ETV Bharat / state

50 বছরেও কথা রাখেনি ভোটপাখিরা, নড়বড়ে বাঁশের সেতুই ভরসা দামোদরে - LOK SABHA ELECTION 2024

Unstable bamboo bridge: দামোদরে নড়বড়ে বাঁশের সেতুই ভরসা তিন জেলার মানুষের ৷ গত 50 বছর ধরে প্রতিবার ভোটেই নানা প্রতিশ্রুতি মিলেছে, তবে কথা রাখেননি 'ভোটপাখি'রা ৷

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 25, 2024, 9:04 PM IST

Etv Bharat
Etv Bharat
নড়বড়ে বাঁশের সেতুই ভরসা দামোদরে

আসানসোল, 25 এপ্রিল: কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে দামোদর । ওপারে ধূসর বিহারীনাথ পাহাড় । আর দামোদরের দুইপাড়কে জুড়েছে একটি বাঁশের সেতু । ঠিক যেন ছবির মতোই সুন্দর । কিন্তু দেখতে সুন্দর হলেও এই নড়বড়ে বাঁশের সেতু নিয়ে রয়েছে তিন জেলার মানুষের দুর্দশার গল্প । গত 50 বছর ধরে পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার প্রান্তিক এলাকার মানুষদের দাবি, দামোদরের উপরে এইস্থানে একটি পাকা সেতু নির্মিত হোক । প্রতিবারই ভোট এলে প্রতিশ্রুতি মেলে ঝুরঝুরি । কিন্তু ভোট পেরিয়ে যাওয়ার পর আর কিছুই হয় না । নড়বড়ে বাঁশ-কাঠের সেতু দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয় তিন জেলার মানুষকে ।

এপারে পশ্চিম বর্ধমান আর ওই পারে বাঁকুড়া । ওই পথ দিয়েই সহজে যাওয়া যায় পুরুলিয়া জেলাতেও । যোগাযোগের মাধ্যম নড়বড়ে একটি বাঁশের সেতু । না-হলে ঘুরপথে প্রায় 30 থেকে 40 কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে আসা যাওয়া করতে হয় । বাঁকুড়ার শালতোড়া বিধানসভার প্রায় 30টি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দার ভরসা এই সেতু । প্রতিদিনই তাঁদের দিনমজুরি করতে, সবজি বিক্রি করতে, ইস্কোতে চাকরি করতে এই পারে পশ্চিম বর্ধমানে আসতে হয় । এই বাঁশের নড়বড়ে সেতুই তাঁদের যোগাযোগ ও উপার্জনের মাধ্যম ।

বর্ষাকালে সেতু ভেঙে যায় । তখন নৌকাতে চড়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দামোদর পেরোতে হয় । আবার সন্ধের আগেই ফিরতে হয় বাড়ি । একটু রাত হয়ে গেলে সেই যোগাযোগের মাধ্যমও আর থাকে না ।

শুধু তাই নয়, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার এই প্রান্তিক অঞ্চলগুলির থেকে বাঁকুড়া কিংবা পুরুলিয়া সরকারি জেলা হাসপাতাল অনেক দূর । সেই তুলনায় মাত্র 10 কিলোমিটারের মধ্যেই আসানসোল জেলা হাসপাতাল । ফলে সহজেই বাসিন্দারা পৌঁছতে পারেন আসানসোলে । কিন্তু অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এই বাঁশের সেতু । সকালে কোনওমতে চারচাকা গাড়ি পার করা গেলেও রাতবিরেতে আর কেউ ঝুঁকি নেন না । অতীতে এই বাঁশের সেতু থেকে গাড়ি পড়ে দামোদরে ভেসে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে ।

তিন জেলার বাসিন্দাদের দাবি একটি পাকা সেতু হোক । কারণ এই স্থানে সেতু হলে তিন জেলার মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থা আরও অনেক বেড়ে যাবে । উন্নতি হবে তিন জেলারই । এই দাবি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে, ধরনা অবস্থান হয়েছে । আশ্বাস মিলেছে । কিন্তু অভিযোগ, কেউ করেনি কিছুই । না কেন্দ্র, না রাজ্য।

