ETV Bharat / sports

বিএসটিটিএ নির্বাচনে স্থগিতাদেশ জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের, প্রশ্নের মুখে খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 5, 2024, 5:15 PM IST

Stay Order on BSTTA Elections: টেবিল টেনিসে আইনি যুদ্ধের কারণে ক্ষতির মুখে বাংলার খেলোয়াড়রা ৷ জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের নির্দেশে বিএসটিটিএ-র 7 ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আপাতত হচ্ছে না ৷ মূলত, উত্তরবঙ্গ বনাম দক্ষিণবঙ্গ, দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব এখন আদালতের দোরগোড়ায় ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT

কলকাতা, 5 ফেব্রুয়ারি: আইনি লড়াইয়ের জেরে রাজ্যের টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার মেঘ জমতে শুরু করেছে ৷ হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের নির্দেশে আপাতত স্থগিত হয়ে গেল টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ৷ ফুটবল- ক্রিকেটের পর টেবিল টেনিসের মতো খেলা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে টেবিল টেনিসে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক স্তরে যত সাফল্য এসেছে, তা বাংলায় আর কোনও খেলায় নেই ৷ অথচ এবার সেই টেবিল টেনিসের নিয়ামক সংস্থাকে ঘিরেই জটিলতা তৈরি হল ৷

প্রশাসনিক পদের নির্বাচন ঘিরে লড়াইয়ে আদতে খেলাটাই ব্যাকফুটে চলে যাওয়ার উপক্রম ৷ ফলে খেলোয়াড়দের পরিস্থিতিও ভালো নয় ৷ টেবিল টেনিসের রাজ্য সংস্থা বিএসটিটিএ চার বছর আগে যাত্রা শুরু করে এখন অশান্তির ঠিকানায় পরিণত হয়েছে ৷ চ্যাপ্টার ওয়ান বনাম চ্যাপ্টার টু এর প্রশাসনিক ক্ষমতার লক্ষণরেখা স্থির করা নিয়ে তৈরি বিবাদ পুরোটাই চলে গিয়েছে আদালতে ৷ ফলে 7 ফেব্রুয়ারি বিএসটিটিএ-র নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, তা আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে সার্কিট বেঞ্চ ৷

এক রাজ্য, এক সংস্থা নীতি নিয়ে বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস সংস্থার পথ চলা শুরু ৷ আগের দু’টি সংস্থাকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে খেলোয়াড়দের সার্বিক উন্নতির কথা মাথায় রেখেই এই পথচলা শুরু হয় ৷ শুরুতে একআত্মা একপ্রাণ মনোভাব থাকলেও, সময় যত গড়িয়েছে ততই পুরানো ক্ষতের কারণে ব্যবধান বেড়েছে ৷ চ্যাপ্টার ওয়ান এবং চ্যাপ্টার টু এই ভাগের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া তলানিতে ঠেকেছে ৷ অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতা এবং দায়িত্বের মধ্যে যে সূক্ষ্ম সীমারেখা রয়েছে তা উভয়পক্ষই ভুলে গিয়েছে ৷ উলটে শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা ৷

যার 'এপিসেন্টার' চ্যাপ্টার টু বা উত্তরবঙ্গ ৷ অভিযোগ উঠেছে, বঞ্চনার শিকার হচ্ছে উত্তরবঙ্গ ৷ বিএসটিটিএ-র কোষাধ্যক্ষ সুব্রত রায়ের অভিযোগ, "মায়াঙ্ক জালান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করার পর, স্থলাভিষিক্ত হন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তারপর থেকেই সমস্যার শুরু ৷ সংবিধান অনুযায়ী যে কোনও সিদ্ধান্তে যুগ্মসচিবের স্বাক্ষর জরুরি ৷ কিন্তু, দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নিজেই স্বাক্ষর করে চিঠি দিচ্ছেন ৷ নির্বাচনের ব্যাপারে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তাতেও যুগ্মসচিবের স্বাক্ষর নেই ৷ এই ঘটনা প্রথম নয় ৷ যুগ্মসচিবদের অন্যতম মান্তু ঘোষের স্বাক্ষর প্রয়োজন থাকলেও, তা করানো হচ্ছে না ৷ প্রেসিডেন্ট নিজেই স্বাক্ষর করছেন ৷ বা আরেক যুগ্ম সচিব শর্মি সেনগুপ্তকে দিয়ে স্বাক্ষর করানো হচ্ছে ৷ মান্তুকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷"

