হায়দরাবাদ, 7 এপ্রিল : জেমস ডিউই ওয়াটসনকে বলা হয় ডিএনএ-র জনক । 1953 সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি ওয়াটসন এবং ক্রিক আবিষ্কার করেন ডিএনএ-র দ্বিমুখী হেলিক্স গঠন । ওয়াটসন ও ক্রিক একটি গবেষণাপত্র লেখেন, যার নাম ছিল, ‘মলিকিউলার স্ট্রাকচার অফ নিউক্লিক অ্যাসিডস: আ স্ট্রাকচার ফর ডিঅক্সিরাইবোজ নিউক্লিক অ্যাসিড’। নেচার পত্রিকায় এই গবেষণাপত্র প্রথম প্রকাশিত হয় 1953 সালের 25 এপ্রিল ।
জেমস ডিউই ওয়াটসনকে নিয়ে কিছু চিত্তাকর্ষক তথ্য:
1953 সালের মে মাসে লন্ডনের ক্রনিকল সংবাদপত্রে রিচি ক্যালডারের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৷ যার নাম ছিল ‘হোয়াই ইউ আর ইউ। ক্লোজ়ার সিক্রেট অফ লাইফ’।
1990 সালে ওয়াটসনকে ন্যাশনাল ইনস্টিউট অফ হেলথের হিউম্যআন জিনোম প্রোগ্রামের প্রধান নিযুক্ত করা হয় ৷ যে পদে তিনি 10 এপ্রিল 1992 পর্যন্ত ছিলেন।
তিনি হিউম্যান জ়িনোম প্রোগ্রামকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন । ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথেক নতুন অধিকর্তা বার্নাডিন হেলির সঙ্গে সংঘাতের জেরে ওয়াটসন প্রজেক্ট ছেড়ে দেন। তিনি কোয়ালিটি গ্রুপিংয়ে লাইসেন্স নিতে হেলির উদ্যোগের বিরোধী ছিলেন।
প্রাথমিকভাবে সালভাদোর লুরিয়া ওয়াটসনকে সাব-অ্যাটোমিক গবেষণায় আনেন । তিনি এবং ম্যাক্স ডেলব্রুক ছিলেন জিনতত্ত্ববিদদের সেই নতুন গোষ্ঠীর প্রধান, যাঁরা বংশানুক্রমিকতা নিয়ে ড্রসোফিলার উপর গবেষণা করছিলেন। এই ‘ফেজ গ্রুপ’-এ থাকতে থাকতেই ওয়াটসন গবেষণায় মন দেন ।
1949 সালে ওয়াটসন ফেলিক্স হরোউইতজ়ের কাছে অধ্যয়ন করেন ৷ যাতে সেই সময় প্রচলিত বাধ্যতামূলক আঙ্গিকটিও ছিল: গুণাবলী হল প্রোটিন এবং তারা নিজেদের প্রতিকৃতি তৈরি করে ।
ফেজ গ্রুপের মাধ্যমে ওয়াটসন আভেরি-ম্যাকলিয়ড-ম্যাককার্টি পরীক্ষা সম্পর্কে জানতেন ৷ যেখানে বলা হয়েছিল যে ডিএনএ হচ্ছে বংশাণুক্রমিক অ্যাটম। ওয়াটসনের পরীক্ষার মধ্যে ছিল এক্স বিম ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণকে নিষ্ক্রিয় করা ৷
আরও পড়ুন: ঝাড়খণ্ডে মিলল 20 কোটি বছর পুরোনো পাতার জীবাশ্ম !
