পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

Israel-Hamas War: সাময়িক বিরতি নাকি যুদ্ধবিরতি, দ্বিধায় আটকে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 8, 2023, 8:19 PM IST

UNSC Resolution: ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আবারও একটি প্রস্তাব গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে । এর কারণ হল একটি শব্দ ৷ যা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিচ্ছে ৷ আর এই নিয়ে অন্যান্য সদস্য দেশ সম্মত হচ্ছে না । কেন এই শব্দ গুরুত্বপূর্ণ ? এই নিয়েই লিখেছেন ইটিভি ভারত-এর অরুণিম ভূঁইয়া ৷

Israel-Hamas War
Israel-Hamas War

নয়াদিল্লি, 8 নভেম্বর: মানবিক কারণে ‘বিরতি’ নাকি ‘যুদ্ধবিরতি’ ? যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য একটি প্রস্তাব গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন ঘিরেই দ্বিধায় রয়েছে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বা ইউএনএসসি ৷

ইজরায়েল ও ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে, তাতে একটি ‘মানবিক বিরতি’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৷ কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের 15 সদস্যের মধ্যে একাধিক দেশ আবার সাধারণ নাগরিকদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’র দাবি তুলেছে ৷ উল্লেখ্য, ইজরায়েলের উপর 7 অক্টোবর হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধে প্রায় 12 হাজার প্রাণ গিয়েছে ৷ যার মধ্যে গাজা উপত্যকাতেই 10 হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন ৷

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, সোমবার এই নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন ৷ তার পর সাংবাদিকদের মার্কিন উপ-রাষ্ট্রদূত রবার্ট উড এই নিয়ে বলেন, "আমরা মানবিক বিরতির বিষয়ে কথা বলেছি এবং আমরা সেই বিষয়টিই অনুসরণ করতে আগ্রহী ৷ তবে এটি গ্রহণযোগ্য কি না, তা নিয়ে কাউন্সিলের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে ।"

রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছিলেন যে তিনি গাজায় অবিলম্বে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’ চান ৷ তার পরই উড এই মন্তব্য করেন । উল্লেখ্য, এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো গাজার বাসিন্দাদের মানবিক ত্রাণ প্রদানের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করতে ব্যর্থ হল নিরাপত্তা পরিষদ ৷

আরও পড়ুন:যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে একমত হতে ব্যর্থ রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, 10000 পেরল মৃতের সংখ্যা

গত 16 অক্টোবর রাশিয়ার নেতৃত্বে একটি খসড়া প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে পেশ করা হয় ৷ সেখানে গাজায় একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি, 7 অক্টোবর থেকে বন্দি হওয়া সমস্ত লোকের মুক্তি, সাহায্যের সুযোগ এবং অসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় । নিরাপত্তা পরিষদে চিন, রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহী-সহ পাঁচটি ইউএনএসসি সদস্য পক্ষে ভোট দিলেও ফ্রান্স, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এর বিপক্ষে ভোট দেয় ৷ ব্রাজিল, ইকুয়েডর এবং সুইজারল্যান্ড-সহ ছয় সদস্য দেশ ভোটদানে বিরত থাকে ।

দু’দিন পর, ব্রাজিলের নেতৃত্বাধীন একটি খসড়া প্রস্তাবে গাজায় পূর্ণ ও নিরবচ্ছিন্ন সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার জন্য ‘মানবিক বিরতি’র প্রস্তাব পেশ করা হয় ৷ সেখানে সব অসামরিক নাগরিকের বিরুদ্ধে হিংসার নিন্দা করা হয় এবং ফিলিস্তিনিদের গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার জন্য ইজরায়েলের আদেশ প্রত্যাহার করতে বলা হয় । নিরাপত্তা পরিষদের 12টি সদস্য দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ৷ রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য ভোট দেয়নি৷ আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয় ৷

তারপর আবার গত 25 অক্টোবর রাশিয়া একটি নতুন খসড়া প্রস্তাব পেশ করে ৷ সেই প্রস্তাবে ইজরায়েলকে অবিলম্বে উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার করতে বলা হয় ৷ তবে এতে ইজরায়েলের ‘আত্মরক্ষার সহজাত অধিকার’ উল্লেখ করা হয়নি । চিন, গ্যাবন, রাশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী পক্ষে ভোট দিলেও নয়টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে এবং যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয় ।