এই অভিযোগের পালটা জবাবও দিয়েছেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলছেন, "খেলোয়াড় হিসেবে মান্তুকে সম্মান করি ৷ কিন্তু, সেই সম্মান তিনি বজায় রাখতে না পারলে আমার কিছু করা নেই ৷ সংস্থার সংযুক্তির সময় মান্তু আমাদের সঙ্গে ছিলেন ৷ তারপর এখন আদালতে মামলা করছেন ৷ আমি মনে করি এটা করার অধিকার মান্তুর নেই ৷"

মান্তুকে নিয়ে অসহযোগিতার অভিযোগ চ্যাপ্টার ওয়ানেরও রয়েছে ৷ সম্প্রতি শেষ হওয়া জুনিয়র ও ইয়ুথ ন্যাশানাল প্রতিযোগিতা 9 দিন ধরে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে চলেছে ৷ কিন্তু, মান্তু ঘোষ সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন ৷ তার আগে একাধিক মিটিংয়ে ডাকা হলেও আসেননি তিনি ৷ কেন এই এড়িয়ে চলা, তার স্পষ্ট ছবি চ্যাপ্টার ওয়ানের পদাধিকারীদের কাছেও নেই বলা হচ্ছে ৷ কার্যকরী কমিটিতে প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে তিরিশ শতাংশ প্রতিনিধি উত্তরবঙ্গের ৷ সংখ্যায় পিছিয়ে পড়ায় দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ যা চ্যাপ্টার ওয়ানের কর্তারা মানতে রাজি নয় ৷ তারা সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে ৷ তা সত্ত্বেও অসহযোগিতা করা হচ্ছে বলে পালটা অভিযোগ উঠেছে ৷

উল্লেখ্য, জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে যে মামলা চলছে, তা মান্তু ঘোষ করেননি ৷ গ্রেটার শিলিগুড়ি টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রথম মামলাটি করা হয়েছিল ৷ সেটি মূলত দ্য রেজিস্টার অব ফার্স সোসাটিজ অ্যান্ড নন ট্রেডিং কর্পোরেশনের চিঠিকে চ্যালেঞ্জ করে হয় ৷ যার পরিপেক্ষিতে আদালত রায় দেয় রেজিস্ট্রারকে মামলাকারীর বক্তব্য শুনতে হবে ৷ তারপর আদালত এবং গ্রেটার শিলিগুড়িকে রেজিস্ট্রার তাঁর বক্তব্য জানাবেন ৷

সোসাইটি রেজিস্ট্রার শুনানির পরে জানান, একজন সচিব নিয়োগ করতে হবে ৷ যাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিট পিটিশন দায়ের করে গ্রেটার শিলিগুড়ি টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন ৷ এই মামলায় বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনকে যুক্ত করা হয়নি ৷ সুব্রত রায় বলছেন, “এই মামলায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে যুক্ত হয়েছেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ ৷ আর রাজ্য সংস্থার অর্থ, যা খেলোয়াড়দের স্বার্থে ব্যবহার হওয়া উচিত, তা আইনি লড়াইয়ে নষ্ট করা হচ্ছে ৷”

আরও একটি মামলা করা হয়েছে, 7 ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে ৷ যেখানে সই রয়েছে বিএসটিটিএ সভাপতি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ যার প্রেক্ষিতে সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ একই সঙ্গে রায় দিয়েছেন, দ্য রেজিস্ট্রার অব ফার্মসকে 12 ফেব্রুয়ারির মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, "আইন অনুযায়ী কেন যুগ্মসচিব রাখা যাবে না ? যেখানে একজন সচিব রাখার নিয়ম সংবিধানে নথিভুক্ত করা হয়নি, তাহলে কেন এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে ?" রায়ে বলা হয়েছে নির্বাচন ডাকবেম যুগ্মসচিব ৷ একথা শুনে সংস্থার প্রেসিডেন্ট স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে আদালতের কথা শুনব ৷ তা মেনে চলব ৷ অন্য কারও কথা নয় ৷” আইনি লড়াইয়ের এই জাতাকলে শর্মি সেনগুপ্ত চিন্তিত খেলোয়াড়দের নিয়ে ৷ তাদের স্বার্থ সুরক্ষা নিয়ে ৷

