ETV Bharat / bharat

No Confidence Motion: লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার নিয়ম কী, কীভাবে হয় আলোচনা; জেনে নিন বিস্তারিত

author img

By

Published : Aug 8, 2023, 8:11 PM IST

Updated : Aug 8, 2023, 10:57 PM IST

No Confidence Motion in Lok Sabha: লোকসভায় নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে বিরোধীরা ৷ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে আলোচনা ৷ কিন্তু কীভাবে আনতে হয় এই প্রস্তাব, কী কী নিয়ম রয়েছে আলোচনা নিয়ে, সেই সব নিয়েই লিখেছেন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, রাজ্যসভার প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল বিবেক কে অগ্নিহোত্রী ৷

No Confidence Motion
No Confidence Motion

26 জুলাই 2023 দুপুরে লোকসভায় অধ্যক্ষ ওম বিড়লা জানান যে সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের উপ দলনেতা গৌরব গগৈ মন্ত্রী পরিষদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে নোটিশ দিয়েছেন ৷ অধ্যক্ষ তখন এই প্রস্তাব পেশ করার জন্য লোকসভার অনুমতি নিতে কংগ্রেসের ওই সাংসদকে নির্দেশ দেন ৷

এটা কীভাবে গৃহীত হল: গগৈ এই প্রস্তাব পেশ করার জন্য লোকসভার কাছে অনুমতি চান ৷ তখন অধ্যক্ষ ওম বিড়লা এই প্রস্তাবের পক্ষে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের উঠে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন ৷ যাতে বোঝা যায় ক’জন এই প্রস্তাবের পক্ষে রয়েছেন ৷ সেই সময় কংগ্রেস সংসদীয় দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধি, ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ফারুক আবদুল্লা, ডিএমকে-এর টি আর বালু এবং এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে-সহ বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সাংসদরা উঠে দাঁড়িয়ে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন । এরপর অনাস্থা প্রস্তাব স্বীকার করেন ওম বিড়লা । এই প্রস্তাবের উপর বিতর্কের জন্য 8 ও 9 অগস্টের দিন ধার্য করা হয় ৷ 10 অগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে ।

কেন অনাস্থা প্রস্তাব গুরুত্বপূর্ণ: সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি সরকার তখনই ক্ষমতায় থাকতে পারে, যখন এটি সরাসরি নির্বাচিত সদনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । তাই মন্ত্রী পরিষদ সম্মিলিতভাবে নিম্নকক্ষের কাছে দায়বদ্ধ । অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিক দায়বদ্ধতা দু‘টি নীতির প্রয়োগের দ্বারা নিশ্চিত করা হয় ৷ প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া মন্ত্রী পরিষদে কাউকে মনোনীত করা হয় না ৷ আর দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর বরখাস্তের দাবিতে কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে কোনও ব্যক্তিকে বহাল রাখা হয় না । সম্মিলিত দায়িত্বের সারমর্ম হল যে কোনও নীতি আলোচনার পর্যায়ে থাকাকালীন মন্ত্রীকে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয় ৷ তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে প্রতিটি মন্ত্রী কোনও দ্বিধা ছাড়াই সেই সিদ্ধান্তের পাশে থাকবেন বলে আশা করা হয় ।

PM Narendra Modi
নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী মোদি (ফাইল)৷ এপি

পরাজয় মানে কি: ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ 75(3) এই নীতির উপর ভিত্তিতে উল্লেখ করা হয় যে মন্ত্রী পরিষদ সম্মিলিতভাবে জনগণের (লোকসভা) কাছে দায়বদ্ধ থাকবে । এটি বোঝায় যে সরকার যদি সদনের আস্থা হারিয়ে ফেলে, তবে তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে বা লোকসভা ভেঙে দিতে হবে । যাই হোক, পদত্যাগ বা বিলুপ্তি শুধুমাত্র তখনই অনুসরণ করা হবে, যখন অনাস্থার কারণে হার হবে ৷

পদত্যাগ করা বা সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সরকার কী বিবেচনা করছে ৷ আর তা নিয়ে প্রাথমিকভাবে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে । তাই বিরোধীরা চাইলে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট চেয়ে লোকসভার মতামত পরীক্ষা করতে পারে ।

অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য সদস্যদের সমর্থন: অধ্যক্ষ যদি মনে করেন যে প্রস্তাবটি ঠিক আছে, তবে তিনি সেটি লোকসভায় পড়ে শোনাবেন ৷ আর যে সদস্যরা এই প্রস্তাবের পক্ষে, তাঁদের উঠে দাঁড়িয়ে সমর্থন করতে বলবেন ৷ যদি 50 জনের বেশি সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে উঠে দাঁড়ান, তাহলে তা অধ্যক্ষ মঞ্জুর করবেন ৷ আর তিনি লোকসভার কাজের উপর ভিত্তি করে একটি দিন ধার্য করবেন আলোচনার জন্য ৷ কতটা সময় বরাদ্দ করবেন, সেটাও অধ্যক্ষের উপর নির্ভর করছে ৷ আর যেদিন প্রস্তাব পেশ হচ্ছে, তার থেকে দশদিনের মধ্যে এই নিয়ে আলোচনা করতে হবে ৷

