সিঙ্গুর, 13 মে : শিল্প অনেক বছর আগেই বিদায় নিয়েছে সিঙ্গুর থেকে ৷ কিন্তু, সাঁতারে দেশ-বিদেশ থেকে সম্মান জিতেছে সিঙ্গুরের ছেলে-মেয়েরা ৷ তবে, পরিকাঠামোর অভাবে সেটাও নষ্ট হতে বসেছে ৷ এমনই বেহাল অবস্থা হুগলির সিঙ্গুরের গোপালনগর সুইমিং ইনস্টিটিউটের (Swimmers struggle Due to Lack of Infrastructure in only Swimming Club of Singur) ৷ তাই ইনস্টিটিউটকে বাঁচাতে সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ক্লাবকর্তা এবং অভিভাবকরা ৷ কিন্তু, তাতেও কোনও ফল হয়নি বলেই অভিযোগ তাঁদের ৷
পুকুরে সাঁতার শিখে একাধিক জাতীয় আন্তর্জাতিক পুরস্কার এনেছে সিঙ্গুরের ছেলে-মেয়েরা ৷ কিন্তু, উন্নত পরিকাঠামোর অভাবে সমস্যা মুখে সেই সকল এবং আগামী প্রজন্মের সাঁতারুরা ৷ স্থানীয় প্রশাসন ও বিধায়ককে বলেও কোন উন্নতি হয়নি সিঙ্গুরের গোপালনগর সুইমিং ইনস্টিটিউটের ৷ নেই উন্নতমানের সুইমিং পুল, ড্রেসিংরুম ও বাথরুম ৷ এমনকি ইনস্টিটিউটে যাওয়ার ভাল রাস্তা পর্যন্ত নেই বলে অভিযোগ ৷
সিঙ্গুর ও হরিপাল ব্লকের একমাত্র সুইমিং ক্লাব গোপালনগর সুইমিং ইনস্টিটিউট ৷ বহু সাঁতারু এই ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজ্য ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে ৷ যে সিঙ্গুরে কৃষক আন্দোলন হয়েছিল, সেই সিঙ্গুরে সাঁতারে একাধিক প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি নেই ৷ টানা 32 বছর ধরে এই সমস্যায় ভুগছেন সাঁতারুরা ৷ যদিও, 2012 সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 2 লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছিলেন গোপালনগর সুইমিং ইনস্টিটিউটের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৷ কিন্তু, তাতে সমস্যার সমাধান হয়নি ৷ সুইমিং ক্লাবের পক্ষ থেকে টাকা তুলে এক দিকে প্লাটফর্ম এর ব্যবস্থা করলেও, পুকুরের বাকি দিক অবহেলায় পড়ে আছে ৷
সিঙ্গুরের গোপালনগরের বোসপুকুরে 1989 সালে প্রতিষ্টিত হয় এই সুইমিং ইনস্টিটিউট ৷ একটি পুকুরে সাঁতার শেখানো শুরু হয়েছিল ৷ 32 বছর পার হয়ে গেলেও পুকুরটিকে সংস্কার করে বড় সুইমিং পুলে রূপান্তর করা যায়নি ৷ বাঁশের গার্ড দিয়ে সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ছেলে মেয়েদের ৷ পুকুর হওয়ার কারণে বড়সড় দুর্ঘটনার সম্ভবনা থেকেই যায় ৷ তাতে প্রশিক্ষকদের খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় ৷ ঝুঁকির মধ্যেও সাঁতার শেখানো হয় ওই পুকুরে ৷ সুইমিং ক্লাবে যাওয়ার রাস্তা ধান জমির আল ৷ এমনকি অন্ধকারে কোন আলোর ব্যবস্থা নেই ৷
