পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

বাংলার মাঝিদের হেনস্তা ঝাড়খণ্ড পুলিশের, প্রতিবাদে মালদায় ফেরি চলাচল বন্ধ

By

Published : Jul 3, 2021, 7:35 PM IST

নৌকা নিয়ে মালদার মাঝিরা ঝাড়খণ্ডে গেলেই সেখানে পুলিশি হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ তাই মাঝিদের তরফে ফেরি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ তাঁরা এই বিষয়ের প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবিতে সরব হয়েছেন ৷

malda boatmen stopped ferry service due to jharkhand police harassment
বাংলার মাঝিদের হেনস্তা ঝাড়খণ্ড পুলিশের, প্রতিবাদে গঙ্গায় ফেরি চলাচল বন্ধ

মালদা, 3 জুলাই : করোনার জাল । তাতেই আটকে গিয়েছেন গঙ্গার মাঝিরা । দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত পরশু থেকে শুরু হয়েছে ফেরি পরিষেবা । কিন্তু যাত্রীদের নিয়ে ঝাড়খণ্ডের ঘাটে পৌঁছোতেই সেই রাজ্যের পুলিশের নিশানায় চলে আসছেন মালদার মাঝিরা ।

অভিযোগ উঠেছে, রাজমহল ঘাটে যাত্রী নামাতে গেলে কিংবা সেখান থেকে নৌকায় যাত্রী তুলতে গেলেই এ’রাজ্যের মাঝিদের মারধর করছে ঝাড়খণ্ড পুলিশ । কয়েকজন মাঝিকে রাজমহল থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখার অভিযোগও উঠেছে । প্রতিবাদ জানিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি পারাপার বন্ধ করে দিয়েছেন মালদার মাঝিরা । বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে মালদা জেলা পুলিশ ।

উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে গঙ্গার মানিকচক ঘাটে লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে । নদীতে তলিয়ে যায় আটটি লরি । দু’জনের মৃত্যুও হয় । ওই ঘটনা নিয়ে এখনও মামলা চলছে । তার জেরেই দীর্ঘ সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ পরিষেবা । এই অবস্থায় দু’পারের মানুষের নদী পেরোনোর একমাত্র ভরসা নৌকা ।

আরও পড়ুন :মহানন্দার বুকে অবৈধ নির্মাণ, কর নেয় পুরসভা

করোনার জেরে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে সেভাবে গঙ্গায় যাত্রী পারাপার করতে পারেননি জেলার মাঝিরা । তবু প্রতিদিনই কিছু নৌকা চলেছে । গত 1 জুলাই থেকে 50 শতাংশ যাত্রী পারাপার করার সরকারি অনুমোদন মিলেছে । আবার গঙ্গায় নৌকা ভাসিয়েছেন মানিকচক ঘাটের প্রায় 300 মাঝি । কিন্তু ওপারের পুলিশের অত্যাচারে তাঁরা ফেরি চলাচল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন । এতে গতকাল থেকে চরম সমস্যায় পড়েছেন দু’পারের মানুষজন । গতকাল থেকেই মানিকচক ঘাটে প্রচুর মানুষের ভিড় ।

এক মাঝি বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ থাকায় লকডাউনের মধ্যেও আমাদের যাত্রী পারাপারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল । অবশ্য অল্প কিছু নৌকা সেই অনুমতি পেয়েছিল । গতকাল সকালেই আমাদের কাছে ফোন আসে, ঝাড়খণ্ডের রাজমহল থানার পুলিশ নৌকা চালাতে দেবে না বলে জানিয়েছে । তারা মাঝিকে মারছে, থানায় নিয়ে যাচ্ছে, এমনকি মাঝির সঙ্গে থাকা টাকাপয়সাও কেড়ে নিচ্ছে । এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে ।’’

আরও পড়ুন :লকডাউনে কাজ নেই, সন্তানের চিকিৎসার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হরিশ্চন্দ্রপুরের দুঃস্থ দম্পতি

