ETV Bharat / politics

‘ছন্নছাড়া’ বিরোধীদের বিরুদ্ধে তৃণমূলের ‘উন্নয়নে’ ভর করে বারাসতে ফের জিততে আত্মবিশ্বাসী কাকলি - Lok Sabha Elections - LOK SABHA ELECTIONS

Kakoli Ghosh Dastidar: কাকলি ঘোষ দস্তিদার ৷ 2009 সালে উত্তর 24 পরগনার বারাসত লোকসভা আসন থেকে প্রথমবার সাংসদ হন ৷ 2014 ও 2019 সালে জিতে হ্যাটট্রিক করেছেন তৃণমূলের এই নেত্রী ৷ 2024-এও তিনি আবার প্রার্থী ৷ এবারের লড়াই কতটা কঠিন ? ইটিভি ভারতকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ৷

Kakoli Ghosh Dastidar Exclusive Interview
Kakoli Ghosh Dastidar Exclusive Interview
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 23, 2024, 2:53 PM IST

তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার

বারাসত, 23 মার্চ: পরপর তিনবারের সাংসদ তিনি । 2009 থেকে 2024, একটানা 15 বছর সাংসদ থাকায় তাঁর উপর আস্থাও বেড়েছে দলের । স্বভাবতই প্রার্থী পরিবর্তনের ঝুঁকি নিতে হয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে । চতুর্থবারের জন্য ফের তাঁকেই টিকিট দেওয়া হয়েছে বারাসত লোকসভা আসন থেকে । তিনি শাসক দলের মহিলা সংগঠনের সর্বভারতীয় সভানেত্রী তথা চিকিৎসক কাকলি ঘোষ দস্তিদার ।

বামেদের অপেক্ষা না করেই আইএসএফ আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে এই আসনে । তবে, বামেদের আরেক শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক অবশ্য প্রার্থী হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করেনি এখনও অবধি । চূড়ান্ত হয়নি ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীর নামও । ফলে, ভোট রাজনীতির লড়াইয়ে বারাসত আসনে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী, দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া রাজনীতিক কাকলি ঘোষ দস্তিদার ।

এবারের ভোট-যুদ্ধ নিয়ে কী ভাবছেন তিনি ? লড়াই কতটা কঠিন হবে ? নাকি বিরোধীদের সঠিক ‘প্লেয়ারের’ অভাবে এবারও তিনি ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে বেরিয়ে যাবেন ? তারই যাবতীয় প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর তিনি দিয়েছেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সামনে । একান্ত সাক্ষাৎকারে ঠিক কী বলেছেন তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার, রইল তারই প্রশ্নোত্তর পর্ব ।

প্রশ্ন: দিদি আপনি তিনবারের সাংসদ ! পরপর তিনবার সাংসদ হওয়ায় মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা কিন্তু বাড়ছে দিনদিন । এই নির্বাচনী লড়াইকে কিভাবে দেখছেন ? লড়াই কি কোথায়ও কঠিন হতে পারে ?

উত্তর: নির্বাচনী যুদ্ধকে সবসময় লড়াই হিসেবেই দেখতে হয় । এর কোনও হেরফের হয় না । 2009 সালে এই কেন্দ্রে আমি যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি, তখন আমাকে লড়াই করতে হয়েছে বামশক্তির বিরুদ্ধে । সেই লড়াইয়ে মানুষের সমর্থন পেয়ে জয়ী হই আমি । সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমেই সংসদীয় এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে জোর দিতে হয়েছে । কারণ, বাম আমলে না ছিল এখানে পাকা রাস্তা, পরিশ্রুত পানীয় জল । আর না ছিল নিকাশিনালা, পর্যাপ্ত আলো ।

কোনও উন্নয়নই হয়নি সেই সময় । সেগুলো সবই এখন পূরণ হয়েছে । বারাসত সংসদীয় এলাকার কোনও রাস্তাঘাট কাঁচা নেই । উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেম হয়েছে । এমনকি ঘরে ঘরে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে । মেডিক্যাল কলেজ হওয়ায় এখন আর কোনও মানুষকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যেতে হয় না । এখানে থেকেই তাঁরা যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন ।

ফলে, উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ ঘটেছে । 50 বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি । আমার বাবাও এই এলাকার উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করেছেন । তাই, আমাদের উপর ভরসা রয়েছে মানুষের । যখনই বহিরাগত শক্তির বিরুদ্ধে আমি লড়াই করতে নেমেছি, তখনই মানুষের আশীর্বাদ-দোয়া পেয়ে এসেছি ।

প্রশ্ন: 2009 এবং 2014-এর লোকসভা নির্বাচনে আপনার সঙ্গে মূলত লড়াই হত বামেদের । কিন্তু 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে পট পরিবর্তন হতে দেখা গেল । বামেরা তৃতীয় স্থানে চলে গেল ! মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এল বিজেপি । যদিও বিজেপি কিংবা বামেরা এখনও অবধি আপনার বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করেনি । এটাকে আপনি কিভাবে ব‍্যাখা করবেন ?

