ETV Bharat / sports

Olympians on Wrestlers Protest: 'ওরা অপরাধী নয়', সাক্ষী-ভিনেশদের পাশে জয়দীপ-রাহুলরা

author img

By

Published : May 29, 2023, 7:47 PM IST

সাক্ষী মালিক, ভীনেশ ফোগত, সঙ্গীতা ফোগত এবং বজরং পুনিয়াদের পাশে দাঁড়ালেন অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকার এবং রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ জানালেন, তাঁদের অভিযোগ সত্যি না মিথ্যে তা আদালতের বিচার্য বিষয় ৷ কিন্তু, দেশকে যাঁরা পদক এনে দিয়েছে ৷ বিশ্বে দেশের সম্মান বাড়িয়েছে ৷ তাঁদের সঙ্গে পুলিশি জুলুম কোনও মতে বরদাস্ত করা যায় না ৷

Olympians on Wrestlers Protest ETV BHARAT
Olympians on Wrestlers Protest

সাক্ষী ভিনেশদের পাশে জয়দীপ-রাহুলরা

কলকাতা, 29 মে: পদকের প্রতিদান পুলিশের নিপীড়ন ৷ এ যেন ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবির বাস্তবায়ন ৷ “প্রথম দর্শনে বাইরের কারোর মনে সন্দেহের উদয় মোটে বাঞ্ছনীয় নয়,”- হীরক রাজার এই উক্তি যেন আজ বাস্তব ৷ কিছুটা দেরিতে হলেও দিল্লির যন্তর মন্তরে অলিম্পিক পদক জয়ী কুস্তিগীরদের ধরনা বিক্ষোভ গতি পাচ্ছে ৷ রবিবার নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আত্মনির্ভর ভারত গড়ার স্বপ্নের কথা বলছেন ৷ জোর কণ্ঠে যখন নতুন ভারত গড়ার কথা বলছেন, তখন রাজধানীর রাস্তায় পুলিশের নিপীড়নের শিকার সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগত, সঙ্গীতা ফোগত, বজরং পুনিয়ারা ৷

নতুন সংসদ ভবনের যাত্রাপথে কুস্তিগীরদের বিক্ষোভ অবস্থান কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অল ইজ ওয়েল’ দেখাতে চাওয়া দৃশ্যপটে বেমানান ৷ তাই টেনে হিঁচড়ে বিক্ষোভরত সোনার সন্তানদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ৷ কিন্তু সাক্ষী, ভিনেশ, সঙ্গীতা এবং বজরংদের বিক্ষোভের আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে ৷ রবিবার তাঁদের উপর নিপীড়নের ছবি সামনে আসতেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে অন্যান্য ক্রীড়াক্ষেত্রের অ্যাথলিটদের মধ্যেও ৷ ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী টুইট করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৷

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন টুইটারে ৷ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক লেখেন, “দেশের কুস্তিগীরদের ন্যূনতম সম্মান না দেখিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷ পরিস্থিতি এতটা জটিল হওয়ার কারণ কী ? কারও সঙ্গেই এমন ব্যবহার কাম্য নয় ৷ আশা করছি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে ৷’’

আরও পড়ুন: উদ্বোধনের উচ্ছ্বাসেই হেনস্তা 'সোনার' ছেলে-মেয়েদের, আলোকচ্ছ্বটাতেও দেশে নিকষ অন্ধকার

পুলিশের আচরণের প্রতিবাদ করেছেন অলিম্পিয়ান শুটার জয়দীপ কর্মকার ৷ অলিম্পিকে চতুর্থ স্থান পাওয়া জয়দীপ পুরো ঘটনায় ব্যথিত ৷ তাঁর মতে, “প্রতিবাদ এবং দোষী ব্যক্তির বিষয়টি বিচারযোগ্য ৷ এটা এমন একটা ঘটনা যার মধ্যে যৌন হেনস্তা এবং আরও অনেক বিষয় আছে ৷ পুরোটাই হয়তো বিচারাধীন বা পুলিশের তদন্ত সাপেক্ষ ৷ বিচার না-পেলে প্রতিবাদে মানুষের সামিল হওয়ার ঘটনা দেখেছি ৷ মোমবাতি মিছিল, প্রতিবাদী স্লোগান সব কিছুই দেখা যায় ৷ এখানেও কুস্তিগীররা অনেক দিন ধরে প্রতিবাদ করছেন ৷ এর সত্যতা নিয়ে আমি বেশি কিছু বলতে পারব না ৷ কারণ আমাদের জানা নেই। বিষয়টি তার উপর বিচারাধীন ৷’’

তবে, দেশের গর্ব তথা অলিম্পিক পদকজয়ীদের সঙ্গে এহেন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না বলে উল্লেখ করেন জয়দীপ কর্মকার ৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে একটা সোজা কথা, দেশের যাঁরা খেলোয়াড়, যাঁরা অলিম্পিকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ৷ যাঁরা দেশের জন্য পদক নিয়ে এসেছেন ৷ যাঁরা গর্বিত করেছেন, দেশের তিরঙ্গাকে উঁচুতে উঠিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইয়েছেন ৷ আমাদের চোখ থেকে আনন্দাশ্রু ফেলিয়েছেন ৷ তাঁরা আমাদের আবেগ তাড়িত করেছেন ৷ এরা তো আর সাধারণ মানুষ নয় ৷ আমি সাধারণ মানুষকে ছোট করছি না ৷ দেশের প্রতি এদের অবদান বিশাল ৷ তাঁদের সঙ্গে ব্যবহার করার সময় বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে ৷’’

