দিল্লি , 1 ডিসেম্বর : বর্তমান দিনে ভারতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি চাণক্যের মতো ধুরন্ধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেও নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে । সাম্প্রতিক সময় মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক নাটক এই কথার প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।
নীতিন গড়করির মতে, ভারতীয় ক্রিকেট এবং রাজনীতি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত । মহারাষ্ট্রের ফড়নবিশ সরকার, যা চার দিনের মধ্যে ভেঙে পড়ল, প্রমাণ করল নিজেদের ব্যর্থতা । 22 নভেম্বর 2019 । রাত আটটা । মহা বিকাশ অগধি (MVA) বা শিবসেনা, NCP এবং কংগ্রেসের ত্রিপাক্ষিক জোট উদ্ধব ঠাকরেকে তাঁদের নেতা হিসেবে ঠিক ঘোষণা করছিল । পর দিন সকাল আটটা । গোটা দেশ টিভি খুলে চমকে উঠল । মহারাষ্ট্রের রাজনীতির এক ঐতিহাসিক পালাবদল । ভারতীয় জনতা পার্টি, তাদের 'অপারেশন আকাশ' ততক্ষণে সফল করে ফেলেছে । ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টির পরিষদীয় দলনেতা অজিত পাওয়ারকে সঙ্গে নিয়ে শপথ নিয়েছেন ফড়নবিশ । দাবি করেন, অজিতের দলের 54 জনের সমর্থনও পেয়েছে BJP । এই সমর্থনের জেরেই মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নেওয়া হয় । উপ মুখ্যমন্ত্রী হন অজিত পাওয়ার । মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ । অজিত পাওয়ার ভেবেছিলেন NCP দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে, বাস্তবে কিন্তু, তা দেখা গেল না । অজিত পাওয়ারের দল সরকার গড়ার বা ধরে রাখার ব্যাপারে তেমন কোনও সাহায্যই করতে পারল না ।
বিচারপতি এন ভি রামানার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চের নির্দেশের পরই অজিত পাওয়ার পদত্যাগ করেন এবং ভারতীয় জনতা পার্টির জোট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন । যার ফলে ফড়নবিশকেও তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয় । এর পরই BJP সরকার গড়ার লড়াই থেকে পিছিয়ে আসে, এবং শিবসেনা-কংগ্রেস-NCP জোট সরকার গঠন করে । বর্তমান পরিস্থিতি যা তাতে এই জোট সরকার নিজেদের মধ্যেকার বিভেদ দূরে সরিয়ে রেখে একটি স্থায়ী সরকার গঠন করেছে ।
1996 সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী মাত্র 13 দিনের জন্য সরকার গঠন করতে পেরেছিলেন, সে সময় বাজপেয়ীকে সরে আসতে হয়েছিল শুধু মাত্র একটি কারণ, ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের মধ্যে জোট করতে পারেনি বলে । এমন নজির ফের একবার ভারতে দেখা যাবে না তো ? সমসাময়িক রাজনীতিতে আদর্শগত মূল্যবোধগুলি আক্ষরিক অর্থেই অবৈধ, যেখানে দলগুলি এবং এর সদস্যরা ক্ষমতায় থাকার জন্য এবং যে কোনও পর্যায় যেতে প্রস্তুত । শিবসেনা 21 অক্টোবর 2019 সালের ভোটে মহারাষ্ট্রে 56টি আসন জিতেছে, শতকরা হিসেবে ভোট পেয়েছে 25.7, যেখানে BJP-র বিধায়কের সংখ্যা 105 জন । সরকারে থাকা জোট প্রয়োজনীয় সংখ্যার থেকে অনেক বেশি আসনই জিতেছিল, কিন্তু, সে সময় শিবসেনা বেশ কিছু দাবি প্রকাশ্যে আসে । তাদের দাবি ছিল সরকারের 50 শতাংশ ভাগ, আরও স্পষ্ট করে বললে, মুখ্যমন্ত্রিত্বের পঞ্চাশ শতাংশ । পরিস্থিতি আস্তে আস্তে মহারাষ্ট্রকে রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় । বিষয়টি কংগ্রেসের দিকে অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল । কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়া গেলে শিবসেনা-কংগ্রসে-NCP জোট সহজেই শিবসেনার দাবিকে পূর্ণতা দিতে পারত ।
ভারতীয় জনতা পার্টি বরাবরই NCP-কে অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত দল বলে দাবি করে এসেছে, এই NCP-র অজিত পাওয়ারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাকে উপ মুখ্যমন্ত্রী করে সরকার গঠন করতেই পিছপা হয়নি BJP। গোয়া ও মণিপুরের মতো এখানেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে চেয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি । এটা বুঝতে বা মেনে নিতে খুবই সমস্যা হচ্ছে যে, BJP-র মতো একটি দল যাদের একটি মতাদর্শ আছে, যারা কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে, তারা প্রথমে কর্নাটক আর এখন মহারাষ্ট্রে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ল কেন-কীভাবে ।
মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ফড়নবিশ বলেন, মহা বিকাশ অগধি তিন চাকার একটি অটো । যার এক একটি চাকা এক একটি অভিমুখে ঘুরছে । তিনি আরও দাবি করেন, পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন । এখন প্রশ্ন, কমলনাথরা কেন মহারাষ্ট্রের উত্তেজনার সন্ধান করতে না পেরে এতদিন অপেক্ষা করছিলেন । যখন ফড়নবিশ বললেন, সংখ্যা গরিষ্ঠতা তাঁদের দিকেই আছে, কী হিসেবে তিনি এই কথা বললেন, অজিত পাওয়ারকে কেনই বা নিজের মন্ত্রিসভায় নিয়ে এলেন । এমন অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে । 70 শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, জোট সরকারে ক্ষেত্রে মতাদর্শগত মিল খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ।
কর্নাটকে BJP ছিল একক বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে মাত্র কয়েকটা ভোট কম পেয়েছিল । সেই হিসেবে রাজ্যপাল ইয়েদুরাপ্পাকে সরকার গড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান । কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো আস্থা ভোটের আগেই পদত্যাগ করতে হয় । সাম্প্রতিক সময় কংগ্রেস-জেডিএস জোটের কথাও বলতে হয় । পূর্বে কর্নাটক পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিলে BJP তিন দলের এই মহাজোটকে কখনই হালকা ভাবে নিয়ে জনসাধারণের চোখে হাসির খোরাক হতো না ।
সব শেষে একটাই প্রশ্ন থেকে গেল --
BJP শেষ পর্যন্ত কী রাজনৈতিক শিক্ষা পেল ? শেষ পর্যন্ত যা প্রাপ্ত হল, তা কি শুধুই হতাশার !