ETV Bharat / international

ডাবলিনে এখন মরুভূমির নিস্তব্ধতা, জানালেন আয়ারল্যান্ডের 2 ভারতীয়

author img

By

Published : Apr 28, 2020, 4:09 PM IST

image
আয়ারল্যান্ড

যেদিন আয়ারল্যান্ডে প্রথম এসেছিলাম, সেদিনই এই ডাবলিন শহরটার প্রেমে পড়েছিলাম ৷ সুন্দর সাজানো গোছানো একটা শহর ৷ প্রকৃতির সঙ্গে আধুনিকতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন দেখেছিলাম ৷ হার্প আর ফিডেলের সুরে মুগ্ধ হয়েছিলাম ৷ ও’কনেল রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় 120 মিটারের লম্বা টাওয়ারের দৃঢ়তা দেখেছিলাম ৷ ডাবলিন ক্যাসেলসের ইতিহাস পড়েছি ৷ হ্য’পেনি ব্রিজের উপর দিয়ে হেঁটেও গিয়েছিলাম একবার ৷ আয়ারল্যান্ডের প্রবাসী ভারতীয়দের লকডাউন ডায়েরি জেনে নিন ৷

আয়ারল্যান্ড বলতে মনে আসে ফিডেলের মধুর সুর ৷ হার্পে ঝড় তোলা সুরের ঝংকার ৷ কিন্তু, বর্তমানে কোরোনার প্রভাবে আজ সবই কেমন যেন থমকে গেছে ৷ রাস্তার ধারে আর দেখা যাচ্ছে না ফিডেল হাতে কাউকে ৷ কোরোনার প্রকোপে আজ গৃহবন্দি আয়ারল্যান্ডও ৷ সেই আয়ারল্যান্ডেই আটকে পড়েছেন বাংলার দুই যুবক ৷ হাওড়ার বেলুড়ের বাসিন্দা সৌম্যদীপ দত্ত ও হালিশহরের বাসিন্দা তনয় দাস, দু‘জনই ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ৷ ডাবলিন থেকে সরাসরি ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে জানালেন তাঁদের আয়ারল্যান্ডের অভিজ্ঞতা ৷

image
শুনশান রাস্তাঘাট

সৌম্যদীপ দত্ত 2019 সালে সেপ্টেম্বরে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে আসেন ৷ সেখানে বায়োটেকনোলজি নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেন তিনি ৷ প্রায় 7 মাস ধরে তিনি আয়ারল্যান্ডে আছেন ৷

তাঁর কথায়, যেদিন আয়ারল্যান্ডে প্রথম এসেছিলাম, সেদিনই এই ডাবলিন শহরটার প্রেমে পড়েছিলাম ৷ সুন্দর সাজানো গোছানো একটা শহর ৷ প্রকৃতির সঙ্গে আধুনিকতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন দেখেছিলাম ৷ হার্প আর ফিডেলের সুরে মুগ্ধ হয়েছিলাম ৷ ও’কনেল রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় 120 মিটারের লম্বা টাওয়ারের দৃঢ়তা দেখেছিলাম ৷ ডাবলিন ক্যাসেলসের ইতিহাস পড়েছি ৷ হ্য’পেনি ব্রিজের উপর দিয়ে হেঁটেও গিয়েছিলাম একবার ৷

image
সকালের আয়ারল্যান্ড

তবে যতবারই রাস্তাই বেড়িয়েছি, ততবারই এখানকার মানুষের উচ্ছাস দেখেছি ৷ কিন্তু সদা প্রাণবন্ত শহরটাই হঠাৎ করে প্রাণ হারিয়ে ফেলল ৷ কোরোনার প্রভাবে লকডাউন ঘোষণা হতেই জনমানব শূন্য হয়ে পড়ল ডাবলিনের রাস্তাঘাট ৷ উইকলো পর্বতেও দেখা যাচ্ছে না কোনও পর্যটক ৷ বন্ধ শহরের দা টেম্প্যেল বারও ৷

