জলপাইগুড়ি, 21 মে: চা বাগানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কত, তা জানতে বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র বসাতে চলেছে আবহাওয়া বিভাগ । উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের চা বাগান এলাকায় বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভর করে চায়ের উৎপাদন । ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জানা গেলে চা বাগানের পরিচর্যা করতে সুবিধা হবে ৷ পাশাপাশি আবহাওয়ার সঠিক বার্তা দেওয়া যাবে বলে মত জাতীয় আবহাওয়া দফতরের । হাওয়া অফিসের এই উদ্যোগে যারপরনাই খুশি চা বাগানের মালিকপক্ষ ।
সিকিম ও উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবহাওয়া আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, "উত্তরবঙ্গ ও সিকিম অঞ্চলটা চা বাগানে ঘেরা । সেখানকার জন্য নতুন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে । চা বাগানে যত বেশি সংখ্যক রেইন গজ বা বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র বসানো যায় সেই চেষ্টা হচ্ছে । সেই কাজ প্রাথমিক ভাবে শুরুও হয়ে গিয়েছে । আমরা আশা করছি, আসন্ন বর্ষার মধ্যেই কিছু চা বাগানে বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র বসাতে পারব ।"
গোপীনাথ রাহার কথায়, চা বাগানে বা কৃষি বলয়ের উৎপাদন অনেকটাই নির্ভর করে বৃষ্টির উপরে । ফলে কত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হল, সেটা জানতে পারলে খুবই সুবিধা হয় । যেমন কত খরচ হবে, কত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে - এই সবই নির্ভর করে কত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে বা কতদিন খরা হচ্ছে তার উপর ৷ এই রেইন গজগুলো বসানো হলে কতখানি বৃষ্টি হল তার হিসেব পাবে আবহাওয়া দফতর । সেটি চা বাগানের জন্য যেমন খুবই উপকারী হবে, তেমনই আবহাওয়া দফতরের কাছেও এ বিষয়ে তথ্য থাকবে । প্রতিদিন যদি এই বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র ঠিকমতো মনিটরিং করা যায়, তাহলে আবহাওয়ার সঠিক সতর্কতা বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে । কোথায় বেশি বৃষ্টি হচ্ছে, কোথায় কম বৃষ্টি হচ্ছে তাও জানতে পারবে হাওয়া অফিস ।
গোপীনাথ রাহা আরও জানান, আগে বৃষ্টির পরিমাণ কত হল তা জানার জন্য রেইন গজ স্টেশন কম ছিল । গত কয়েক বছর ধরে কীভাবে রেইন গজ নেটওয়ার্ক বাড়ানো যায় সেই চেষ্টা চালানো হচ্ছিল । এখন রেইন গজ বেড়েছে । 70টি রেইনফল রেকর্ডিং স্টেশন আছে । যার মধ্যে 20টি (এডব্লিউএস) অটোম্যাটিক ওয়েদার স্টেশন আছে । যার থেকে তাপমাত্রার ডেটা পায় হাওয়া অফিস । সম্প্রতি চারটে জায়গায় অটোম্যাটিক ওয়েদার স্টেশন বসানো হয়েছে । এই চারটে জায়গা হল মালবাজার স্কুল, বানারহাট স্কুল,মাথাভাঙা কলেজ ও ধুপগুড়ি কলেজ । এছাড়াও গৌড়বঙ্গের দিকেও বসানো হয়েছে এডব্লিউএস ।
চা বাগানের মালিক তথা জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষুদ্র চাষী সমিতির সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, "রাজ্যের চা উৎপাদনের 52% চা আমরা দিয়ে থাকি । আইএমডি-র এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই । আমরাও জানতে চাই, কতটা জল চা বাগানে দিতে হবে । কারণ সব চা বাগানে সেচের সামর্থ সবার নেই । এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে এ বছর বিরাট ক্ষতির মুখে চা বাগান । কারণ দীর্ঘদিন পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না । ফলে চা উৎপাদনও সেভাবে হচ্ছে না । আইএমডি যদি বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র বসায়, তাহলে আমরা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জানতে পাব এবং বৈজ্ঞানিক ভাবে চা বাগানের পরিচর্যা ও সেচের কাজ করতে পারব ।"
চা বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অমৃতাংশু চক্রবর্তী বলেন, "এ বার যেভাবে বৃষ্টি কম হয়েছে তাতে আমরা বিরাট ক্ষতির মুখে । চা বাগান বাঁচানোই চ্যালেঞ্জ । ফলে চা বাগানে বৃষ্টি পরিমাপক যন্ত্র বসালে আমাদের সুবিধা হবে ।"
আরও পড়ুন: