কোভিড মোকাবিলায় সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই প্রয়োজন

author img

By

Published : May 13, 2021, 6:23 AM IST

কোভিড মোকাবিলায় সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই প্রয়োজন

মার্কিন চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফৌসির কথায়, দ্রুত দেশ ব্যাপী লকডাউন-ই একমাত্র ভারতকে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে পারে । আর এর সঙ্গে দরকার ব্যাপক হারে টিকাকরণ কর্মসূচি ।

অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ, বড় বড় হাসপাতালে গিয়েও বহু মানুষ ফিরে আসছেন না, গঙ্গায় ভেসে চলেছে একের পর এক দেহ - এ সব ভয়াবহ দৃশ্য আমাদের দেশের কোভিড বিপর্যয়ের বাস্তব ছবিটা তুলে ধরছে ।

মার্কিন চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফৌসির কথায়, দ্রুত দেশ ব্যাপী লকডাউন-ই একমাত্র ভারতকে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে পারে । আর এর সঙ্গে দরকার ব্যাপক হারে টিকাকরণ কর্মসূচি । বিভিন্ন রাজ্য কার্ফু এবং লকডাউনের মতো পদক্ষেপ করার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি । আশা করা গিয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকার গণ হারে টিকা দান কর্মসূচি চালাবে । যখন তারা 18 থেকে 45 বছর পর্যন্ত সকলকে টিকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল । কিন্তু, বাস্তবে অন্য ছবি ধরা পড়ল । ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতার কারণে, টিকা দান কর্মসূচি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ল ।

বর্তমানে যে গতিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেই হারে চললে গোটা দেশের সকলকে টিকা দেওয়া সম্পূর্ণ করতে কম করে তিন বছর সময় লাগবে বলেই মনে করা হচ্ছে । একই সঙ্গে এই আশঙ্কা আরও তীব্র হচ্ছে যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটি আরও ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে । এটা একমাত্র রোধ করা সম্ভব টিকা দানের মাধ্যমে । এই আশঙ্কার কারণেই প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভ্যাকসিন সংক্রান্ত গবেষণা এবং দ্রুত উৎপাদনের জন্য দুই হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করেছিলেন । আর আমেরিকা অনেকটাই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে একটা সন্তোষজনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে ।

অন্যদিকে, ভারত সরকার 35 হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য । কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, সেই বরাদ্দের মাত্র 14 শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকার খরচ করতে সক্ষম হয়েছে । যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর নামে এখন প্রতিটি রাজ্যকে 50 শতাংশ ভ্যাকসিন কেনার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে । আর এর ফলস্বরূপ দেশের মাত্র তিন শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ পেয়েছেন । বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে যেখানে বিনামূল্য ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, সেখানে ভারত সরকার প্রতিটি ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ করেছে 700 থেকে 1500 টাকা । ভারত সরকার এমন অসংলগ্ন ভ্যাকসিন নীতির কথা বললেও, সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে সকল বিষয় হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয় । সন্দেহ নেই, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত অযৌক্তিক ।

আরও পড়ুন : সেন্ট্রাল ভিস্তা বন্ধ করে অক্সিজেন-টিকা কিনুন, মোদিকে চিঠি বিরোধীদের

গত 30 এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট ভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে । এবং পেটেন্ট অ্যাক্টের 92, 100 বা 102 ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে । পেটেন্ট অ্যাক্ট, টিআরআইপিএস চুক্তি এবং দোহা ঘোষণা অনুসারে কেন্দ্র কাজ করছে বলে সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানিয়েছে । সুতরাং, কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছে । হাস্যকর বিষয় হল, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এই পেটেন্ট ছাড়ের পক্ষেই ছিল ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, পরিস্থিতি যখন ব্যতিক্রমী এবং জরুরি অবস্থা, তখন পুরো বিষয়টাকে জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনা করা উচিত । করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে , পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আমেরিকা পেটেন্ট ছাড়ের কথাও বলেছে । তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য পেটেন্ট ছাড়ই একমাত্র বিকল্প নয় । প্রযুক্তি গত উন্নতি, গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতির ব্যবহার, কাঁচামালের সহজ লভ্যতা, বিশেষজ্ঞদের বেশি করে নিয়োগ করে উৎপাদন বহুল পরিমাণ বাড়াতে হবে, যাতে চাহিদার সঙ্গে একটা সামাঞ্জস্য তৈরি হতে পারে । আসলে এমআরএনএ-এ ছাড়া ফাইজার এবং মর্ডানার মত সংস্থা ভারতে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবে না, যতই তাদের ছাড় দেওয়া হোক না কেন ।

আরও পড়ুন : নিঃশব্দে মানবসেবা, নার্সদের কুর্নিশ জানিয়ে টুইটারের ডিপি বদলালেন সচিন

দেশের সকল নাগরিক যাতে ভ্যাকসিন সহজে পেতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে । উন্নত দেশগুলির উচিত ভারতের মতো দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের কাজে সাহায্য করে । মজুত করা অতিরিক্ত ভ্যাকসিন ভারতের দিকে বাড়িয়ে দেওয়া । কেন্দ্র রাজ্য যখন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে, তখনই একমাত্র এই ভ্যাকসিন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.