উত্তর: আগে থেকে কিভাবে বলছেন আপনি ওরা (বামেরা) তৃতীয় স্থানে চলে গেল । পুরো পশ্চিমবঙ্গে এখন তাঁদের সাত থেকে আট শতাংশ ভোট । তাই, তৃতীয় অথবা চতুর্থ এভাবে ব‍্যাখা করবেন না । ওদের বাংলার মানুষ পরিত্যাগ করেছে । ছন্নছাড়া দল । তাই, তাঁরা এখনও প্রার্থী দিতে পারেনি । তাঁদের বুথে সংগঠন নেই । আমি কি করতে পারি তার জন্য !

প্রশ্ন: বিরোধীদের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করতে না পারা অথবা তাঁদের এই ছন্নছাড়া অবস্থা । কোথাও কি আপনাকে লড়াইয়ের ময়দানে এগিয়ে রাখছে ?

উত্তর: আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ মানুষের জন্য করেছেন এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তাতে বাংলার মানুষ নিশ্চিতভাবেই তৃণমূলের পাশে রয়েছেন । আমি যেভাবে আমার সংসদীয় এলাকায় পড়ে থেকে মানুষের স্বার্থে কাজ করে এসেছি, তাতে আমি বিশ্বাস করি এবারও বিপুল সমর্থন পাব মানুষের ।

প্রশ্ন: তাহলে কি এবারও আপনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি নাকি অন্য কোনও শক্তি উঠে আসবে ?

উত্তর: আগে ওরা প্রার্থী ঘোষণা করুক । তারপর তো এলাকায় যেতে হবে । চিনতে হবে । প্রার্থীর সংগঠন কি অবস্থায় আছে সেটা দেখা যাক । সবকিছু তো আর উপরে উপরে হবে না । এটা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী লড়াই । কে আসবে । কী করবে । কিছুই তো জানি না আমরা ।

প্রশ্ন: গতবার আপনার জয়ের মার্জিন 1 লক্ষ 10 হাজার ছিল । ধারেভারে এখনও অবধি আপনি অনেকটাই এগিয়ে । ফলে, গতবারের জয়ের মার্জিন কি বাড়বে ? কী মনে করছেন ?

উত্তর: আমি নিশ্চিত এবারও বিপুল ভোটে জয়ী হব । মানুষের পাশে থেকে যে কাজ আমি করেছি । তাতে আশা করছি মানুষ আমার পাশেই থাকবেন । কে আমার বিরুদ্ধে লড়াই করবেন, সেটা তো জানি না । তবে, জয়ের মার্জিন বাড়বে ।

প্রশ্ন: সেটা কি 1 লক্ষ 10 হাজারের বেশি হবে ?

উত্তর: এভাবে আগে থেকে কিছু বলা যায় না । সবে তো নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । আমার সংসদীয় এলাকায় যত বুথ রয়েছে, সমস্ত বুথে ঘুরে কথা বলে ফিডব্যাক নেব । তার উপর নির্ভর করবে জয়ের মার্জিন বাড়ার বিষয়টি ।

প্রশ্ন: আপনি সাংসদ হিসেবে এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন । কোথাও কি মনে হয়, এই কাজটা এখনও করা বাকি রয়েছে । সেই কাজটা চতুর্থবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হলে গুরুত্ব দেবেন আপনি ?

উত্তর: রেলমন্ত্রী থাকাকালীন নোয়াপাড়া-বারাসত মেট্রো প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই প্রকল্পের কাজ মধ‍্যমগ্রামের মাইকেল নগর অবধি এগিয়ে গিয়েছে । সেটা বারাসত অবধি এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হবে মূল লক্ষ্য । এছাড়া, বারাসত সংসদীয় এলাকায় এখনও অবধি যে সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, তা সবটাই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি । আমার মনে হয় না কোনও কাজ এখানে বাকি রয়েছে । এবার যে উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোতে হবে, তা সবটাই মানুষের নিজস্ব দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে । তার মধ্যে অবশ্যই বারাসত পর্যন্ত মেট্রো প্রকল্পকে সম্প্রসারিত করা ।

প্রশ্ন: রাজ‍্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি হাবরার জনসভা থেকে আপনার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন । হুংকার দিয়ে ব‍্যক্তিগত আক্রমণও করেছেন আপনাকে । এটাকে কিভাবে দেখছেন ?