তিনি বলছেন, "এটা কোনও চূড়ান্ত রায় নয় ৷ কোনও নতুন বিচারক এসে প্রথম দিনই কোনও রায় দিতে পারেন না ৷ তিনি রি-চ্যালেঞ্জ করছেন সোসাইটি রেজিস্ট্রারকে ৷ 1961 সালের সোসাইটি রেজিস্ট্রারের এটা আইন, যে কোনও সংস্থায় একজন সচিব থাকতে হবে ৷ আমাদের সংবিধানে বলা রয়েছে, যুগ্ম সচিবরা যদি না দিতে পারেন, তহলে প্রেসিডেন্ট নিজে নির্বাচনের নোটিশ দিতে পারেন ৷ যদি, পরিস্থিতি স্থবির হয়ে পড়ে তাহলে, প্রেসিডেন্ট বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেন ৷ টিটিএফআই-এর সংবিধানেও একজন সচিবের কথা বলা রয়েছে ৷ এটা যদি কমলেশ মেহতা আগে জানিয়ে দিতেন, তাহলে এই সমস্যা তৈরি হত না ৷ টিটিএফআই সচিব এতদিন পরে জানাচ্ছেন ৷ আদালত যখন সোসাইটি রেজাস্ট্রারকে দেখে নিতে বলেছেস সেখানে আমাদের কিছু করার নেই ৷ আমরা আদালতের নির্দেশ মেনেই চলব ৷ এই রিট পিটিশন উত্তরবঙ্গ থেকে করা হয়েছে ৷"

এর ফলে বিএসটিটিএ-র নির্বাচন একমাস বা আরও বেশি সময়ের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শর্মি সেনগুপ্ত ৷ ফলত কোনও টুর্নামেন্ট শুরু করা যাবে না ৷ তিনি জানান মে মাসের আগে টুর্নামেন্ট শুরু করতেই হবে ৷ তাঁর বক্তব্য, আইনি লড়াইয়ে খেলোয়াড়দের ক্ষতি হচ্ছে, সেটা ভুলে গেলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে ৷

আরও পড়ুন:

  1. শহরে এসে জাতীয় টেবিল টেনিস অ্যাকাডেমির পরিকল্পনার কথা জানালেন কমলেশ মেহতা
  2. প্যারা অলিম্পিক কমিটির সাসপেনশনের জের, অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশে প্যারা শুটিং বিশ্বকাপ
  3. স্পোর্টস কোড মেনেই 7 ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে: শর্মি সেনগুপ্ত

কলকাতা, 5 ফেব্রুয়ারি: আইনি লড়াইয়ের জেরে রাজ্যের টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার মেঘ জমতে শুরু করেছে ৷ হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের নির্দেশে আপাতত স্থগিত হয়ে গেল টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ৷ ফুটবল- ক্রিকেটের পর টেবিল টেনিসের মতো খেলা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে টেবিল টেনিসে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক স্তরে যত সাফল্য এসেছে, তা বাংলায় আর কোনও খেলায় নেই ৷ অথচ এবার সেই টেবিল টেনিসের নিয়ামক সংস্থাকে ঘিরেই জটিলতা তৈরি হল ৷

প্রশাসনিক পদের নির্বাচন ঘিরে লড়াইয়ে আদতে খেলাটাই ব্যাকফুটে চলে যাওয়ার উপক্রম ৷ ফলে খেলোয়াড়দের পরিস্থিতিও ভালো নয় ৷ টেবিল টেনিসের রাজ্য সংস্থা বিএসটিটিএ চার বছর আগে যাত্রা শুরু করে এখন অশান্তির ঠিকানায় পরিণত হয়েছে ৷ চ্যাপ্টার ওয়ান বনাম চ্যাপ্টার টু এর প্রশাসনিক ক্ষমতার লক্ষণরেখা স্থির করা নিয়ে তৈরি বিবাদ পুরোটাই চলে গিয়েছে আদালতে ৷ ফলে 7 ফেব্রুয়ারি বিএসটিটিএ-র নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও, তা আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে সার্কিট বেঞ্চ ৷