প্রয়োজনীয়তা: সাংবিধানিক বিধান অনুসরণ করে, লোকসভার কার্যপ্রণালী ও কার্যপদ্ধতি পরিচালনার বিধিতে বলা হয়েছে যে মন্ত্রী পরিষদ নিয়ে আস্থা প্রস্তাব কয়েকটি শর্তের উপর নির্ভর করে পেশ করা যেতে পারে ৷ সেগুলি হল - অধ্যক্ষ চাইলে কোনও সদস্যের উপর এই প্রস্তাব পেশের বিষয়টি ছাড়তে পারেন ৷ দ্বিতীয়ত যে সদস্য এই প্রস্তাব পেশ করতে চাইছেন তাঁকে লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলকে 10 ঘণ্টা আগে এই নিয়ে নোটিশ দিতে হয় ৷

PM Narendra Modi
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (ফাইল ছবি)

অনাস্থা প্রস্তাবে বিতর্ক উল্লিখিত বিষয়ের ভিত্তিতে সীমাবদ্ধ নয়: অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা কেবল নোটিশে উল্লেখ করা বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ নয় । সাধারণত, প্রস্তাবক নোটিশে যে বিষয়গুলি উল্লেখ করেন, বক্তারা চাইলে তার থেকে অন্য বিষয়ের উপরও আলোচনা করতে পারেন ৷ এমনকি যে সমস্ত বিষয়ে একই অধিবেশনে পৃথক আলোচনা হয়েছে, তাও উত্থাপন করা যেতে পারে ৷ সেক্ষেত্রে যদি দেখা যায় যে শেষ আলোচনা হওয়ার পরে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যর্থতা রয়েছে ।

বিতর্কের জবাব: প্রস্তাবে সদস্যরা বক্তব্য দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দেন । তবে যিনি প্রস্তাব পেশ করেছেন, তাঁর পালটা উত্তর দেওয়ার অধিকার আছে ৷ তার পর অধ্যক্ষ নির্ধারিত সময়সীমা শেষের পর এই প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশ্ন তোলেন ৷

কীভাবে সংখ্যা জড়ো করা হয়: এনডিএ (334) এর শক্তি বিরোধীদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ৷ বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের সংখ্যা 142 ৷ ফলে তারা অনাস্থা প্রস্তাবে তারা জিতবে না ৷ তবে বিরোধীরা মনে করছে মণিপুর ইস্যুতে সরকারকে তারা কোণঠাসা করতে পেরেছে এবং প্রধানমন্ত্রীকে এই নিয়ে বলতে বাধ্য করতে পেরেছে, এটা তাদের কাছে নৈতিক জয় ৷ তবে মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বিস্তারিত নাও বলতে পারেন ৷ কারণ, মণিপুরের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত, যা সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে ৷ তা বিতর্কের সময় এই নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷

স্বাধীন ভারতের প্রথম অনাস্থা কবে পেশ হয়: অনাস্থা প্রস্তাব ঐতিহাসিকভাবে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ইস্যুতে আলোচনা জোরদার করার জন্য একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বরাবর । 1963 সালে তৃতীয় লোকসভার সময় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আচার্য জেবি কৃপালানি প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন । প্রস্তাবের উপর বিতর্ক চার দিন ধরে 21 ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল ৷ 40 জন সাংসদ এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন ।

Congress MP Rahul Gandhi
কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি (ফাইল)৷ এপি

নেহরুর জবাব কী ছিল: নেহেরু মন্তব্য করেছিলেন, "একটি অনাস্থা প্রস্তাবের লক্ষ্য হওয়া উচিত সরকারে থাকা দলটিকে সরিয়ে দেওয়া এবং তার জায়গা নেওয়া ৷ বর্তমান দৃষ্টান্তে এটা স্পষ্ট যে এমন কোনও প্রত্যাশা বা আশা ছিল না । লাভজনক ও আকর্ষণীয় বিতর্ক হয়েছে বলে মনে করলেও এটা একটু অবাস্তব ছিল । ব্যক্তিগতভাবে, আমি এই প্রস্তাব ও এই বিতর্ককে স্বাগত জানিয়েছি । আমি অনুভব করেছি যে আমরা যদি এই ধরনের পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা করি তবে সেটা ভালো হবে ।”

সরকারের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কতগুলি অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে: ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে সংসদে 27টি অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে ৷ এবারেরটা ধরলে সংখ্য়াটা 28 হবে ৷ শেষবার আনা হয়েছিল 2018 সালে । এই 27টি অনাস্থা প্রস্তাবের মধ্যে 15টি আনা হয় ইন্দিরা গান্ধি ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ৷

এই 27টি প্রস্তাবের একটিরও নিষ্পত্তি হয়নি ৷ তবে 1979 সালে মোরারজি দেশাইয়ের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আসে ৷ বিতর্কের শেষে তা নিষ্পত্তিহীন থেকে যায় ৷ কিন্তু ভোটাভুটি ছাড়াই মোরারজি দেশাই পদত্যাগ করেন ৷ ফলে সরকারের পতন হয় ৷ এটা একমাত্র নজির ৷

এনডিএ-র দ্বিতীয় অনাস্থা প্রস্তাব: 2014 সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এনডিএ সরকার অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হচ্ছে । প্রথম অনাস্থা প্রস্তাবটি 2018 সালের 20 জুলাই পেশ করা হয় ৷ এনডিএ-র 325 জন সাংসদ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়ে জয় পান ৷ আর 126 জন বিরোধী সাংসদ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ৷ 2019 সালের লোকসভা ভোটে এনডিএ জিতে ক্ষমতায় ফিরে আসে ৷ তবে 2018 সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রস্তাবের জবাব দেওয়ার সময় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে 2024 সালে তাঁর দলের জয়কে সহজ করার জন্য 2023 সালে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে ।

Last Updated : Aug 8, 2023, 10:57 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.