ETV Bharat / state

গ্রামের মেয়ের উড়ান, পরিবার-সমাজের সঙ্গে লড়াই করে আজ কলকাতা বিমানবন্দরে ম্যানেজার পম্পা

author img

By PTI

Published : Mar 8, 2024, 8:05 PM IST

International Women's Day 2024: পরিবার ও সমাজের সঙ্গে তীব্র লড়াই করে এখন কলকাতা বিমানবন্দরে ম্যানেজার অসমের পম্পা মহন্ত ৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে শুনব প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ের আকাশে ওড়ার কাহিনি ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT

কলকাতা, 8 মার্চ: অসমের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের সাধারণ এক মেয়েই আজ কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি বিমানসংস্থার ম্যানেজার ৷ যা মূলত পরিচিত একটি পুরুষ-শাসিত পেশা হিসাবে ৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জানব অভাব-অনটন এবং পরিবার ও সমাজ থেকে প্রত্যাখ্যানের পর পম্পা মহন্তর লড়াই, যা আর পাঁচজনের কাছে হয়ে উঠতে পারে অনুপ্রেরণা ৷

বর্তমানে তিনি কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশ এয়ারের বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক। তাঁর বিমান সংস্থার নিরাপত্তা, ফ্লাইট অপারেশন, যাত্রী পরিচালনা, প্রশাসন, ইত্যাদির পরিচালনা করেন পম্পা মহন্ত । অসমের একটি গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া পম্পা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন ৷

তাঁর কথায়, "আমার মা ছাড়া কেউই চাননি যে, আমি আমাদের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বেরিয়ে কাজ করি । আমি আমার পরিবারের কাছ থেকে কোনও সমর্থন পাইনি ৷" এমনকি তিনি তাঁর বাবার কাছ থেকেও আর্থিক সহায়তা পাননি, কারণ তিনি মহিলাদের সম্পর্কে আলাদা ধারণা পোষণ করতেন । পম্পা সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেন, "আমার বাবা চেয়েছিলেন যে আমি বাড়িতেই থাকি এবং পরে একজন গৃহিণী হই । এই সত্য জানাতে আমার কোনও দ্বিধা নেই ৷" তাঁকে সীমিত সম্পদ এবং সামাজিক নিয়মের মতো বেশকিছু চ্যালেঞ্জের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল ৷ তাঁর পরিবার মেয়েদের উচ্চ শিক্ষালাভে বিশ্বাসী ছিল না ৷ তবু তিনি কখনও হাল ছেড়ে দেননি । তাঁর মা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তাঁর পথে আসা প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগানোর পাঠ দিয়েছিলেন ।

বাবার বদলির চাকরি হওয়ায় পম্পা মহন্তকে তাঁর স্কুলের দিনগুলিতে অনেক জায়গায় ঘুরতে হয় ৷ তবে পরিস্থিতির সঙ্গে খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পারতেন তিনি ৷ তিনি কলেজে পড়ার সময় একটি কল সেন্টারে পার্ট-টাইম চাকরি করতেন ৷ সেই সময়টা বেশ কঠিন ছিল তাঁর জন্য ৷ পম্পার কথায়, "এমন সময় ছিল যখন আমি ঠিকমতো ঘুমোতে পারতাম না, কারণ আমাকে কলেজে যেতে হত এবং ক্লাসের পরে কাজে যেতে হত ৷"

পম্পা মহন্ত গুয়াহাটির একটি ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেছেন ৷ নলবাড়ি জেলার কুটালকুসি গ্রাম থেকে সেখানে রোজ যাওয়া যে কোনও মানুষের কাছে দুঃস্বপ্ন বলে মনে হবে ৷ পম্পা বলেন, "আমাকে গুয়াহাটি পৌঁছনোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা যেতে হত ৷"

কেন তিনি অসামরিক বিমান পরিবহণে কেরিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন তা জানতে চাইলে পম্পা বলেন, "আমি সবসময় এই শিল্পটিকে খুব আকর্ষণীয় বলে মনে করেছি ৷ এখানে প্রতিটি দিন একটি নতুন দিন ।" তাঁর মতে, তিনি যে কাজটি করেন তা অত্যন্ত চাহিদাপূর্ণ কারণ তিনি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে তার বিমানসংস্থার উড়ানগুলির মসৃণ পরিচালনার বিষয়টি দেখাশোনা করেন ৷ যাত্রী থেকে সহকর্মী, তাঁকে প্রতিদিন সব দিক পরিচালনা করতে হয় । যাত্রীদের সর্বোত্তম পরিষেবা দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলের অভিযোগের সমাধান করা, সবই তিনি করেন অবলীলায় ৷

কলকাতার বিমানবন্দর অপারেটরস কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সর্বেশ গুপ্ত বলেন, একজন বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকের কাজ খুবই চ্যালেঞ্জিং । এয়ারপোর্ট ম্যানেজাররা এয়ারলাইন্সের স্থানীয় প্রতিনিধি । ক্যাপ্টেন গুপ্তা বলেন, তাঁরা সামগ্রিক ফ্লাইট পরিচালনা, যাত্রী পরিচালনা, প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সাধনের পাশাপাশি নিরাপত্তার মতো দিনগুলিও দেখেন ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষদের সেই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আরও বেশি করে মহিলারা নেতৃত্বে রয়েছেন ৷

পম্পার কথায়, "আমি কাজ শুরু করার পর থেকে আমার পরিবারে অনেক পরিবর্তন হয়েছে । সবচেয়ে ভালো কথা আমার বাবা একজন পরিবর্তিত মানুষ । তাঁর উপলব্ধি পরিবর্তিত হয়েছে এবং আমি এতে খুশি । আমার চার ভাগ্নি আছে এবং আজ তাঁরা সবাই আমার মতো হতে চায় ৷"

তিনি 2011 সালে একটি বেসরকারি বিমান সংস্থায় প্রশিক্ষণার্থী হিসাবে বিমান শিল্পে যোগদান করেন । তাঁর পোস্টিং ছিল গুয়াহাটিতে । সেখান থেকে তিনি কলকাতা, মালদ্বীপ, কোয়েম্বাটুর, বেঙ্গালুরু, আহমেদাবাদে ঘুরে আবারও কলকাতায় ফিরেছেন ৷ আর এ বার তিনি বিমানসংস্থার বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক ।

কলকাতার আরেক মহিলা বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক, এমিরেটসের অনুশীলা চতুর্বেদী পিটিআইকে বলেন যে, "এটি সবসময়ই সমান সুযোগের শহর । কলকাতায়, লোকেরা দেবী দুর্গা এবং কালীর কাছে প্রার্থনা করে এবং মহিলাদের উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয় । ফ্লাইট অপারেশন একটি খুব গতিশীল সমস্যা এবং প্রতিদিন একটি নতুন চ্যালেঞ্জ । বিমানবন্দরের সমস্ত স্টেকহোল্ডাররা সর্বদা আমাকে সহযোগিতা করেছেন এবং কারও কাছ থেকে কোনও বৈষম্য করা হয়নি ৷"

আরও পড়ুন:

  1. মিলে সুর মেরা তুমহারা, নারী দিবসে পুরুষদের কী বার্তা জি20 মাতানো হাওড়ার সরোদ সিস্টার্সের
  2. 56 পুরুষ মাঝে অকুতোভয় ! চিনুন বিএসএফের প্রথম মহিলা স্নাইপার সুমনকে
  3. ঈশ্বরের সুন্দর সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নিজের খেয়াল রাখুন এইভাবে
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.