অবহেলায় স্বাধীনতা সংগ্রামী বিমলপ্রতিভার শেষচিহ্ন

author img

By

Published : Aug 15, 2019, 9:31 AM IST

ওড়িশার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিমলপ্রতিভা দেবী । 1901 সালে জন্ম । বাবা ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় । ওড়িশায় বাঙালিদের স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত বারেবারেই পাওয়া যায় । বাবার আদর্শে অল্প বয়সেই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান ।

বর্ধমান, 15 অগাস্ট: কালের নিয়মে বা উদাসীনতায় হারিয়ে যায় অনেক গৌরবজ্বল ইতিহাস । প্রজন্মের পর প্রজন্ম অতিবাহিত হয়, মুছে যায় শেষ স্মৃতিটুকু । যেমন মুছে যাচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামী বিমলপ্রতিভা দেবীর নাম । তাঁর নামও শোনেনি শিল্পাঞ্চলের এখনকার প্রজন্ম । তাঁর বাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, নেই কোন মূর্তি । এমনকী, তাঁর নামাঙ্কিত একটি ফলক ভেঙে গিয়ে অবহেলায় পড়ে আছে রাস্তার এককোণে । অথচ এই সাহসী বীরাঙ্গনার ভয়ে ব্রিটিশ আমলে তটস্থ হয়ে থাকত খনি অঞ্চলের মস্তানরা ।

ওড়িশার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিমলপ্রতিভা দেবী । 1901 সালে জন্ম । বাবা ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় । ওড়িশায় বাঙালিদের স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত বারেবারেই পাওয়া যায় । বাবার আদর্শে অল্প বয়সেই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান । বিয়ের পর চলে আসেন কলকাতায় । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের বোন উর্মিলাদেবীর সংস্পর্শে এসে স্বাধীনতা আন্দোলনে আরও সক্রিয় হয়ে পড়েন । সেই সময় গড়ে উঠছে ভগত সিংয়ের নেতৃত্বে নওজোয়ান সভা । বাংলা প্রদেশের সভানেত্রী হিসেবে যোগ দেন বিমলপ্রতিভা । এই সময় ঘোড়ায় চাপা, বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেলেন তিনি । বিপ্লবীদের গোপণে অস্ত্র সরবরাহ করতেন ৷ পরবর্তীকালে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিলেও তিনি নরমপন্থী আন্দোলনে বেশি দিন স্থির থাকতে পারেননি । কংগ্রেস ত্যাগ করে চরমপন্থী আন্দোলনকারীদেরই দলে চলে আসেন । 1941 সালে কারারুদ্ধ হন বিমলপ্রতিভা । ছাড়া পান 1945 সালে । এরপরেই খনি শ্রমিকদের উপর ব্রিটিশ মদতপুষ্ট মস্তানদের অত্যাচারের খবর পেয়ে চলে আসেন ।

শ্রমিক ইউনিয়নের নেত্রী হয়ে ওঠেন তিনি । খনি, ইস্পাত অঞ্চলে যেখানেই শ্রমিকদের উপর অত্যাচার হত, বিমলপ্রতিভা ঘোড়া ছুটিয়ে পৌঁছাতেন সেখানে । শোনা যায় জলন্ত সিগার মুখে বিমলপ্রতিভাকে ঘোড়া ছুটিয়ে ছুটে আসতে দেখেই ভয়ে গা ঢাকা দিত মস্তানরা । তাঁকে সবাই 'হান্টারওয়ালি' বলতেন । 1978 সালে তিনি মারা যান । এখন তাঁর বাড়িটিও নেই ৷ বিলীন হয়ে গেছে দামোদরের গ্রাসে ।

আরও পড়ুন: অর্থের অভাব, নিজের চিকিৎসার টাকা জোগাতে সমস্যায় পড়েছিলেন বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত

বাম আমলে আসানসোল পুরসভা সূর্যনগর এলাকার একটি রাস্তাকে বিমলপ্রতিভার নামে নামাঙ্কিত করেছিল । বর্তমানে তার নামাঙ্কিত সেই ফলক পড়ে আছে রাস্তার একদিকে । আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি জানালেন, খুব তাড়াতাড়ি ওই ফলক আবার নতুন করে লাগানো হবে ৷