উত্তর: যাঁর যেরকম রুচি সে সেরকম বলছে । ওই দলটা নিম্নরুচির ভাষাতে বিশ্বাসী । এটা তো রাজনৈতিক যুদ্ধ । তাই সাংবিধানিক পরিকাঠামো মেনে গণতান্ত্রিক উপায়ে এই রাজনৈতিক লড়াই হওয়ার কথা । কিন্তু, সেটা না করে যে দলের যেরকম রুচি-নীতি, সে সেটাই করছে । মানুষ বিচার করবে । কোনটা ঠিক, আর কোনটা ভুল । মানুষের উপরই ছেড়ে দিন । এনিয়ে আর কোনও মন্তব্য করব না ।

প্রশ্ন: আপনার সংসদীয় সাতটি বিধানসভা এলাকার মধ্যে বারাসত, হাবরা ও অশোকনগরে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস রয়েছে । আপনারা বারবার বলছেন সিএএ লাগু হলে মানুষের নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে । সিএএ-র প্রভাব কি নির্বাচনে পড়বে ?

উত্তর: বিজেপির এই ধরনের কর্মকাণ্ডে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন ভীষণভাবে ক্ষিপ্ত । ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে ওদের বিরুদ্ধে গর্জেও উঠেছে মতুয়ারা । তাঁদের মনে এই প্রশ্নই জাগছে, বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে নাগরিকত্ব হারানো । তাই, মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবে না । বরং এনিয়ে উল্টো এফেক্ট পড়বে এবারের নির্বাচনে ।

KAKOLI GHOSH DASTIDAR
বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের কাকলি ঘোষ দস্তিদারের পোস্টার

সবমিলিয়ে, উন্নয়নে ভর করে এবারও নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে পারবেন বলে আত্মবিশ্বাসী বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের চিকিৎসক প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার ।

আরও পড়ুন:

  1. 'বারাসত থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে পালিশ করে দেব', নাম না-করে বিচারপতিকে নিশানা কাকলির
  2. অনুরাগ ঠাকুরের মন্তব্য স্মরণ করিয়ে পালটা কটাক্ষ কাকলির, বিঁধলেন অধীরকেও
  3. 'জ্যোতিপ্রিয়র দুর্নীতির দায় তাঁর নিজস্ব', দায় ঝাড়লেন কাকলি

তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার

বারাসত, 23 মার্চ: পরপর তিনবারের সাংসদ তিনি । 2009 থেকে 2024, একটানা 15 বছর সাংসদ থাকায় তাঁর উপর আস্থাও বেড়েছে দলের । স্বভাবতই প্রার্থী পরিবর্তনের ঝুঁকি নিতে হয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে । চতুর্থবারের জন্য ফের তাঁকেই টিকিট দেওয়া হয়েছে বারাসত লোকসভা আসন থেকে । তিনি শাসক দলের মহিলা সংগঠনের সর্বভারতীয় সভানেত্রী তথা চিকিৎসক কাকলি ঘোষ দস্তিদার ।

বামেদের অপেক্ষা না করেই আইএসএফ আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে এই আসনে । তবে, বামেদের আরেক শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক অবশ্য প্রার্থী হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করেনি এখনও অবধি । চূড়ান্ত হয়নি ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীর নামও । ফলে, ভোট রাজনীতির লড়াইয়ে বারাসত আসনে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী, দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া রাজনীতিক কাকলি ঘোষ দস্তিদার ।

এবারের ভোট-যুদ্ধ নিয়ে কী ভাবছেন তিনি ? লড়াই কতটা কঠিন হবে ? নাকি বিরোধীদের সঠিক ‘প্লেয়ারের’ অভাবে এবারও তিনি ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে বেরিয়ে যাবেন ? তারই যাবতীয় প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর তিনি দিয়েছেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধির সামনে । একান্ত সাক্ষাৎকারে ঠিক কী বলেছেন তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার, রইল তারই প্রশ্নোত্তর পর্ব ।

প্রশ্ন: দিদি আপনি তিনবারের সাংসদ ! পরপর তিনবার সাংসদ হওয়ায় মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা কিন্তু বাড়ছে দিনদিন । এই নির্বাচনী লড়াইকে কিভাবে দেখছেন ? লড়াই কি কোথায়ও কঠিন হতে পারে ?