এক রাজ্য, এক সংস্থা নীতি নিয়ে বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস সংস্থার পথ চলা শুরু ৷ আগের দু’টি সংস্থাকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে খেলোয়াড়দের সার্বিক উন্নতির কথা মাথায় রেখেই এই পথচলা শুরু হয় ৷ শুরুতে একআত্মা একপ্রাণ মনোভাব থাকলেও, সময় যত গড়িয়েছে ততই পুরানো ক্ষতের কারণে ব্যবধান বেড়েছে ৷ চ্যাপ্টার ওয়ান এবং চ্যাপ্টার টু এই ভাগের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া তলানিতে ঠেকেছে ৷ অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতা এবং দায়িত্বের মধ্যে যে সূক্ষ্ম সীমারেখা রয়েছে তা উভয়পক্ষই ভুলে গিয়েছে ৷ উলটে শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা ৷

যার 'এপিসেন্টার' চ্যাপ্টার টু বা উত্তরবঙ্গ ৷ অভিযোগ উঠেছে, বঞ্চনার শিকার হচ্ছে উত্তরবঙ্গ ৷ বিএসটিটিএ-র কোষাধ্যক্ষ সুব্রত রায়ের অভিযোগ, "মায়াঙ্ক জালান প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করার পর, স্থলাভিষিক্ত হন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তারপর থেকেই সমস্যার শুরু ৷ সংবিধান অনুযায়ী যে কোনও সিদ্ধান্তে যুগ্মসচিবের স্বাক্ষর জরুরি ৷ কিন্তু, দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নিজেই স্বাক্ষর করে চিঠি দিচ্ছেন ৷ নির্বাচনের ব্যাপারে যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তাতেও যুগ্মসচিবের স্বাক্ষর নেই ৷ এই ঘটনা প্রথম নয় ৷ যুগ্মসচিবদের অন্যতম মান্তু ঘোষের স্বাক্ষর প্রয়োজন থাকলেও, তা করানো হচ্ছে না ৷ প্রেসিডেন্ট নিজেই স্বাক্ষর করছেন ৷ বা আরেক যুগ্ম সচিব শর্মি সেনগুপ্তকে দিয়ে স্বাক্ষর করানো হচ্ছে ৷ মান্তুকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷"

এই অভিযোগের পালটা জবাবও দিয়েছেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলছেন, "খেলোয়াড় হিসেবে মান্তুকে সম্মান করি ৷ কিন্তু, সেই সম্মান তিনি বজায় রাখতে না পারলে আমার কিছু করা নেই ৷ সংস্থার সংযুক্তির সময় মান্তু আমাদের সঙ্গে ছিলেন ৷ তারপর এখন আদালতে মামলা করছেন ৷ আমি মনে করি এটা করার অধিকার মান্তুর নেই ৷"

মান্তুকে নিয়ে অসহযোগিতার অভিযোগ চ্যাপ্টার ওয়ানেরও রয়েছে ৷ সম্প্রতি শেষ হওয়া জুনিয়র ও ইয়ুথ ন্যাশানাল প্রতিযোগিতা 9 দিন ধরে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে চলেছে ৷ কিন্তু, মান্তু ঘোষ সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন ৷ তার আগে একাধিক মিটিংয়ে ডাকা হলেও আসেননি তিনি ৷ কেন এই এড়িয়ে চলা, তার স্পষ্ট ছবি চ্যাপ্টার ওয়ানের পদাধিকারীদের কাছেও নেই বলা হচ্ছে ৷ কার্যকরী কমিটিতে প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে তিরিশ শতাংশ প্রতিনিধি উত্তরবঙ্গের ৷ সংখ্যায় পিছিয়ে পড়ায় দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ যা চ্যাপ্টার ওয়ানের কর্তারা মানতে রাজি নয় ৷ তারা সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে ৷ তা সত্ত্বেও অসহযোগিতা করা হচ্ছে বলে পালটা অভিযোগ উঠেছে ৷

উল্লেখ্য, জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে যে মামলা চলছে, তা মান্তু ঘোষ করেননি ৷ গ্রেটার শিলিগুড়ি টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রথম মামলাটি করা হয়েছিল ৷ সেটি মূলত দ্য রেজিস্টার অব ফার্স সোসাটিজ অ্যান্ড নন ট্রেডিং কর্পোরেশনের চিঠিকে চ্যালেঞ্জ করে হয় ৷ যার পরিপেক্ষিতে আদালত রায় দেয় রেজিস্ট্রারকে মামলাকারীর বক্তব্য শুনতে হবে ৷ তারপর আদালত এবং গ্রেটার শিলিগুড়িকে রেজিস্ট্রার তাঁর বক্তব্য জানাবেন ৷