একই দিনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি খসড়া রেজিলিউশন পেশ করে ৷ যেখানে গাজায় সাহায্যের অনুমতির জন্য যুদ্ধবিরতির বদলে মানবিক বিরতি করার প্রস্তাব দেওয়া হয় ৷ খসড়া প্রস্তাবে আত্মরক্ষার জন্য ‘সব রাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত অধিকার’ (এখানে পড়ুন ইজরায়েল) কে সমর্থন করা হয় ৷ আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানানো হয় এবং হামাসকে তার সমস্ত বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার কথা বলা হয় । 10টি দেশ পক্ষে ভোট দিলেও স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ও চিন ভেটো দেয় এবং ব্রাজিল ও মোজাম্বিক ভোটদানে বিরত থাকে ।

এই নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণে নিরাপত্তা পরিষদের বারবার ব্যর্থতার পর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ গত 26 অক্টোবর যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে । প্যালেস্তাইন এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানায় ৷ কিন্তু ইজরায়েল প্রতিবাদ করে ৷ তারা জানায়, এই প্রস্তাব ‘রাষ্ট্রসংঘ ও মানবজাতির জন্য একটি অন্ধকার দিন’ ৷ তাই তারা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে । কিন্তু রাষ্ট্রসংঘের এই ধরনের প্রস্তাব পাশ হলেও তা মেনে চলা কোনও দেশের পক্ষেই বাধ্যতামূলক নয় ৷ এই প্রস্তাবকে সাধারণত উপদেশ হিসেবে দেখা হয় ৷

আরও পড়ুন:গাজার শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা, সাময়িক যুদ্ধবিরতির ডাককে প্রত্যাখান নেতানিয়াহুর

এই কারণেই রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবের চেয়ে নিরাপত্তা পরিষদে পাশ হওয়া প্রস্তাব গাজার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কার্যকরী হতে পারে ৷ সেখানে শান্তির পরিস্থিতি আবার তৈরি করতে পারে ৷ নিরাপত্তা পরিষদ কী চাইছে, তা তার সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হয় ৷ এক্ষেত্রে ব্যাপারটা রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদে নেওয়া সিদ্ধান্তের মতো নয় ৷ এখানে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকে ৷

রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে 15 জন সদস্য রয়েছে । এর মধ্যে পাঁচটি - চিন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - স্থায়ী সদস্য । বাকি 10 জন সাধারণ পরিষদ দ্বারা দুই বছরের মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয় । বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তব পরিস্থিতির উপর তা নির্ভর করে সদস্য দেশগুলো এই সদস্যপদ ও কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে । নিরাপত্তা পরিষদে কোনও প্রস্তাব গ্রহণের জন্য 9টি ভোটের প্রয়োজন হয় ৷ কিন্তু তার পরও যদি কোনও স্থায়ী সদস্য না ভোট বা ভেটো দিয়ে দেয়, তখন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় না ৷

সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনের পর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন যে তাঁর দেশ ‘সামান্য বিরতি’ দিতে ইচ্ছুক । সুতরাং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ‘মানবিক বিরতি’ এবং অন্য দেশগুলির ‘মানবতাবাদী যুদ্ধবিরতি’র দাবির মধ্যে পার্থক্য কোথায় ?

উসানাস ফাউন্ডেশন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও অভিনব পান্ডিয়া ইটিভি ভারতকে বলেছেন, "একটি মানবিক বিরতি দেশগুলিকে তাদের নিজস্ব সুবিধায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা দেয় । এটি কেবল অসামরিক লোকদের ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করার জন্য একটি অ্যাড-হক ব্যবস্থা । সংশ্লিষ্ট দেশ বা পক্ষ যেকোনও সময় যুদ্ধ শুরু করতে পারে ।’’ অন্যদিকে, পান্ডিয়া ব্যাখ্যা করেছেন যে একটি ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’ একটি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা ।

তিনি বলেন, "এটি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কাছ থেকে শত্রুতা বন্ধ করার আহ্বান জানায় ৷" ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত ইজরায়েলকে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে চায় । যদিও গ্লোবাল সাউথের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ উভয় পক্ষই শত্রুতা বন্ধ করতে চায় ৷ যা রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব থেকেই স্পষ্ট হয়েছে ৷

উসানাস ফাউন্ডেশন আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে ভারতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত নাওর গিলন বলেন, "ভারত কি হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করবে ?’’ তাঁর আরও দাবি, যারা যুদ্ধবিরতির আহ্বান করছে, তারা হামাসকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে । তিনি আরও বলেন, "কিন্তু হামাসকে শীর্ষস্তর থেকে শেষ করার জন্য আমাদের সময় দরকার ৷ এটাই মানুষকে সন্ত্রাসবাদের পথে নিয়ে না যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবে ।"

আরও পড়ুন:আমেরিকার চাপ, গাজায় স্বল্প সময়ের যুদ্ধ-বিরতিতে সায় ইজরায়েলের

ABOUT THE AUTHOR

...view details