তাঁর দাবি, আগেরেবার তাঁরা অনেক বলে কয়ে রাজমহল থানা থেকে মাঝিদের ছাড়িয়ে এনেছিলেন । কিন্তু বারবার এমন ঘটনা মানা সম্ভব নয় বলে বিশ্বনাথ ঘোষ স্পষ্ট জানিয়েছেন ৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা নৌকা চালানো বন্ধ করে দিয়েছি । যাত্রীদের কী হবে, তা তাঁরাই বুঝবেন । আর বুঝবে দুই রাজ্যের পুলিশ, প্রশাসন আর সরকার । আমরা চাইছি, আমাদের নৌকা চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক ।’’

একই সঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘নৌকায় 80 জন যাত্রীকে নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও আমরা মাত্র 30-35 জন যাত্রীকে নৌকায় তুলি । বাংলায় আমাদের কোনও সমস্যা নেই । সব সমস্যা ওপারে । অথচ ওপারের ঘাটও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের । আমরা এই রাজ্যের ঘাটে নৌকা লাগাই । তবু ওই রাজ্যের পুলিশ আমাদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে ।”

একই বক্তব্য আরেক মাঝি সাবির আলির । তিনি বলেন, “আমাদের সবকিছুই এই রাজ্যের । ওপারের ঘাটের মালিকও এ’রাজ্যের সরকার । কিন্তু লকডাউনের দোহাই দিয়ে ঝাড়খণ্ডের পুলিশ সেখানকার ঘাটে আমাদের নৌকা ভিড়াতে দিচ্ছে না । এদিকে আমাদের কোনও সমস্যা নেই । যা সমস্যা, সব ওপারে । রাজমহল থানার পুলিশ যাত্রীদেরও মারধর করছে ।”

আরও পড়ুন :বর্ষা শুরু হতেই গঙ্গার চোখরাঙানি, ভাঙন মালদার দুই ব্লকে

রাজমহলে বাবা অসুস্থ । তাই গতকালই বাড়ি যাওয়ার জন্য ছেলেমেয়ে নিয়ে কাটিহার থেকে মানিকচক ঘাটে এসেছিলেন নুরজাহান খাতুন । নৌকা না পেয়ে রাতটা এক পরিচিতের বাড়িতে কাটিয়েছেন । আজ সকাল ছ’টায় ফের ঘাটে চলে এসেছেন । তিনি বলেন, “বাবা প্রচণ্ড অসুস্থ । সকাল থেকে ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘাটে দাঁড়িয়ে আছি । বাড়ি থেকে বারবার ফোন আসছে । কিন্তু নৌকা না থাকায় নদী পেরোতে পারছি না । এপারে কোনও সমস্যা নেই । ওপারেই পুলিশ নৌকা চালাতে দিচ্ছে না । বাবার দুশ্চিন্তায় গতকাল থেকে পেটে কিছু দিতে পারিনি । মাঝিরা কিছু বলতে পারছেন না । আমি বাড়ি যেতে চাই । পরের বাড়িতে কতদিন থাকব ?”

সমস্যা মেটাতে গতকালই মানিকচক থানার আইসি সঞ্জীব বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করেন মাঝিরা । সঞ্জীববাবু জানিয়েছেন, মাঝিদের মুখে সব শুনে গতকাল রাতেই তাঁরা রাজমহল থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন । ওই রাজ্যের পুলিশ জানাচ্ছে, সেখানে করোনার প্রকোপ মারাত্মক আকার নিয়েছে । তাই উপরমহলের নির্দেশেই তাঁরা নৌকা চলাচল করতে দিচ্ছেন না । যদিও বিষয়টি দুই রাজ্যের, তবুও মাঝি ও যাত্রীদের কথা ভেবে তাঁরা ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছেন । তবে কবে এই সমস্যার সমাধান হবে, তা তিনি বলতে পারছেন না ।

আরও পড়ুন :মালদার আম বিদেশে রপ্তানি করতে নয়া প্যাক হাউসের ভাবনা প্রশাসনের

বিষয়টি নিয়ে মানিকচক পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী কবিতা মণ্ডল বলেন, “এই মুহূর্তে দুর্ঘটনার জেরে মানিকচক ঘাট থেকে লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ রয়েছে । যদিও ফেরি নৌকার চলাচল চলছিল । শুনলাম, এখন নৌকাও ওপারে নিয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না । কী কারণে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক জানি না । এনিয়ে বিডিও এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলব । দু’পারের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা করব ।”

ABOUT THE AUTHOR

...view details