উত্তর: নির্বাচনী যুদ্ধকে সবসময় লড়াই হিসেবেই দেখতে হয় । এর কোনও হেরফের হয় না । 2009 সালে এই কেন্দ্রে আমি যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি, তখন আমাকে লড়াই করতে হয়েছে বামশক্তির বিরুদ্ধে । সেই লড়াইয়ে মানুষের সমর্থন পেয়ে জয়ী হই আমি । সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমেই সংসদীয় এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নে জোর দিতে হয়েছে । কারণ, বাম আমলে না ছিল এখানে পাকা রাস্তা, পরিশ্রুত পানীয় জল । আর না ছিল নিকাশিনালা, পর্যাপ্ত আলো ।

কোনও উন্নয়নই হয়নি সেই সময় । সেগুলো সবই এখন পূরণ হয়েছে । বারাসত সংসদীয় এলাকার কোনও রাস্তাঘাট কাঁচা নেই । উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেম হয়েছে । এমনকি ঘরে ঘরে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে । মেডিক্যাল কলেজ হওয়ায় এখন আর কোনও মানুষকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যেতে হয় না । এখানে থেকেই তাঁরা যাবতীয় চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন ।

ফলে, উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ ঘটেছে । 50 বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি । আমার বাবাও এই এলাকার উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করেছেন । তাই, আমাদের উপর ভরসা রয়েছে মানুষের । যখনই বহিরাগত শক্তির বিরুদ্ধে আমি লড়াই করতে নেমেছি, তখনই মানুষের আশীর্বাদ-দোয়া পেয়ে এসেছি ।

প্রশ্ন: 2009 এবং 2014-এর লোকসভা নির্বাচনে আপনার সঙ্গে মূলত লড়াই হত বামেদের । কিন্তু 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে পট পরিবর্তন হতে দেখা গেল । বামেরা তৃতীয় স্থানে চলে গেল ! মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এল বিজেপি । যদিও বিজেপি কিংবা বামেরা এখনও অবধি আপনার বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করেনি । এটাকে আপনি কিভাবে ব‍্যাখা করবেন ?

উত্তর: আগে থেকে কিভাবে বলছেন আপনি ওরা (বামেরা) তৃতীয় স্থানে চলে গেল । পুরো পশ্চিমবঙ্গে এখন তাঁদের সাত থেকে আট শতাংশ ভোট । তাই, তৃতীয় অথবা চতুর্থ এভাবে ব‍্যাখা করবেন না । ওদের বাংলার মানুষ পরিত্যাগ করেছে । ছন্নছাড়া দল । তাই, তাঁরা এখনও প্রার্থী দিতে পারেনি । তাঁদের বুথে সংগঠন নেই । আমি কি করতে পারি তার জন্য !

প্রশ্ন: বিরোধীদের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করতে না পারা অথবা তাঁদের এই ছন্নছাড়া অবস্থা । কোথাও কি আপনাকে লড়াইয়ের ময়দানে এগিয়ে রাখছে ?

উত্তর: আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ মানুষের জন্য করেছেন এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তাতে বাংলার মানুষ নিশ্চিতভাবেই তৃণমূলের পাশে রয়েছেন । আমি যেভাবে আমার সংসদীয় এলাকায় পড়ে থেকে মানুষের স্বার্থে কাজ করে এসেছি, তাতে আমি বিশ্বাস করি এবারও বিপুল সমর্থন পাব মানুষের ।

প্রশ্ন: তাহলে কি এবারও আপনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি নাকি অন্য কোনও শক্তি উঠে আসবে ?

উত্তর: আগে ওরা প্রার্থী ঘোষণা করুক । তারপর তো এলাকায় যেতে হবে । চিনতে হবে । প্রার্থীর সংগঠন কি অবস্থায় আছে সেটা দেখা যাক । সবকিছু তো আর উপরে উপরে হবে না । এটা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী লড়াই । কে আসবে । কী করবে । কিছুই তো জানি না আমরা ।

প্রশ্ন: গতবার আপনার জয়ের মার্জিন 1 লক্ষ 10 হাজার ছিল । ধারেভারে এখনও অবধি আপনি অনেকটাই এগিয়ে । ফলে, গতবারের জয়ের মার্জিন কি বাড়বে ? কী মনে করছেন ?

