গ্রামগুলিতে কোভিডের মারণগ্রাস

author img

By

Published : May 19, 2021, 6:37 AM IST

গ্রামগুলিতে কোভিডের মারণগ্রাস

করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বেশ কয়েকটি গ্রাম কার্যকর পদক্ষেপ করেছিল । গ্রামে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করেছিল । প্রবেশাধিকার সীমিত করেছিল বেশ কয়েকটি গ্রাম । সঙ্গে ছিল সচেতনতা বৃদ্ধির লড়াই । কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এই জাতীয় পদক্ষেপই একমাত্র উপায় ।

দেশের গ্রামগুলিতে যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ মানুষ বাস করেন, সেখানে কোভিডের মারাত্মক প্রভাব চোখে পড়ছে । গত বছর কোভিডের বাড়বাড়ন্ত প্রথমে দেখা গিয়েছিল শহরে । তার প্রায় পাঁচ মাস পর গ্রামে এর প্রকোপ দেখা যায় । মার্চ মাসের তথ্য অনুসারে দেশের প্রায় ৪৯০ টা জেলায় ১০ শতাংশের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত । এর মধ্যে ৩৬.০৮ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় । এপ্রিল মাসে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫.৫ শতাংশে । আর এই মাসে ইতিমধ্যেই সংখ্যাটি হয়ে গিয়েছে ৪৮.৫ শতাংশ ।

নিউজ রিপোর্টে আভাস দেওয়া হয়েছে, গত মাসে যত কোভিড আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছিল, তার ৪৪ শতাংশ গ্রামীণ এলাকার । একজন বোকা মানুষ বাড়িতে আগুন লাগার পর যেমন জলের জন্য কুয়ো খনন করেন, তেমনই দাঁড়িয়েছে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের পরামর্শ । সর্বশেষ যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে রাজ্যসরকারগুলিকে বলা হয়েছে, গ্রামের দিকে বেশি করে মনোযোগ দেওয়ার জন্য, নজর দিতে বলা হয়েছে উপজাতি গোষ্ঠীর দিকেও । কোভিড লক্ষণ দেখা গেলে প্রত্যেকের চিকিৎসা ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে ।

গ্রামের পাশাপাশি শহরেও চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে । প্রায় দুই তৃতীয়াংশ চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে । দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হলে সরকার গ্রামীণ এলাকাগুলি রক্ষা করার জন্য সক্রিয় হত, যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিত । কিন্তু, সে সব ব্যবস্থা থেকে সরে এসে সরকার এখন বলছে, কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার এবং এএনএমদের দ্রুত অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত ।

আরও পড়ুন : করোনা আক্রান্ত সস্ত্রীক বুদ্ধবাবু, হাসপাতালে মীরাদেবী

অবাক করার মত বিষয় হল, উত্তরাখণ্ডের লিব্বেহেরির মত গ্রামগুলিতে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে এক মাসের মধ্যে ৩০ জনের মৃত্য হয়েছে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে, তার কারণ এখনও প্রশাসন বুঝে উঠতে পারেনি । আমাদের গ্রামগুলি এখনও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত । তাদের নতুন নির্দেশিকার ফলে গ্রামগুলি কোভিড মুক্ত হবে, কেন্দ্র এটা বিশ্বাস করে, এটা সত্যিই অবাক করে ।

পঞ্চায়েত রাজ দিবসের এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য পেশ করার সময়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, " আমার আত্মবিশ্বাস যদি কেউ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হতে পারেন, সেটি নিঃসন্দেহে ভারতের গ্রাম বাংলা । গ্রামের মানুষরা দেশ ও বিশ্বের মানুষদের পথ দেখাবে ।" কিন্তু কৌশল এবং পরিকল্পনার অভাবে গ্রামগুলিকে রক্ষা করে যখন আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল, তখনই আমরা মৃত্যুর এক ভয়ঙ্কর দৃশ্যের সাক্ষী থাকলাম ।

মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলির কোভিড পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক । কেন্দ্র প্রায় এক মাস আগে ঘোষণা করেছিল দেশে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব রয়েছে । হাস্যকরভাবে কেন্দ্র এখন বলছে, এই কেন্দ্রগুলির সহায়তায় তারা কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায় ।

আরও পড়ুন : রাজ্যে করোনায় সুস্থতার হার বেড়ে 87.60 শতাংশ

প্রতিটি স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের অধীনে চারটি করে গ্রাম রয়েছে । একই রকমভাবে ২৭ টি গ্রাম নিয়ে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র । কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১২৭ টি গ্রাম নিয়ে । এই কেন্দ্রগুলিতে সব মিলিয়ে ৮০,৬০০ টি পদ খালি রয়েছে । গ্রামগুলিতে ৭৬ শতাংশ বিশেষ মেডিকেল পদ খালি রয়েছে । কোভিডের সময় এই ভয়ঙ্কর ছবিটা নিয়ে আমরা কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব? যখন শহরগুলিতে চিকিৎসা কর্মীরা অবিরাম পরিষেবা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন, তখন কীভাবে গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির চাপ তাঁরা সামলাতে পারবেন ?

করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বেশ কয়েকটি গ্রাম কার্যকর পদক্ষেপ করেছিল । গ্রামে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করেছিল । প্রবেশাধিকার সীমিত করেছিল বেশ কয়েকটি গ্রাম । সঙ্গে ছিল সচেতনতা বৃদ্ধির লড়াই । কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এই জাতীয় পদক্ষেপই একমাত্র উপায় ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.