ভোটের মুখে সেই সেতুই আবার নতুন করে ইস্যু হয়ে উঠেছে । দুই পারের মানুষজনই দাবি করছেন ৷ ভোট এলে নেতারা এসে প্রতিশ্রুতি দেন, এবার সেতু হবে । কিন্তু ভোট পেরিয়ে গেলেই ভোকাট্টা ।

অতীতে রাজ্য সরকার একবার তোড়জোড় করেছিল সেতু তৈরি করার । কিন্তু অজ্ঞাতকরণে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে । পশ্চিম বর্ধমানের যে এলাকায় বাঁশের সেতুটি শুরু, সেটি আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা । তার বিধায়ক বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল । ওপারে শালতোড়ার বিধায়কও বিজেপির, চন্দনা বাউরি । দুই বিধায়কই একসঙ্গে এই সেতুতে এসে দাবি করেছিলেন, পাকা সেতু তৈরি হোক। কিন্তু কেন্দ্রের ডবল ইঞ্জিন সরকার চলা সত্ত্বেও কেন তারা কেন্দ্রের কাছে তদ্বির করলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে । এই একই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসও ৷

অগ্নিমিত্রা পাল অবশ্য জানিয়েছিলেন, "রাজ্য যদি তাঁদের জানায় তারা এই সেতু করতে অপারগ, তাহলে কেন্দ্র এই সেতু বানিয়ে দেবে ।" বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার দাবি, জিতলে সব সমস্যার তদারক করে তার সমাধান করবেন ৷

কিন্তু এতদিন সবই কথার কথা হয়ে রয়ে গিয়েছে । সেতু বানাতে উদ্যোগী হননি কেউ । এর ফলে নিরন্ন, দুস্থ হাজার হাজার মানুষ এই নড়বড়ে বাঁশের সেতু দিয়েই পায়ে হেঁটে, সাইকেল নিয়ে, প্রতিদিন যাতায়াত করে । ভোটের মুখে তাঁরা স্বপ্ন দেখেন পাকা সেতু হবে । কিন্তু কবে হবে কেউ জানে না ।

আরও পড়ুন:

  1. গতবারের চেয়ে ভোট কমল তিন কেন্দ্রেই, প্রথম দফার তথ্য সামনে আনল কমিশন
  2. তহবিল খরচ করলেও কল্যাণ-ভূমে কাঁটা স্বাস্থ্য-পরিযায়ী শ্রমিক
  3. অনুব্রতহীন বীরভূমে ভোটে জিততে রিপোর্ট কার্ডই ভরসা শতাব্দীর

নড়বড়ে বাঁশের সেতুই ভরসা দামোদরে

আসানসোল, 25 এপ্রিল: কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে দামোদর । ওপারে ধূসর বিহারীনাথ পাহাড় । আর দামোদরের দুইপাড়কে জুড়েছে একটি বাঁশের সেতু । ঠিক যেন ছবির মতোই সুন্দর । কিন্তু দেখতে সুন্দর হলেও এই নড়বড়ে বাঁশের সেতু নিয়ে রয়েছে তিন জেলার মানুষের দুর্দশার গল্প । গত 50 বছর ধরে পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার প্রান্তিক এলাকার মানুষদের দাবি, দামোদরের উপরে এইস্থানে একটি পাকা সেতু নির্মিত হোক । প্রতিবারই ভোট এলে প্রতিশ্রুতি মেলে ঝুরঝুরি । কিন্তু ভোট পেরিয়ে যাওয়ার পর আর কিছুই হয় না । নড়বড়ে বাঁশ-কাঠের সেতু দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয় তিন জেলার মানুষকে ।

এপারে পশ্চিম বর্ধমান আর ওই পারে বাঁকুড়া । ওই পথ দিয়েই সহজে যাওয়া যায় পুরুলিয়া জেলাতেও । যোগাযোগের মাধ্যম নড়বড়ে একটি বাঁশের সেতু । না-হলে ঘুরপথে প্রায় 30 থেকে 40 কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে আসা যাওয়া করতে হয় । বাঁকুড়ার শালতোড়া বিধানসভার প্রায় 30টি গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দার ভরসা এই সেতু । প্রতিদিনই তাঁদের দিনমজুরি করতে, সবজি বিক্রি করতে, ইস্কোতে চাকরি করতে এই পারে পশ্চিম বর্ধমানে আসতে হয় । এই বাঁশের নড়বড়ে সেতুই তাঁদের যোগাযোগ ও উপার্জনের মাধ্যম ।