উত্তর: আমি নিশ্চিত এবারও বিপুল ভোটে জয়ী হব । মানুষের পাশে থেকে যে কাজ আমি করেছি । তাতে আশা করছি মানুষ আমার পাশেই থাকবেন । কে আমার বিরুদ্ধে লড়াই করবেন, সেটা তো জানি না । তবে, জয়ের মার্জিন বাড়বে ।

প্রশ্ন: সেটা কি 1 লক্ষ 10 হাজারের বেশি হবে ?

উত্তর: এভাবে আগে থেকে কিছু বলা যায় না । সবে তো নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । আমার সংসদীয় এলাকায় যত বুথ রয়েছে, সমস্ত বুথে ঘুরে কথা বলে ফিডব্যাক নেব । তার উপর নির্ভর করবে জয়ের মার্জিন বাড়ার বিষয়টি ।

প্রশ্ন: আপনি সাংসদ হিসেবে এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন । কোথাও কি মনে হয়, এই কাজটা এখনও করা বাকি রয়েছে । সেই কাজটা চতুর্থবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হলে গুরুত্ব দেবেন আপনি ?

উত্তর: রেলমন্ত্রী থাকাকালীন নোয়াপাড়া-বারাসত মেট্রো প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই প্রকল্পের কাজ মধ‍্যমগ্রামের মাইকেল নগর অবধি এগিয়ে গিয়েছে । সেটা বারাসত অবধি এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হবে মূল লক্ষ্য । এছাড়া, বারাসত সংসদীয় এলাকায় এখনও অবধি যে সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, তা সবটাই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি । আমার মনে হয় না কোনও কাজ এখানে বাকি রয়েছে । এবার যে উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোতে হবে, তা সবটাই মানুষের নিজস্ব দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে । তার মধ্যে অবশ্যই বারাসত পর্যন্ত মেট্রো প্রকল্পকে সম্প্রসারিত করা ।

প্রশ্ন: রাজ‍্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি হাবরার জনসভা থেকে আপনার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন । হুংকার দিয়ে ব‍্যক্তিগত আক্রমণও করেছেন আপনাকে । এটাকে কিভাবে দেখছেন ?

উত্তর: যাঁর যেরকম রুচি সে সেরকম বলছে । ওই দলটা নিম্নরুচির ভাষাতে বিশ্বাসী । এটা তো রাজনৈতিক যুদ্ধ । তাই সাংবিধানিক পরিকাঠামো মেনে গণতান্ত্রিক উপায়ে এই রাজনৈতিক লড়াই হওয়ার কথা । কিন্তু, সেটা না করে যে দলের যেরকম রুচি-নীতি, সে সেটাই করছে । মানুষ বিচার করবে । কোনটা ঠিক, আর কোনটা ভুল । মানুষের উপরই ছেড়ে দিন । এনিয়ে আর কোনও মন্তব্য করব না ।

প্রশ্ন: আপনার সংসদীয় সাতটি বিধানসভা এলাকার মধ্যে বারাসত, হাবরা ও অশোকনগরে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস রয়েছে । আপনারা বারবার বলছেন সিএএ লাগু হলে মানুষের নাগরিকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে । সিএএ-র প্রভাব কি নির্বাচনে পড়বে ?

উত্তর: বিজেপির এই ধরনের কর্মকাণ্ডে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন ভীষণভাবে ক্ষিপ্ত । ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে ওদের বিরুদ্ধে গর্জেও উঠেছে মতুয়ারা । তাঁদের মনে এই প্রশ্নই জাগছে, বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানে নাগরিকত্ব হারানো । তাই, মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবে না । বরং এনিয়ে উল্টো এফেক্ট পড়বে এবারের নির্বাচনে ।

KAKOLI GHOSH DASTIDAR
বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের কাকলি ঘোষ দস্তিদারের পোস্টার

সবমিলিয়ে, উন্নয়নে ভর করে এবারও নির্বাচনের বৈতরণী পার হতে পারবেন বলে আত্মবিশ্বাসী বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের চিকিৎসক প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার ।

আরও পড়ুন:

  1. 'বারাসত থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে পালিশ করে দেব', নাম না-করে বিচারপতিকে নিশানা কাকলির
  2. অনুরাগ ঠাকুরের মন্তব্য স্মরণ করিয়ে পালটা কটাক্ষ কাকলির, বিঁধলেন অধীরকেও
  3. 'জ্যোতিপ্রিয়র দুর্নীতির দায় তাঁর নিজস্ব', দায় ঝাড়লেন কাকলি
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.