আরও পড়ুন: 'দাঙ্গা করিনি শান্তিপূর্ণ ধরনা করতে চেয়েছিলাম, পুলিশ করতে দিল না'; চোখের জলে সাক্ষী

জয়দীপ কর্মকারের সাফ বক্তব্য দেশের গর্ব যাঁরা, তাঁদের সঙ্গে এমন অবিচার মানা সম্ভব নয় ৷ তিনি বলেন, ‘‘কে দোষী ? কে সাজা পাবে ? অন্যায় করেছে না করেনি, সবকিছু পরের কথা ৷ যাঁরা দেশকে গর্বিত করেছেন, আমার ভাইবোন, তাঁদের হেনস্থা হতে হবে, এটা আমি একজন দেশবাসী হিসেবে মানতে পারব না ৷ ওরা তো ক্রিমিনাল নয় ৷ এরা একটা অভিযোগ করেছে ৷ কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ? তার জন্য ধরনা দিয়েছে ৷ এরা তো ক্রিমিনাল নয় ৷ একজন স্পোর্টস পার্সন হিসেবে এবং একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি এটা মানতে পারছি না ৷ যেসব ছবি সামনে এসেছে, তা মেনে নেওয়া যায় না ৷’’

আরেক অলিম্পিয়ান তিরন্দাজ রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখেও একই কথা ৷ তিনিও পুরো ঘটনা মানতে পারছেন না ৷ বলছেন, “একজন অলিম্পিয়ান হিসেবে বা একজন খেলোয়াড় হিসেবে ওরা কতটা ঠিক সেটা কেউ জানে না ৷ যতক্ষণ না কোর্ট থেকে একটা রায় বেরোচ্ছে ৷ তবে, একজন অ্যাথলিটকে পুলিশের এইভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া কখনই সমর্থন যোগ্য নয় ৷ ওরা তো কোনও ভায়ল্যান্স করছে না ৷ বসে প্রতিবাদ জানাচ্ছে ৷ বারবার সরকারকে বলছে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুণ ৷ সেটার জন্য পুলিশের নিপীড়ন নিশ্চিতভাবে নিন্দনীয় ৷ এই ঘটনায় আমাদের অলিম্পিয়ানদের সম্মান ভুলুণ্ঠিত ৷ বিদেশেও আমাদের দেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে ৷’’

আরও পড়ুন: ‘স্বৈরাচারী শক্তি-অহংকারী রাজা’, কুস্তিগীরদের সমর্থনে বিরোধীদের নিশানায় মোদি

পাশাপাশি, জাতীয় পতাকা হাতে বসে থাকা কুস্তিগীরদের টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য কখনই মানা যায় না বলে জানিয়েছেন রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘একজন জাতীয় পতাকা নিয়ে রয়েছেন ৷ তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে ৷ এটা সরকার বসে সমাধান করতেই পারে ৷ পুলিশের এই আচরণ আমি মানতে পারছি না ৷’’

কমনওয়েলথ গেমসে পদক জয়ী প্যাডলার সৌরভ চক্রবর্তীও প্রতিবাদ করছেন পুরো ঘটনার ৷ তাঁর মতে, “প্রধানমন্ত্রী দেশের খেলাধূলার উন্নয়নে ৷ বিশেষ করে পরিকাঠামোর উন্নয়নে যেভাবে নজর দিয়েছেন তা আগে হয়নি ৷ খেলোয়াড়রাও আগের থেকে সাহায্য বেশি পাচ্ছেন ৷ তাই বলে একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে রবিবারের ঘটনার সমালোচনা করব না এটা হয় না ৷ ছবিতে যা দেখেছি তাতে লজ্জিত ৷ পুলিশ নিপীড়ন করছে দেশের সোনার ছেলে-মেয়েদের ৷ যাঁদের জন্য দেশ গর্বিত হয়েছে ৷ আমি একজন ক্রীড়াবিদ ৷ টেবিল টেনিসে সিনিয়র পর্যায়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি ৷ কমনওয়েলথ গেমসে পদক রয়েছে ৷ বর্তমানে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে যুক্ত ৷ এই অবস্থায় একজন ক্রীড়াবিদ যখন কোনও ঘটনার প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামেন, তখন তার যথেষ্ট সারবত্তা রয়েছে বলে আমি হৃদয় থেকে বিশ্বাস করি ৷’’

আরও পড়ুন: আটক সাক্ষী-ভিনেশদের ছেড়ে দেওয়া হলেও, দাঙ্গা-সহ একাধিক ধারায় মামলা দিল্লি পুলিশের

তবে, বিজেপি সাংসদ তথা রেসলি ফেডেরেশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতির বিরুদ্ধে যে যৌন হেনস্তার অভিযোগ কুস্তিগীররা এনেছেন ৷ সেই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি ৷ বিষয়টি বিশদে জানেন না বলে মন্তব্য করেননি ৷ তবে তাঁর মতে, ক্রীড়াবিদরা একটি রং দেখে উদ্বুদ্ধ হন ৷ তা হল দেশের জাতীয় পতাকার তিনটে রং ৷ ক্রীড়াবিদরা যখন প্রতিবাদের মঞ্চে, তখন তাঁদের প্রতি সমর্থন রয়েছে সৌরভ চক্রবর্তীর ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.