লকডাউন চালু হওয়ার পর একদিন বেরিয়েছিলাম শহরের রাস্তা ধরে ৷ শহরের সেই কোলাহলটা আর নেই ৷ রাস্তা-ঘাটে বন্ধ যানচলাচল ৷ খোলা নেই অন্য কোনও দোকানও ৷ খোলা আছে শুধুমাত্র ওষুধের দোকান ও কিছু ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ৷ এয়ারপোর্টও খোলা আছে ৷ চলছে বিমান চলাচলও ৷ তবে বিমান ধরে ফিরলে বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে কোয়ারান্টিনে ৷

image
সুন্দর আয়ারল্যান্ড

বিশ্বজুড়ে কোরোনা প্রকোপ দেখাচ্ছে ৷ ভারতেও হানা দিয়েছে এই মারণ ভাইরাস ৷ এখানেও অবস্থা প্রায় একই রকম ৷ আমাদের বাড়ি থেকেই কাজ করতে হচ্ছে ৷ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ও এখন বন্ধ ৷ তাই আপাতত গৃহবন্দি আমি ৷ তবে আশাকরি খুব শীঘ্রই সুস্থ হবে পৃথিবী ৷

অন্যদিকে, আয়ারল্যান্ডে ডাটা সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন হালিশহরের তনয় দাস ৷ বর্তমানে ডাবলিনে ডাটা অ্যানালিস্টের কাজও করেন ৷ 2018 সালের অগাস্ট মাসে ডাবলিনে এসেছিলেন তিনি ৷

তনয় বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে ডাবলিনে আছি ৷ শহরের অলি-গলি প্রায় সব চেনা হয়ে গেছে ৷ এসে থেকে দেখেছি শহরটাকে ৷ কী সুন্দরভাবে সাজানো শহরটা ৷ এখানকার মানুষগুলোও যেন তেল খাওয়া মেশিন ৷ নিজের শহরকে কীভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হয়, তা বোধহয় আইরিশদের থেকেই শেখা উচিত ৷ শহরের পার্ক থেকে শুরু করে সাধারণ রাস্তা-ঘাটও ছবির মতো সাজানো ৷ কিন্তু কয়েকদিনে ছবিটা পালটে গেছে ৷ সুন্দর ডাবলিনে এখন মরুভূমির নিস্তব্ধতা ৷ রাস্তায় দেখা মিলছে না কারও ৷ সবাই যেন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী ৷

প্রবাস থেকে দুই বাঙালী

লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার ৷ আর এদেশের মানুষ সরকারকে সবদিক থেকে সাহায্য করছে ৷ লকডাউনের মধ্যেও শহরে খোলা আছে কিসছু ওষুধের দোকান ও কিছু ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ৷ তবে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে দু’জনের মধ্যে 2 মিটারেরর দূরত্ব রাখা বাধ্যতামূলক ৷ আছে তার সূচকও ৷

কোরোনা প্রথম দিকে ছড়িয়ে পড়ার সময়, খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল আইরিশরা ৷ দোকান থেকে N 95 মাস্ক উধাও হয়ে গিয়েছিল ৷ দেখা মিলছিল না স্যানিটাইজ়ারেরও ৷ তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি সাধারণ হয়েছে ৷ কোরোনা মোকাবিলায় এখানকার সরকারও বেশ সদর্থক ভূমিকা পালন করছে ৷ দেশবাসীকে প্রায় প্রতিনিয়ত কোরোনা সম্পর্কে আপডেট দিচ্ছে তাঁরা ৷ লকডাউন চললেও যানবাহন ও বিমান পরিষেবায় ছাড় দেওয়া হয়েছিল ৷ তাই সেগুলি আগের মতোই চলছে ৷ তবে নিজস্ব গাড়ির দেখা মিলছে না ৷ ডাবলিনে একমাত্র চিন্তার কারণ এখানে কোরোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা লোকের সংখ্যাটা বেশ কম ৷

ভারতে মা-বাবা আছেন ৷ তাঁদের থেকে এতটা দূরে থাকায় খানিকটা চিন্তিত । শুনেছি সরকার সদার্থক পদক্ষেপ করছেন । তাই আপাতত স্বস্তিতে । পরিস্থিতি যাই হোক । আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে পৃথিবী । আবার স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.