1956 সালে ওয়াটসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তখন তাঁর মনঃসংযোগ ছিল আরএনএ এবং বংশাণুক্রমিক তথ্যের আদানপ্রদানের উপর । পুরোনো পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আণবিক বিজ্ঞানে মনোযোগ দেওয়ার উপর জোর দেন তিনি।
হার্ভার্ডে অধ্যাপনা করার সময় তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে অংশ নেন এবং ভিয়েতনাম থেকে দ্রুত মার্কিন সেনা অপসারণের দাবিতে বারো জন বিজ্ঞানীর একটি গোষ্ঠীকে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন ।
1975 সালে হিরোশিমার ঘটনার 30 বছর পূর্তিতে ওয়াটসন ছিলেন সেই 2 হাজার বিজ্ঞানীর অন্যতম, যাঁরা পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বাড়ানোর বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট জেরার্ড ফোর্ডের সামনে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন । তাঁর যুক্তি ছিল, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সরানোর ক্ষেত্রে কোনও নিরাপদ পদ্ধতি নেই এবং পরমাণু কেন্দ্রগুলো থেকে সবসময়েই প্লুটোনিয়াম চুরির আশঙ্কা থেকে যায় ।
1968 সালে ওয়াটসন কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর হন। 1970 থেকে 72 সালের মধ্যে তাঁর দুটি সন্তানও হয় ৷ সপরিবারে তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবারকেই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা করে নেন ।
ল্যাবের প্রধান এবং প্রেসিডেন্টের পদে 35 বছর ছিলেন ওয়াটসন। পরে তিনি চ্যান্সেলর এবং চ্যান্সেলর এমিরেটাস হন ।
এই সময় থেকেই তিনি সিএসএইতএল-কে তার বর্তমান লক্ষ্যের দিকে চালিত করেন ৷ যা হল, “অ্যাটমিক সায়েন্স এবং হেরিডিটারি কোয়ালিটির সাহায্যে ম্যালিগন্যান্সি, স্নায়বিক অসুস্থতা এবং মানুষের দুর্দশার উপশম করা ।”
2007 সালে ওয়াটসন বলেন, “আমি বামপন্থাকে ছেড়ে এসেছি যখন থেকে তারা বংশাণুক্রমিক গুণকে বিশ্বাস করে না । বংশাণুক্রমিক গুণ আমাদের বলে যে কখনও কখনও জীবনে খামতি থেকে যায় ৷ কারণ আমাদের গুণ কম ।”
2007 সালে ওয়াটসন এক ব্রিটিশ লেখককে বলেন, যে তিনি আফ্রিকার সম্ভাবনা নিয়ে অত্যন্ত ব্যথিত ৷ কারণ ‘আমাদের সামাজিক ভাবনায় বলছে ওদের অন্তর্দৃষ্টি আমাদের সমান ৷ কিন্তু সমস্ত পরীক্ষা বলছে, একেবারেই নয় ।’
এছাড়াও তিনি বলেন যে সবাই সমান হোক, সেই প্রার্থনা তাঁর রয়েছে । কিন্তু তাঁর কথায়, “যাঁরা কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীদের পরিচালিত করেন, তাঁরা জানেন যে এটা ভুল ।”
ড. ওয়াটসনের মন্তব্য গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির চ্যান্সেলর পদ তাঁকে ছাড়তে হয় ।
ওয়াটসন বার বার বলেছেন যে শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বুদ্ধ্যাঙ্কর তফাৎ হয় জিনগত কারণেই ।
2007 সালের অক্টোবরে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন শার্লট হান্ট-গ্রাব । আলোচনায় ওয়াটসন বলেন যে আফ্রিকানরা পশ্চিমী দেশের মানুষের তুলনায় কম অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন । তাঁর বক্তব্যে তিনি বিদ্বেষ নয়, বিজ্ঞানের প্রসার চান ।
ওয়াটসন, ক্রিক এবং মরিস উইলকিন্সকে 1962 সালে চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় ৷ নিউক্লিক অ্যাসিডের সাব অ্যাটমিক গঠন এবং জীবন্ত বস্তুর মধ্যে তথ্যের স্থানান্তর নিয়ে তাঁদের আবিষ্কারের জন্য ।
তাঁদের আবিষ্কারের মূলে ছিল লন্ডনের কিংস কলেজে ৷ মূলত রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের করা গবেষণার তথ্য, যার জন্য তাঁরা যথাযথ স্বীকৃতি পাননি ।
ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরির (যেখানে ওয়াটসন ও ক্রিক কাজ করতেন) ওভারসিয়ার স্যার লরেন্স ব্র্যাগ প্রথমবার 1953 সালের 8 এপ্রিল সলভে-র একটি জমায়েতে এই আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন । তখন তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি ।