পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

রাজনৈতিক ফায়দায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিশানায় রাজ্য

By

Published : Feb 7, 2021, 9:59 AM IST

রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার বিভিন্ন খামতি তুলে ধরে রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন হর্ষ বর্ধন । তুলে ধরলেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একাধিক পরিসংখ্যান ।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী

কলকাতা, 7 ফেব্রুয়ারি : রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের কথা বিভিন্ন সময় মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী । অথচ, শনিবার কলকাতায় এসে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবাকেই নিশানা করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষবর্ধন । পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রে বিভিন্ন খামতি উল্লেখ করে এ দিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, রাজনৈতিক ফায়দার কারণেই জনস্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে । তিনি উদাহরণ হিসাবে আয়ুষ্মান ভারত-এর প্রসঙ্গ টানেন ।

শনিবার রাজ্য বিজেপির চিকিৎসক সেল আয়োজিত একটি আলোচনাচক্রে অংশগ্রহণ করতে কলকাতায় আসেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন । এদিন সন্ধ্যার পর বেলেঘাটায় অবস্থিত নাইসেড (এনআইসিইডি)-এ যান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী । সেখানে কোবাস মেশিন সহ প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম ঘুরে দেখেন তিনি । গত জুলাই মাসে কলকাতার নাইসেড-এর পাশাপাশি মুম্বই এবং নয়ডায় অন্য দুটি সেন্টারে কোবাস মেশিন চালু করা হয়েছিল । অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বেশি কোরোনা টেস্টের জন্য দেশের তিন কেন্দ্রে অত্যাধুনিক এই মেশিনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । নাইসেড-এ শনিবার এই মেশিন পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী । এরপর সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "রাজনৈতিক ফায়দার কারণে কীভাবে জনস্বার্থ উপেক্ষা করতে পারে সরকার, পশ্চিমবঙ্গে তার জ্বলন্ত উদাহরণ আয়ুষ্মান ভারত ।" এর পর রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার বিভিন্ন খামতি তুলে ধরেন তিনি ।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এদিন জানান, 2018-র সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে 2019-এর জানুয়ারি পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে চালু ছিল আয়ুষ্মান ভারত । রাজনৈতিক কারণে আয়ুষ্মান ভারত বন্ধ করে দেওয়া হয় । ওই চার-পাঁচ মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি দেখেছেন, ওই সময়ে আয়ুষ্মান ভারত-এর অধীনে 17336 জন হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন । এর জন্য 17.09 কোটি টাকা খরচ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার । আয়ুষ্মান ভারত-এ দেশের যে কোনও স্থানে চিকিৎসা পরিষেবা নেওয়া যেতে পারে । কেউ হয়ত এরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন কিন্তু কর্মসূত্রে তিনি অন্য রাজ্যে থাকেন । সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । আয়ুষ্মান ভারত-এ সেখানকার কোনও হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পারেন । হর্ষবর্ধন বলেন, "এই পোর্টেবিলিটির কারণে আয়ুষ্মান ভারত-এ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের তুলনায় আন্দামান-নিকোবর, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ত্রিপুরার মানুষ এ রাজ্যে এসে চিকিৎসা করিয়েছেন । অন্য রাজ্যের বাসিন্দা এরাজ্যের হাসপাতালে আয়ুষ্মান ভারত-এর পরিষেবা নিয়েছেন অথচ, এ রাজ্যের বাসিন্দারা এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থেকেছেন ।"

এরপর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্রের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন । "2015 থেকে 2020, এই পাঁচ বছরে নবজাতক এবং পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের মৃত্যুর হার পশ্চিমবঙ্গে 20 শতাংশ কমলেও, প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে এই হার 27 থেকে 28 শতাংশ কমেছে ।" কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এদিন জানান, পশ্চিমবঙ্গে 1337 জন মানুষ প্রতি একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন । অথচ জাতীয় স্তরে সেই সংখ্যাটাইন 1142 । রাজ্যে প্রতি হাজার মানুষ পিছু 1.53 জন নার্স রয়েছেন, দেশে এই হার 2.31 জন । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র বক্তব্য অনুযায়ী এই হার 2.8 প্রতি হাজার থাকার কথা । পশ্চিমবঙ্গে প্রাইমারি হেল্থ সেন্টারগুলিতে এখনও পর্যন্ত 516 জন চিকিৎসকের পদ ফাঁকা অবস্থায় রয়েছে । বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের 573 টি পদ ফাঁকা অবস্থায় রয়েছে । পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ প্রাইমারি হেল্থ সেন্টার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্ধারিত গ্রেড-এর নীচে রয়েছে ।

আরও পড়ুন : মার্চ থেকেই টিকা পাবেন পঞ্চাশোর্ধরা, জানালেন হর্ষ বর্ধন

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান, 1378-এর মধ্যে 431 টি প্রাইমারি হেল্থ সেন্টার গ্রেডিংয়ের জন্য যোগ্য নয় । এর মধ্যে 145 টি প্রাইমারি হেলথ সেন্টার শূন্য গ্রেডের । গোটা রাজ্যে একটিই মাত্র প্রাইমারি হেল্থ সেন্টার রয়েছে যেটি সবথেকে বেশি গ্রেড অর্থাৎ, 5 নম্বর পেয়েছে । ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে 13266 টি সেন্টার, 2177 টি প্রাইমারি হেলথ সেন্টার, 544 টি কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের প্রয়োজন ।

আরও পড়ুন : বাংলার নির্বাচনে পরিবর্তন হবেই, দাবি বিজেপির হর্ষ বর্ধনের

সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যে 2600 টি এমবিবিএস সিট রয়েছে । প্রতি লাখ জনসংখ্যা পিছু 2.85 টি সিট । যেখানে অন্যরাজ্যে সংখ্যাটা ভিন্ন । কর্নাটকে 14.5, কেরালায় 10.33, তামিলনাড়ুতে 8.86, গুজরাতে 7.11, মহারাষ্ট্রে 6.3, অন্ধ্রপ্রদেশে 5.14 । কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এদিন জানান, গোটা দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি অ্যাকিউট ডায়রিয়া পশ্চিমবঙ্গে । এই সংখ্যা 21 লাখ 15 হাজার 771 । এই সংখ্যা গোটা দেশের 15.77 শতাংশ । পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গিও সবথেকে বেশি । রাজ্যে ডেঙ্গি 37764 , যা গোটা দেশের 20 শতাংশ । এ রাজ্যে হাম 3910, যা গোটা দেশের 21 শতাংশ ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details