনুমান এভাবে জনমানসে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল। মমতা নিজেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলীয় সভায় বলেছেন, দু'একজনকে দেখে সামগ্রিকভাবে দল সম্পর্কে কোনও নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবেন না । সেই কাজটাই করছেন তৃণমূল নেতারা । তবে শেষমেশ দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রেখে কীভাবে তৃণমূল পঞ্চায়েত নির্বাচনের মোকাবিলা করে সেটাই এখন দেখার ।

Last Updated :Oct 28, 2022, 8:49 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.