ETV Bharat / state

32 দিনের ব্যবধানে দুর্ঘটনায় মৃত দুই পরিযায়ী ভাই, ভোট-বাজারে শ্রমিকদের দুর্দশার ছবি মালদায় - Migrant Labour Death

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 15, 2024, 3:22 PM IST

Updated : Apr 15, 2024, 3:45 PM IST

Migrant Labour Death
Migrant Labour Death

Migrant Labour Death: ছত্তিশগড়ের রায়পুরে কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল মালদার বাসিন্দা আজহারউদ্দিন হকের ৷ তাঁর ভাইও 32 দিন আগে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান ৷ ভোটের আবহে মালদার পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷

32 দিনের ব্যবধানে দুর্ঘটনায় মৃত দুই পরিযায়ী ভাই

মালদা, 15 এপ্রিল: ব্যবধানটা মাত্র 32 দিনের ৷ একই বাড়িতে দ্বিতীয়বার কান্নার শব্দে ভারি হয়ে উঠল বাতাস ৷ পেটের জ্বালা 32 দিনের মধ্যে কেড়ে নিল দুই ভাইকে ৷ ভোটের বাজারে আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল মালদার পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা ৷ কোনও রাজনৈতিক দল কি এই শ্রমিকদের যথার্থ দিশা দিতে পারবে ? নাকি রাজনীতির পাঁকে এভাবেই একের পর এক তরতাজা জীবন বলি হতে থাকবে ৷ প্রশ্নটা কিন্তু উঠেই যাচ্ছে ৷

মালদার রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের রতুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ফরিদপুর গ্রাম ৷ বর্ধিষ্ণু এই গ্রামের প্রায় সবাই পরিযায়ী শ্রমিক ৷ গ্রামের বাসিন্দা আনিসুর রহমান শক্তি থাকাকালীন ভিনরাজ্যে কাজ করতেন ৷ পরবর্তীতে তাঁর পাঁচ ছেলেও সেই রাস্তায় নেমে পড়েন ৷ কারণ, অভাবের সংসারে বাইরে কাজে না গেলে পেটের দানা জোগাড় হবে না ৷ সেই অভাবই 32 দিনের ব্যবধানে কেড়ে নিয়েছে তাঁর দুই ছেলেকে ৷

গত 13 মার্চ রাতে বাজার করতে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর ছোট ছেলে, 32 বছর বয়সী সরিফুল হক ৷ রবিবার একই কাজে গিয়ে টাওয়ার থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বড় ছেলে, 35 বছরের আজহারউদ্দিন হকের ৷ দুই ঘটনাই ঘটেছে ছত্তিশগড়ের রায়পুরে ৷ সোমবার রাতের মধ্যে আজহারউদ্দিনের মৃতদেহ ঘরে ফিরে আসার কথা ৷

পেট ভরানোর দাম যে এত, ভাবতে পারেননি হাসনারা বিবি ৷ আনিসুরের স্ত্রী ৷ এক মাসের ব্যবধানে পাঁচ ছেলে যে তিনে নেমে আসবে কল্পনাতেও ছিল না তাঁর ৷ তিনি বলছেন, “হোলির আগের দিন বড় ছেলে আজহার ছত্তিশগড়ের রায়পুরে টাওয়ারের কাজে গিয়েছিল ৷ গতকাল দুপুরে টাওয়ারের তার ছিঁড়ে উপর থেকে নিচে পড়ে যায় ৷ সঙ্গে সঙ্গেই মরে গিয়েছে ৷ ওখান থেকে টাওয়ার মিস্ত্রি ফোন ওর বাবাকে বলেছে, তোমার ছেলে মরে গেল ৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ওখানে কাজ করতে গিয়েই 32 দিন আগে ছোট ছেলে মারা গিয়েছে ৷ একই ঠিকাদারের অধীনে দুই ভাই কাজ করছিল ৷ আমার এখন কী অবস্থা, তোমরাই বলতে পারবে ৷ দুই ছেলে চলে গেল, এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও সাহায্য পাইনি ৷ যেহেতু ছোট ছেলে বাজার করতে গিয়ে মারা গিয়েছে, তাই ঠিকাদার জানিয়ে দিয়েছে 50 হাজার টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে না ৷’’

তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘তার মধ্যে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাইক সারাতে পাঁচ হাজার আর দেহ নিয়ে গ্রামে ফিরতে আরও কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়েছে ৷ এবার বড়টা মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তিন নেতা পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছে ৷ আর কেউ কোনও সাহায্য করেনি ৷ আজ ওরা বাড়ি আসবে বলেছিল৷ আসেনি ৷”

এ দিন কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না আজহারউদ্দিনের স্ত্রী উম্মে কুলসুম ৷ নির্বাক বাবা আনিসুর সাহেবও ৷ তিনি কোনোরকমে বলেন, “বাইরে কাজে গিয়ে মারা গেলে সরকার নাকি দু’লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয় ৷ আমরা তো কিছুই পাইনি ৷ এখন দুই ছেলের পরিবারের কী হবে ?” গ্রামের বাসিন্দা আলমগীরের বক্তব্য, “আনিসুর সাহেবের পাঁচ ছেলে ৷ সবাই ভিনরাজ্যে কাজে যায় ৷ এক মাসের ব্যবধানে তাঁর দুই ছেলে মারা গিয়েছে ৷ এই পরিবারটি খুব গরিব ৷ এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সহায়তা পায়নি ৷ আমরা চাই, দুঃস্থ পরিবারটি যেন সবরকম সরকারি সুবিধে পায় ৷”

আরও পড়ুন:

  1. করমণ্ডলে দুর্ঘটনার 10 মাস পরও নিখোঁজ কাকদ্বীপের 2 পরিযায়ী শ্রমিক, ভিক্ষাবৃত্তি পরিবারের
  2. অমানবিক হাসপাতাল ! পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ছাড়াতে জমি বন্ধক পরিবারের
  3. বাংলার পরিযায়ী শ্রমিককে কেরলে গলা কেটে খুন, হত্যার পর দেহ পুঁতে দিল বন্ধুরা !
Last Updated :Apr 15, 2024, 3:45 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.