ETV Bharat / politics

ভোটের আগেই লাগু সিএএ, বঙ্গে গেরুয়া ঝড় তুলতে পারবে বিজেপি ! - BJP CAA BENGAL Matua Vote

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 27, 2024, 1:14 PM IST

Updated : Mar 28, 2024, 1:56 PM IST

ETV Bharat
বঙ্গে বিজেপি ঝড় উঠবে কি না জানতে অপেক্ষা 4 জুন

Lok Sabha Election 2024: গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বাংলায় 18টি আসনে জয়ী হয়েছিল ৷ এবার সেই সংখ্যায় পৌঁছতে হলে বা তার চেয়ে বেশি আসন পেতে শুধু মোদি ক্যারিশমায় কাজ হবে না ৷ সম্প্রতি রাজ্য তথা দেশে লাগু হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ ৷ মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য এই আইন গুরুত্বপূর্ণ ৷ সিএএতে ভর করে বিজেপির বাংলা জয় সম্ভব ? লিখছেন দীপঙ্কর বসু ৷

কলকাতা, 27 মার্চ: লোকসভা ভোটে 42টি আসনেই পদ্ম ফুটুক। পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর আগে তাঁর বিশ্বস্ত সঙ্গী অমিত শাহের টার্গেট অবশ্য কিছুটা কমই ছিল, 35টি আসন। সে 42 হোক বা 35, এই লক্ষ্যপূরণে বিজেপি সব দিক দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। কোনও সুযোগ হাতছাড়া করবে না । এতদসত্ত্বেও বঙ্গে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির কথা উঠলে, তার সঙ্গে দিনের শেষে একটা বড় প্রশ্ন থেকেই যায়, বিজেপি কি টার্গেটে পৌঁছতে পারবে ? এর সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, প্রতিবার ভোট আসে এবং প্রতিবারই তার ভাবধারাটা বদলে যায় ৷ আর এটা অতি সাধারণ ব্যাপার ৷

বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে ৷ আমজনতা বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবে ভোট দেয়, লোকসভার ক্ষেত্রে কিন্তু সেই চিন্তা কাজ করে না ৷ এই বিষয়টা বিজেপি খুব ভালো করেই জানে ৷ দলীয় সূত্রের খবর, এই নির্বাচনে তাদের মোক্ষম অস্ত্র নরেন্দ্র মোদি-ফ্যাক্টরকেই তুরূপের তাস করছে না গেরুয়া শিবির ৷

2019 সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে 18টি আসনে জয়ী হয়েছিল ৷ এটাই এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যা ৷ এবার সেই সংখ্যায় পৌঁছতে বা তাকে ছাপিয়ে যেতে গেলে শুধু মোদি ক্যারিশমায় কাজ হবে না ৷ লাগবে আরও কিছু ৷ এখানেই বঙ্গ বিজেপির হাতিয়ার সন্দেশখালিতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি। আর একই সঙ্গে সমান গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ৷ এই সবকিছুর পাশাপাশি রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা একের পর এক দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ তো রয়েইছে ৷ দলের অন্দরেই নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে ফুটছে ৷ বাংলায় বিজেপির এগিয়ে যেতে আর কী চাই ? 4 জুন ভোটের ফল প্রকাশ হলে উদযাপন কেবল সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।

সিএএ কার্যকরের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বিজেপি বাংলার রাজনীতিতে একটা অন্য মাত্রা যোগ করেছে ৷ 2019 সালে রানাঘাট এবং বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র দু’টি জয়ের স্বাদ বিজেপিকে বুঝিয়ে দিয়েছিল, কী করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে ৷ ভোটের ফলাফলে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের ছাপ পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছিল সেবার । সেই সম্প্রদায়ের লক্ষ্য একটাই- নাগরিকত্ব, তারা মতুয়া সম্প্রদায় ৷

মতুয়ারা একেবারে হিন্দু ধর্মের ৷ তবে নমশূদ্র, দলিত ৷ বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় হরিচাঁদ ঠাকুর এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন ৷ দেশভাগের পর হরিচাঁদ ভারতে চলে আসেন ৷ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর 24 পরগনায় সংগঠন গড়ে তোলেন ৷ পিছিয়ে পড়া অস্পৃশ্যদের উন্নতির জন্য কাজ করতে থাকেন ৷ হরিচাঁদ ঠাকুরের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেদের মধ্যে গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়াদের দায়িত্ব নেন ৷ সংগঠনকে আরও মজবুত করার পাশাপাশি এই সম্প্রদায়কেও থিতু করেন তিনি ৷

উত্তর 24 পরগনার যে জায়গায় মতুয়াদের বাস, তার কাছেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্ত ৷ জলপথ এবং স্থলপথে ৷ এখানে অনুপ্রবেশের ঘটনা খুব সাধারণ একটা বিষয় ৷ দুই দেশের সীমান্ত লাগোয়া এই এলাকায় বসবাসকারী মানুষের ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, রীতিনীতি, আচার, ভূগোল দেখে আলাদা করে বোঝা শক্ত যে, কে ভারতের, কে-ই বা বাংলাদেশের নাগরিক ৷ আনুমানিক হিসাবে, ভারতে প্রায় 2 কোটি মতুয়ার বসবাস ৷ যদিও তাদের প্রধান সংগঠন মতুয়া মহাসংঘের হিসাবে তা 5 কোটি ৷ এ নিয়ে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক রয়েছে ৷ যাইহোক না কেন, মতুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক দলই পিছপা হয়নি ৷ এটাও এখন বেশ পরিষ্কার যে, কমপক্ষে তিনটি লোকসভা কেন্দ্র, আর দু’টি কেন্দ্রের আংশিকভাবে ভাগ্য নির্ধারণ করবে মতুয়ারা । বিধানসভার হিসাবে 35টিরও বেশি কেন্দ্র মতুয়া অধ্যুষিত ৷ এই কেন্দ্রগুলির বেশিরভাগ ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের আশপাশে অবস্থিত।

