কলকাতা, 9 মার্চ: এ যেন পরাজয়ের গ্লানিতে আচ্ছন্ন এক স্প্যানিশ ফুটবল 'অধ্যাপকে'র ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। রবিবার যুবভারতীতে আইএসএলের ফিরতি ডার্বিতে মুখোমুখি ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট। ফুটবলের কালের স্রোতে সময় বদলেছে। ময়দানের এই দুই শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের ফুটবল পরিচালনেও পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এই দুই ক্লাবের দ্বৈরথের মেজাজ অটুট রয়েছে আজও। তাই আইএসএলের পয়েন্ট টেবিলে দুই দলের অবস্থানকে পিছনে ফেলেছে রবিবাসরীয় সন্ধ্যার এই হাইভোল্টেজ ফুটবল যুদ্ধ, সব যুদ্ধের সেরা ফুটবল যুদ্ধ।
যার স্কোর বোর্ডের প্রভাব গভীর এবং চিরকালীন। সউল ক্রেসপোকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন লাল হলুদ 'অধ্যাপক' কার্লেস কুয়াদ্রাত। মরসুমের শুরুতে ইস্টবেঙ্গল জনতাকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখানো মানুষটি ডার্বির ব্যর্থতায় রাশ টেনেছেন। একদশক পরে সর্বভারতীয় ট্রফি জয়ের স্বাদ দিয়েছেন। তবে আইএসএলের দ্বিতীয় পর্বে ইস্টবেঙ্গল অনেকটাই ম্রিয়মাণ। মশালকে কিছুদিন আগেও মনে হচ্ছিল প্রতিপক্ষকে ছাড়খার করে দেবে তবে বর্তমানে হার-ড্রয়ের ধাক্কায় টিমটিমে প্রদীপ। এই ইস্টবেঙ্গলই প্রথম ছয়ে প্রবেশের স্বপ্নে মশগুল ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণের সামনে রয়েছে অনেক যদি এবংকিন্তু।
তবে ইস্টবেঙ্গল ধাপে ধাপে অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টায় আছে। সেই কাজে তাদের প্রথম শক্ত ধাপ রবিবারের বড় ম্যাচ। প্রতিপক্ষ মোহনবাগান সুপারজায়ান্টের বিরুদ্ধে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে কার্লেস কুয়াদ্রাত বলেন, "শেষ দুটো ম্যাচে আমাদের ফল ভালো হয়নি। আমার ফুটবলাররা প্রত্যেকেই ডার্বির জন্য মোটিভেটেড। যদি এই মরসুমের ফলাফলের দিকে নজর রাখেন তাহলে দেখবেন ডার্বিতে যথেষ্ট ভালো ফল করেছি। আমরা জানি ডার্বি একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ওরা লিগের জন্য লড়াই করছে। আমরা সুপার সিক্সের জন্য লড়ছি।" হাতে আর চারটে ম্যাচ। অর্থাৎ শেষ বারো পয়েন্ট পাওয়ার লক্ষ্য। সাফল্যই ইস্টবেঙ্গলের হাতে সুপার সিক্সের টিকিট নিয়ে আসতে পারে।
সেই টিকিট জোগাড়ে ফুটবলাররা সেরাটা নিংড়ে দেবেন বলে বিশ্বাস করেন কুয়াদ্রাত। প্রতিপক্ষ মোহনবাগান ছন্দে রয়েছে। সে কথা মেনে নিয়ে আন্তেনিও লোপেজ হাবাসের ছেলেদেরই ডার্বিতে ফেভারিট মানছেন কুয়াদ্রাত। তবে মরিয়া লড়াই ছুড়ে দিয়ে প্রতিপক্ষের সাফল্যের গলায় রাশ পড়াতে চাইছে ইস্টবেঙ্গল। চোট সারিয়ে ফিট সাওল ক্রেসপো ফিরছেন। প্রথম পর্বের ডার্বিতে চোট পাওয়ার পরে ফিরতি ডার্বিতে প্রত্যাবর্তন হচ্ছে স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের।
কোচের কথায় "আমি মনে করি বড় ম্যাচে মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট এই মুহূর্তে ফেভারিট। আমার ফুটবলাররাও তাঁদের সেরাটা দিতে তৈরি। এখনও পর্যন্ত দুটো বড় ম্যাচে জয় পেয়েছি। একটিতে অল্পের জন্য পরাজিত হয়েছি। আগামিকাল দেখা যাক কী করা যায়।" প্রায় একই সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, "দল হিসেবে মোহনবাগান দারুণ ৷ আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। না হলে ওরা আমাদের শেষ করে দেবে। ওরা এতটাই শক্তিশালী যে হুগো বুমোসের মত ফুটবলারকে বসিয়ে রাখার বিলাসিতা দেখাতে পারে। আমি যখন প্রথম কলকাতা এসেছিলাম তখন সাধারন মানুষ দেখা হলেই ডার্বিতে জেতার কথা বলত। আমরা বড়ম্যাচ জেতার জন্য নিজেদের নিংড়ে দেব।"
সাউল ক্রেসপো সুস্থ হওয়ায় 6 বিদেশিকে পাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। শেষ দুটো ম্যাচের ব্যর্থতাকে অতীত মনে করছে লাল হলুদ 'থিঙ্ক ট্যাঙ্ক'। কুয়াদ্রাতের কথায়, আইএসএলে বিদেশিরাই ফারাক গড়ে দেয়। গত সপ্তাহে বেশ কিছু ম্যাচে অঘটন ঘটেছে। সাউল ক্রেসপো এবং পার্দোকে চোট পেতে হয়েছে। নবাগতদের প্রথম মিনিট থেকে খেলাতে হয়েছে। তাঁরাও দলকে সাহায্য করতে প্রচুর পরিশ্রম করছেন বলে জানিয়েছেন কুয়াদ্রাত। তাঁর কথায় "বিদেশিদের হাতেই দলের সাফল্য নির্ভর করে। প্লে অফে জায়গা করতে হলে আমাদের নির্দিষ্ট পয়েন্ট পেতে হবে" বলেছেন লাল হলুদ অধ্যাপক।
রাজারহাট নিউটাউনে ফেভারেশনের সেন্টার ফর এক্সিলেন্সের মাঠে ডার্বির অনুশীলন সারল ইস্টবেঙ্গল। মাঠের ধারে দুটো কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া গাছে লাল-হলুদ ফুলের ছড়াছড়ি। দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে আগুন লেগেছে। কুয়াদ্রাতের ছেলেদের গায়ে লাল হলুদ জার্সি। কোচ বলছেন, "তাঁর দল হার না মানা মানসিকতা মাঠে দেখাতে তৈরি। পরাজয়ের গ্লানিতে হতোদ্যম হয়ে পড়া স্প্যানিশ ফুটবল অধ্যাপক এবং তার দল কি ফের মশাল জ্বালতে পারবেন? উত্তর জানতে অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার ৷
আরও পড়ুন
1. মোহনবাগানকে কটাক্ষ, ক্রীড়ামন্ত্রী আসরে নামতেই টিকিটের দাম কমাল ইস্টবেঙ্গল
2. বিতর্কের ঘূর্ণাবর্তে রবির বড় ম্যাচ, টিফোয় নিষেধাজ্ঞা লাল-হলুদের
3. সুপার সিক্স নিয়ে ভাবতে নারাজ কুয়াদ্রাত, নজরে শুধুই কলকাতা ডার্বি