সোসাইটি রেজিস্ট্রার শুনানির পরে জানান, একজন সচিব নিয়োগ করতে হবে ৷ যাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিট পিটিশন দায়ের করে গ্রেটার শিলিগুড়ি টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন ৷ এই মামলায় বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনকে যুক্ত করা হয়নি ৷ সুব্রত রায় বলছেন, “এই মামলায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে যুক্ত হয়েছেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষ ৷ আর রাজ্য সংস্থার অর্থ, যা খেলোয়াড়দের স্বার্থে ব্যবহার হওয়া উচিত, তা আইনি লড়াইয়ে নষ্ট করা হচ্ছে ৷”

আরও একটি মামলা করা হয়েছে, 7 ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি ঘিরে ৷ যেখানে সই রয়েছে বিএসটিটিএ সভাপতি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৷ যার প্রেক্ষিতে সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্বাচন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ একই সঙ্গে রায় দিয়েছেন, দ্য রেজিস্ট্রার অব ফার্মসকে 12 ফেব্রুয়ারির মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, "আইন অনুযায়ী কেন যুগ্মসচিব রাখা যাবে না ? যেখানে একজন সচিব রাখার নিয়ম সংবিধানে নথিভুক্ত করা হয়নি, তাহলে কেন এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে ?" রায়ে বলা হয়েছে নির্বাচন ডাকবেম যুগ্মসচিব ৷ একথা শুনে সংস্থার প্রেসিডেন্ট স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে আদালতের কথা শুনব ৷ তা মেনে চলব ৷ অন্য কারও কথা নয় ৷” আইনি লড়াইয়ের এই জাতাকলে শর্মি সেনগুপ্ত চিন্তিত খেলোয়াড়দের নিয়ে ৷ তাদের স্বার্থ সুরক্ষা নিয়ে ৷

তিনি বলছেন, "এটা কোনও চূড়ান্ত রায় নয় ৷ কোনও নতুন বিচারক এসে প্রথম দিনই কোনও রায় দিতে পারেন না ৷ তিনি রি-চ্যালেঞ্জ করছেন সোসাইটি রেজিস্ট্রারকে ৷ 1961 সালের সোসাইটি রেজিস্ট্রারের এটা আইন, যে কোনও সংস্থায় একজন সচিব থাকতে হবে ৷ আমাদের সংবিধানে বলা রয়েছে, যুগ্ম সচিবরা যদি না দিতে পারেন, তহলে প্রেসিডেন্ট নিজে নির্বাচনের নোটিশ দিতে পারেন ৷ যদি, পরিস্থিতি স্থবির হয়ে পড়ে তাহলে, প্রেসিডেন্ট বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেন ৷ টিটিএফআই-এর সংবিধানেও একজন সচিবের কথা বলা রয়েছে ৷ এটা যদি কমলেশ মেহতা আগে জানিয়ে দিতেন, তাহলে এই সমস্যা তৈরি হত না ৷ টিটিএফআই সচিব এতদিন পরে জানাচ্ছেন ৷ আদালত যখন সোসাইটি রেজাস্ট্রারকে দেখে নিতে বলেছেস সেখানে আমাদের কিছু করার নেই ৷ আমরা আদালতের নির্দেশ মেনেই চলব ৷ এই রিট পিটিশন উত্তরবঙ্গ থেকে করা হয়েছে ৷"

এর ফলে বিএসটিটিএ-র নির্বাচন একমাস বা আরও বেশি সময়ের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শর্মি সেনগুপ্ত ৷ ফলত কোনও টুর্নামেন্ট শুরু করা যাবে না ৷ তিনি জানান মে মাসের আগে টুর্নামেন্ট শুরু করতেই হবে ৷ তাঁর বক্তব্য, আইনি লড়াইয়ে খেলোয়াড়দের ক্ষতি হচ্ছে, সেটা ভুলে গেলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে ৷

আরও পড়ুন:

  1. শহরে এসে জাতীয় টেবিল টেনিস অ্যাকাডেমির পরিকল্পনার কথা জানালেন কমলেশ মেহতা
  2. প্যারা অলিম্পিক কমিটির সাসপেনশনের জের, অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশে প্যারা শুটিং বিশ্বকাপ
  3. স্পোর্টস কোড মেনেই 7 ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে: শর্মি সেনগুপ্ত
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.