Intro:কালের নিয়মে কিমবা উদাসীনতায় হারিয়ে যায় অনেক গৌরবজ্বল ইতিহাস। প্রজন্মের পর প্রজন্ম অতিবাহিত হয়, মুছে যায় ধীরে ধীরে শেষ স্মৃতিটুকু। যেমন মুছে যাচ্ছে স্বাধীনতা সংগ্রামী বিমলপ্রতিভা দেবীর নাম। তাঁর নামও শোনেনি শিল্পাঞ্চলের এথনকার প্রজন্ম। তাঁর বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, নেই কোন মু্র্তি। এমনকি তাঁর নামাঙ্কিত একটি রাস্তার ফলক ভেঙেচুরে অবহেলায় পড়ে আছে রাস্তার এককোনে। অথচ এই সাহসী বীরাঙ্গনার ভয়ে একদিন তটস্থ হয়ে থাকত ব্রিটিশ মদতপুষ্ট খনি অঞ্চলের গুন্ডারা।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় ওড়িশার কটক শহরে জন্মগ্রহন করেছিলেন বিমলপ্রতিভা দেবী। ১৯০১ সালে জন্ম। পিতা ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ওড়িশায় বাঙালিদের স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত বারেবারেই পাওয়া যায়। পিতার আদর্শেই কিশোরী বয়স থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান। পরে বিয়ে হয়ে চলে আসেন কলকাতায়। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের বোন উর্মিলা দেবীর সংস্পর্শে এসে স্বাধীনতার আন্দোলনে আরও বেশী করে জড়িয়ে পড়া। সেইসময় গড়ে উঠছে ভগত সিংয়ের নেতৃত্বে নওজোয়ান সভা। বাংলা প্রদেশের সভানেত্রী হিসেবে যোগদেন বিমলপ্রতিভা। এই সময় ঘোড়ায় চাপা, বন্দুক চালানো প্রভৃতির প্রশিক্ষন নিয়ে ফেলেন তিনি। বিপ্লবীদের গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করতেন তিনি এমন খবরও পাওয়া যায়। পরবর্তী কালে জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিলেও তিনি নরমপন্থী আন্দোলনে বেশীদিন স্থির থাকতে পারেননি। কংগ্রেস ত্যাগ করে চরমপন্থী আন্দোলনকারীদেরই দলে চলে আসেন। ১৯৪১ সালে কারারুদ্ধ হন বিমলপ্রতিভা। ছাড়া পান ১৯৪৫ সালে। এরপরেই খনি অঞ্চলে এদেশী খনি শ্রমিকদের উপর ব্রিটিশ মদতপুষ্ট গুন্ডাদের দ্বারা অত্যাচারের খবর পেয়ে চলে আসেন তিনি। আরসিপিআই শ্রমিক ইউনিয়নের নেত্রী হয়ে ওঠেন তিনি। খনি, ইস্পাত অঞ্চলে যেখানেই শ্রমিকদের উপর অত্যাচার হত, বিমলপ্রতিভা ঘোড়া ছুটিয়ে পৌঁছাতেন সেখানে। তার চাবুকে আঘাত পড়ত খনিগুন্ডাদের পিঠে। শোনা যায় জলন্ত সিগার মুখে বিমলপ্রতিভাকে ঘোড়া ছুটিয়ে ছুটে আসতে দেখেই ভয়ে ব্রিটিশ মদতপুষ্ট খনি অঞ্চলের গুন্ডারা গা ঢাকা দিত। তাকে সবাই “হান্টারওয়ালি” বলতেন। দামোদর নদের তিরে হীরাপুরে সুর্যনগর এলাকায় এক চিলতে ছোট্ট আবাসনে থাকতেন তিনি। ১৯৭৮ সালে তিনি মারা যান। তার মারা যাওয়ার পর বাড়িটিও বিলীন হয়ে যায় দামোদরের গ্রাসে। শেষ চিহ্ন বলতে কিছুই নেই আর।
বাম আমলে আসানসোল পুরসভা সুর্যনগর এলাকার একটি রাস্তাকে বিমলপ্রতিভার নামে নামাঙ্কিত করেছিল মাত্র। ব্যস আর কোনকিছুই করা হয়েছে বীরাঙ্গনা মহিয়সীকে নিয়ে। বর্তমানে তার নামাঙ্কিত সেই ফলক পড়ে আছে রাস্তার একদিকে। স্থানীয় এ প্রজন্মের কেউ তার নাম শুনেছেন বলে মনে করতে পারলেন না। তবে প্রবীন মানুষদের মনে আছে। সুর্যনগরের পাশে ঢাকেশ্বরী বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি সুমঙ্গল লাহিড়ি জানান, আমরা তাঁকে চিনতাম। ছোটবেলায় তাঁকে দেখেছি। তাঁর ইতিহাসের কথা বাবা, কাকাদের মুখে শুনেছি। কিন্তু তাঁর স্মৃতি সংরক্ষনের কোন উদ্যোগ দেখিনি। তাঁর বাড়িটিরও কোন চিহ্ন আজ আর নেই। কালের নিয়মেই ইতিহাস হারিয়ে গেল।
স্থানীয় এ প্রজন্মের যুবক অনুপ মাজি জানালেন, আমরা সত্যি লজ্জিত, এতবড় ইতিহাস আমরা জানিনা বলে। নিশ্চয় সবাই মিলে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে কিছু করব।
আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি তার নামাঙ্কিত রাস্তার ফলক ভেঙে পড়ে আছে শুনেই জানালেন, খুব তাড়াতাড়ি ওই ফলক আমরা আবার নতুন করে লাগাব।
Body:..Conclusion:
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.