সাঁতারু, অভিভাবক ও প্রশিক্ষক সকলেরই দাবি অবিলম্বে সাঁতারের উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করে দিক প্রশাসন ৷ তবে, সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির তরফে অবশ্য জানা গিয়েছে, ব্যক্তিগত পুকুর হওয়ায় সমস্যা রয়েছে ৷ ক্লাব কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিলে নতুন করে সুইমিং পুলের পরিকাঠামো তৈরি চিন্তাভাবনা অবশ্যই হবে ৷
এক অভিভাবক কেকা সামন্ত জানান, ‘‘বেঙ্গালুরুতে যে পরিকাঠামোর দেখে এসেছি ৷ তার এখানে কিছুই নেই ৷ ভাল ক্রুজ কোচেরও প্রয়োজন আছে ৷ সিঙ্গুরে আর কোন সুইমিং ক্লাবও নেই ৷ এখানে কোচদের নিজেদের উদ্যোগেই যেটুকু হচ্ছে ৷’’ পুনেতে জাতীয় স্তরে যোগ দিয়েছিলেন সাগর মাঝি ৷ তাঁর মতে, ‘‘গোপালনগর সুইমিং ইনস্টিটিউটে আসার জন্য ভাল রাস্তা ও আলোর ব্যবস্থা নেই ৷ বাইরে যেখানে আমরা খেলতে যাই, সেখানে সব জায়গাতেই সাঁতারের জন্য ভাল প্ল্যাটফর্ম রয়েছে ৷ আমাদের এখানে সেরকমভাবে কিছুই নেই ৷’’
আন্তর্জাতিক স্তরে অংশ নেওয়া সাঁতারু সোমনাথ ধাড়া জানান, ‘‘এই ক্লাব থেকে 17-18 জন জাতীয় স্তরে খেলেছে । চারজন আন্তর্জাতিক স্তরে খেলেছে ৷ অথচ অন্যান্য জায়গার থেকে আমাদের সুইমিং পুলের অবস্থা খুবই খারাপ ৷ পুকুরের মধ্যেই প্রস্তুতি নিতে হয় ৷ দীর্ঘদিন ধরেই ভাল রাস্তাঘাট, আলো, ড্রেসিংরুম কোনও কিছুই নেই ৷ এইখানে পুকুরের একদিকে যে প্লাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে, সেটা লোকের কাছে চেয়েচিন্তে ৷ একবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন ৷ সাংসদ, বিধায়ক, বিডিও ও পঞ্চায়েত প্রধানকে বলেও কোনও লাভ হয়নি ৷ সাঁতারে বাংলা ও দেশে সিঙ্গুরের নাম আছে ৷ সেটা বজায় রাখতে গেলে এই সুইমিং ইনস্টিটিউটের উন্নতি করতে হবে ৷’’
আরও পড়ুন : Egypt Gymnastic World Cup : জিমন্যাস্টিক বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন বাংলার প্রতিষ্ঠা
এই ইনস্টিটিউটের সম্পাদক আলোক বাগ বলেন, ‘‘আগে এই পুকুর থেকে বিদেশে গিয়ে সাঁতারে রেকর্ড তৈরি করেছিল । আমাদের এখানে পাকা রাস্তা ও পুকুরকে সংস্কার করে সুইমিং পুল করার ব্যবস্থা করুক সরকার । সিঙ্গুর থেকে শিল্প গেছে ৷ যাতে সাঁতারে নাম হয়, তার পরিকাঠামো তৈরি করা হোক ৷’’
সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ দুধকুমার ধাড়া বলেন, 4-5 বছর আগে এই সুইমিং পুল করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আগে এই পুকুরের অনেকটা অংশ কেনা সম্ভব হয়নি ক্লাবের পক্ষে ৷ তবে, বর্তমানে মালিকপক্ষের সঙ্গে অনেকটাই কথা এগিয়েছে । এখান থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে খেলেছে এটা সিঙ্গুরের গর্বের ব্যাপার । এটা নিয়ে সিঙ্গুর ব্লক প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের তরফে আমরা জানাব ৷ এই সুইমিং পুল যাতে সুন্দরভাবে করা যায়, তার জন্য আমরা উদ্যোগ নেব ৷ কেজরি গ্রামপঞ্চায়েতে এই রাস্তা তৈরি করব ৷