বর্ষাকালে সেতু ভেঙে যায় । তখন নৌকাতে চড়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দামোদর পেরোতে হয় । আবার সন্ধের আগেই ফিরতে হয় বাড়ি । একটু রাত হয়ে গেলে সেই যোগাযোগের মাধ্যমও আর থাকে না ।

শুধু তাই নয়, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার এই প্রান্তিক অঞ্চলগুলির থেকে বাঁকুড়া কিংবা পুরুলিয়া সরকারি জেলা হাসপাতাল অনেক দূর । সেই তুলনায় মাত্র 10 কিলোমিটারের মধ্যেই আসানসোল জেলা হাসপাতাল । ফলে সহজেই বাসিন্দারা পৌঁছতে পারেন আসানসোলে । কিন্তু অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এই বাঁশের সেতু । সকালে কোনওমতে চারচাকা গাড়ি পার করা গেলেও রাতবিরেতে আর কেউ ঝুঁকি নেন না । অতীতে এই বাঁশের সেতু থেকে গাড়ি পড়ে দামোদরে ভেসে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে ।

তিন জেলার বাসিন্দাদের দাবি একটি পাকা সেতু হোক । কারণ এই স্থানে সেতু হলে তিন জেলার মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থা আরও অনেক বেড়ে যাবে । উন্নতি হবে তিন জেলারই । এই দাবি নিয়ে আন্দোলন হয়েছে, ধরনা অবস্থান হয়েছে । আশ্বাস মিলেছে । কিন্তু অভিযোগ, কেউ করেনি কিছুই । না কেন্দ্র, না রাজ্য।

ভোটের মুখে সেই সেতুই আবার নতুন করে ইস্যু হয়ে উঠেছে । দুই পারের মানুষজনই দাবি করছেন ৷ ভোট এলে নেতারা এসে প্রতিশ্রুতি দেন, এবার সেতু হবে । কিন্তু ভোট পেরিয়ে গেলেই ভোকাট্টা ।

অতীতে রাজ্য সরকার একবার তোড়জোড় করেছিল সেতু তৈরি করার । কিন্তু অজ্ঞাতকরণে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে । পশ্চিম বর্ধমানের যে এলাকায় বাঁশের সেতুটি শুরু, সেটি আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা । তার বিধায়ক বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল । ওপারে শালতোড়ার বিধায়কও বিজেপির, চন্দনা বাউরি । দুই বিধায়কই একসঙ্গে এই সেতুতে এসে দাবি করেছিলেন, পাকা সেতু তৈরি হোক। কিন্তু কেন্দ্রের ডবল ইঞ্জিন সরকার চলা সত্ত্বেও কেন তারা কেন্দ্রের কাছে তদ্বির করলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে । এই একই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসও ৷

অগ্নিমিত্রা পাল অবশ্য জানিয়েছিলেন, "রাজ্য যদি তাঁদের জানায় তারা এই সেতু করতে অপারগ, তাহলে কেন্দ্র এই সেতু বানিয়ে দেবে ।" বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার দাবি, জিতলে সব সমস্যার তদারক করে তার সমাধান করবেন ৷

কিন্তু এতদিন সবই কথার কথা হয়ে রয়ে গিয়েছে । সেতু বানাতে উদ্যোগী হননি কেউ । এর ফলে নিরন্ন, দুস্থ হাজার হাজার মানুষ এই নড়বড়ে বাঁশের সেতু দিয়েই পায়ে হেঁটে, সাইকেল নিয়ে, প্রতিদিন যাতায়াত করে । ভোটের মুখে তাঁরা স্বপ্ন দেখেন পাকা সেতু হবে । কিন্তু কবে হবে কেউ জানে না ।

আরও পড়ুন:

  1. গতবারের চেয়ে ভোট কমল তিন কেন্দ্রেই, প্রথম দফার তথ্য সামনে আনল কমিশন
  2. তহবিল খরচ করলেও কল্যাণ-ভূমে কাঁটা স্বাস্থ্য-পরিযায়ী শ্রমিক
  3. অনুব্রতহীন বীরভূমে ভোটে জিততে রিপোর্ট কার্ডই ভরসা শতাব্দীর
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.