বিজেপি একবার সাফল্যের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে ৷ তাই মতুয়াদের ইস্যুগুলিকে আর অবহেলার করেনি ৷ 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের ওরাকান্দিতে গিয়েছিলেন ৷ প্যানডেমিকের পর সেটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর ছিল তাঁর ৷ পশ্চিমবঙ্গে তখন আট দফায় ভোট হচ্ছে ৷ 27 মার্চ প্রথম দফার ভোট ৷ সেদিন প্রধানমন্ত্রী ওরাকান্দিতে একটি মন্দির দর্শনে করেন ৷ এই মন্দিরটি মতুয়াদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ৷ আর ওরাকান্দি হল মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান ৷

বিজেপির বার্তাটা খুব পরিষ্কার ছিল ৷ এর ফলও মিলেছিল হাতেনাতে ৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বেশ কয়েকটি মতুয়া অধ্যুষিত কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল গেরুয়া শিবির ৷ ফের নির্বাচন ৷ এবার বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগু করেছে ৷ যা, বনগাঁ, কৃষ্ণনগর, বনগাঁ উত্তর, ব্যারাকপুর এবং রানাঘাটের মতো বিধানসভা কেন্দ্রগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৷ তবে বিজেপির পাশাপাশি শাসকদল তৃণমূলেরও নজরে মতুয়া ভোট ৷

তাই তৃণমূলের শীর্ষ থেকে একেবারে নিচু- সব ধরনের নেতা-কর্মীদের মতুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে দল ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর ভাইপো এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের একগুচ্ছ মন্ত্রী, জেলাসভাপতি- সবার লক্ষ্য মতুয়াদের মন জয় ৷ আর এই প্রচেষ্টা সুদে-আসলে ফেরত পেয়েছে ঘাসফুল ৷ একসময় বামেদের সঙ্গী মতুয়ারা ধীরে ধীরে তৃণমূলের কাছে মাথা নত করেছে ৷ মতুয়া মহাসংঘের প্রধান বীণাপানি দেবী 'বড় মা' বলেই বেশি পরিচিত ৷ তাঁর সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে ৷

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব দ্রুত মতুয়া মহাসংঘের বেশ কয়েকজনকে তৃণমূলের সদস্য করে নিয়েছেন ৷ বড় মায়ের পরিবারের সদস্যদেরও ৷ মহাসংঘের উত্তরাধিকারী মমতাবালা ঠাকুর ৷ তাঁর সঙ্গেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সখ্য তৈরি হয়েছে ৷ মমতাবালা ঠাকুরকে বিভিন্ন সময়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে ৷ তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর হওয়ার পরের বিপদটা কোথায়, তা কিন্তু স্পষ্ট বুঝতে পারছে তৃণমূল ৷

এই অবস্থায় তৃণমূল মতুয়ার দু'জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব- মুকুটমণি অধিকারী এবং বিশ্বজিৎ দাসকে দলে নিয়ে প্রার্থী করেছে ৷ তাঁদের মধ্যে মুকুটমণিকে রানাঘাট এবং বিশ্বজিতকে বনগাঁ থেকে লোকসভা প্রার্থীও করা হয়েছে ৷ মতুয়াদের উপর এই দু'জনের প্রভাব যথেষ্ট ৷ এদিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে ৷ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে ৷ এর সঙ্গে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন তাবড় নেতা এখন হাজতে ৷ এইসব নিয়ে লোকসভা ভোটের আগে জেলায় জেলায় তৃণমূল কিছুটা হলেও চাপের মুখে পড়েছে ৷

অন্যদিকে বিজেপি কিন্তু একটা বিষয় খুব ভালো করে বোঝে ৷ গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে 18টি আসনের দখল নিলেও সময়ে সময়ে তৃণমূলের ভোটের অঙ্কও বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ 2014 থেকে 2019 সালের মধ্যে সময়কালে তৃণমূলের ভোটের হার 39.8 থেকে বেড়ে 43.3 হয়েছে ৷ আর 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 48.02 শতাংশ ভোট ঝুলিতে ভরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গড়েছে ৷ গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূল ঝড় বয়ে গিয়েছে রাজ্যের উপর দিয়ে ৷

এবারের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলকে পরাজিত করতে এবং একই সঙ্গে গতবারের আসন সংখ্যা ছাপিয়ে যেতে মোদি-শাহ জুটিকে শুধু নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগু করলেই হবে না ৷ আরও বেশ কিছুটা পথ পেরোতে হবে ৷ সিএএ ঘিরে মেরুকরণ-পালটা মেরুকরণের অভিযোগ, প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ তো রয়েছেই ৷ পাশাপাশি রাজ্যস্তরে শক্তিশালী নেতার অভাবও বিজেপির কপালে গভীর ভাঁজ ফেলেছে ৷ এখন অপেক্ষা 4 জুনের ৷

আরও পড়ুন:

  1. মমতার পিতৃপরিচয়! নির্বাচন কমিশনে যাচ্ছে তৃণমূল, দিলীপকে শো-কজ বিজেপির
  2. রাস্তা-জল-আলো সবই আছে বারাসতে! কী বলছে কাকলি ঘোষ দস্তিদারের রিপোর্ট ?
  3. বিজেপি'র একাধিক গ্রুপ ছাড়লেন 'অভিমানী' রুদ্রনীল, দলও ছাড়ছেন? শুনল ইটিভি ভারত
Last Updated :Mar 28, 2024, 1:56 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.