ETV Bharat / state

কোরোনার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে গুরুত্ব নেই ডেঙ্গি ও স্ক্রাব টাইফাসে

author img

By

Published : Jun 29, 2020, 3:38 AM IST

Updated : Jun 30, 2020, 10:07 PM IST

লকডাউনে কোরোনা মোকাবিলা করতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না ডেঙ্গি ও স্ক্রাব টাইফাসে । লকডাউন শিথিল হতেই সক্রিয় হচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌরসভাগুলি ।

dengue and scrub typhus infection in bankura
বাঁকুড়া পৌরভবন

বাঁকুড়া, 29 জুন : বাঁকুড়ায় কোরোনায় আক্রান্তের পাশাপাশি বেড়ে চলেছে ডেঙ্গি ও স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত । প্রতিবছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয় ডেঙ্গির প্রকোপ । স্ক্রাব টাইফাস ছড়ায় । এই দুই রোগের প্রোকোপ দূর করতে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে শহরাঞ্চলের পৌরসভাগুলি ।

কিন্তু এবছর বছর কোরোনার থাবায় জেলাবাসীদের অবস্থা খুবই শোচনীয় । কোরোনা রুখতেই তৎপর স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন ও পৌরসভাগুলি । রাজ্য সরকারি তরফে টানা 70 দিন লকডাউন চলে । তারপর শিথিল করা হলেও পুরোপুরি আনলক করা হয়নি । তাই নজর পড়েনি জেলার অন্য দুই রোগের দিকে । ডেঙ্গি ও স্ক্রাব টাইফাস । কোরোনা সংক্রমণের মধ্যেই মাসের পর মাস বেড়ে চলেছে এই দুই রোগের প্রকোপ ।

এই স্ক্রাব টাইফাস কি ? এটি একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ । মাইট অর্থাৎ একটি ছোটো পোকার কামড়ে মানুষের শরীরে স্ক্রাব টাইফাস সংক্রমিত হয় । এটা রিকেটসিয়া গ্রুপের একটি ব্যাকটেরিয়া । ওই ছোটো পোকা যখন কামড়ায় তার থেকে 6 থেকে 20 দিনের মধ্যে ছোটো একটি ফুসকুড়ির মতো হয় । তা ফেটে গিয়ে পরে জ্বর আসে । গা হাত পা ব্যাথা করে । শরীরের কিছু গ্ল্যান্ড ফুলতে থাকে । পরে আক্রান্তের লিভার, হার্ট ও ব্রেনের উপর প্রভাব পড়ে । কিছু ক্ষেত্রে এই রোগে প্রাণ নাশও হতে পারে ।

গতবছর বাঁকুড়া জেলায় মার্চ মাসে একজন স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন । এপ্রিল মাসে ডেঙ্গি অথবা স্ক্রাব টাইফাসের কোন আক্রান্তের খবর মেলেনি । মে মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন 1 জন এবং স্ক্রাব টাইফাসে 4 । জুন মাসে ডেঙ্গি 6 জন এবং স্ক্রাব টাইফাসে 9 জন । জুলাই মাসে তা সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় 17 জন এবং 3 জন । অগাস্ট মাসে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় 29 জন এবং স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হয় 45 জন । সর্বশেষ গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় 43 জন এবং স্ক্রাব টাইফাস আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে পৌঁছায় 76 জনে । গত বছর একজন মারা গিয়েছিলেন ডেঙ্গিতে ।

তুলনামূলকভাবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসেই ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা 4 এবং স্ক্রাব টাইফাসে 11 জন । মে মাসে সংখ্যাটা 7 এবং 17 তে পৌঁছায় । চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটা 7 এবং 21 এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে । তার ওপর এবছর ঠিক সেভাবে প্রচার গুরুত্ব পায়নি কোরোনা জেরে লকডাউনের জন্য, যে কথা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বীকার করেছেন ।

অন্যদিকে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে । গত 1 দিনে 4 জনের শরীরে কোরোনা ভাইরাসের হদিস মিলেছে । এখনও পর্যন্ত জেলায় মোট কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 241 । যার মধ্যে সক্রিয় কোরোনা আক্রান্ত 52 । আক্রান্তদের ওন্দা কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন 189 জন । যদিও জেলায় এখনও পর্যন্ত কোনও কোরোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়নি । জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকদের মতে, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার পরেই জেলায় কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে ।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এই দুই রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে বলেন, "লকডাউনের জেরে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি কাজ কর্ম বন্ধ ছিল । জনসচেতনতামূলক কোনও অনুষ্ঠান করা হয়নি । কোরোনা মোকাবিলার জন্য নজর দেওয়ার সময় পাইনি । আমরা ইতিমধ্যে ব্লকস্তরে আমাদের কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ সেরে ফেলেছি । ডেঙ্গির প্রোকোপ কমাতে আগামী দিনে শহরের পরিত্যক্ত জলাশয়গুলিতে গাপ্পি মাছ ছাড়া হবে, যা মশার লার্ভা খায় ।"

বাঁকুড়া পৌরসভার বিদায়ী পৌরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, "ডেঙ্গি ও স্ক্রাব টাইফাসে বাঁকুড়া শহরে গত বছর থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ আক্রান্ত হয়নি । এটা আমাদের কাছে স্বস্তির বিষয় । আগামী জুলাই মাস থেকে পৌরসভার তরফে শহর জুড়ে ট্যাবলো দিয়ে প্রচার করা হবে । পাশাপাশি শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে কিছু স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হবে । পৌরসভার তরফ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালানো হবে । শহরের মধ্যে গজিয়ে ওঠা ঝোপ জঙ্গল কেটে পরিস্কার করা হবে । পরিত্যক্ত জলাশয়গুলিকে জীবাণুমুক্তকরণ করা হবে ।"

Last Updated : Jun 30, 2020, 10:07 PM IST

TAGGED:

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.